নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে পান চাষ। রোগবালাই তুলনামূলক কম এবং লাভ বেশি হওয়ায় এখন অনেকেই ঝুঁকেছেন পান চাষে। এতে কর্মসংস্থান হচ্ছে স্থানীয় যুবকদের। ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় খুশি পান চাষিরাও।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার চরকিং ইউনিয়নের দাশপাড়াসহ আশপাশের এলাকায় প্রচুর পানের বরজ গড়ে উঠেছে। এখানকার মাটি পান চাষের জন্য উপযোগী বলেই স্থানীয়দের মূল জীবিকা এখন পান চাষ। বেশিরভাগ হিন্দু সম্প্রদায়ের ক্ষুদ্র চাষিরা বংশ পরম্পরায় এ পেশা চালিয়ে আসছেন। পরিবার-পরিজনের প্রধান আয়ের উৎস এখানকার পানের বরজ। 

দাসপাড়া এলাকার পান চাষি নিরব চন্দ্র দাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রায় ৪০-৪৫ বছর ধরে আমরা পান চাষ করছি। এখানে আগের চেয়ে পান চাষির সংখ্যা বেড়েছে। পাশাপাশি জমির সংখ্যাও বেড়েছে। পান উৎপাদনে কোনো ক্ষতিকর সার ব্যবহার করা হয় না। আগে মাটির ঘর ছিল এখন টিনের ঘর হয়েছে। শুধুমাত্র পান চাষ করেই আমরা লাভবান হয়েছি। আমাদের দুই ভাইয়ের এখন ১৩০টি পানের বরজ আছে।

সুর্য কুমারের বাড়ির হরিপদ চন্দ্র দাস ১৫ বছর ধরে পান চাষ করছেন। দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন পান চাষ থেকে আসা লাভের টাকায়। পাশাপাশি ছেলেকে পড়াশোনা করাচ্ছেন তিনি।

হরিপদ চন্দ্র দাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, মাটি ভালো হলে পানও ভালো হয়। হাতিয়ার পান হলো মিষ্টি ও সরস। খাইতে মজা লাগে। বাইরের থেকে পান না আসলে আমরা ভালো দাম পেতাম। বিভিন্ন সময়ে জোয়ারে ক্ষতিগ্রস্ত হয় পানের বরজ। সরকার যদি আমাদের সহযোগিতা করে তাহলে আমরা পান চাষিরা আরও ভালো করব।

নয়ন চন্দ্র দাস নামের আরেক পান চাষি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগে এক ঘরে পান চাষি ছিল এখন সেই ঘরে চারজন পান চাষি আছে। যে বাড়িতে ৫ জন পান চাষি ছিল সেখানে এখন ১৫ জন হয়েছে। দিন দিন পান চাষির সংখ্যা বাড়ছে। সরকার যদি আমাদের পৃষ্ঠপোষকতা করতো তাহলে আমরা আরও লাভবান হতাম। 

পান চাষে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও সহযোগিতা করছেন। পান ধুয়ে, গুছিয়ে বাজারে বিক্রি করতে নারীরা সাহায্য করে থাকেন। রীতা রানী নামের এক নারী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি পান ভাঙি এবং গুছিয়ে দেই। স্বামী এই পান বাজারে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে। সেখান থেকে যা পায় তা দিয়েই আমাদের সংসার চলে। 

হাতিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুব মোর্শেদ লিটন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কৃষি বান্ধব সরকার। যেকোনো পরিস্থিতিতে কৃষিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সরকার পদক্ষেপ নিয়ে থাকেন এবং বাজেট প্রণয়ন করে থাকেন। উন্নত সার ও বীজের জন্য সরকার এ বছরও প্রায় ৪৬ হাজার কোটি টাকা ভুর্তকি দিয়েছেন। হাতিয়ার চরকিং এর নির্দিষ্ট কিছু জায়গার মাটি পান চাষের উপযোগী। অন্য কোথাও পান চাষ হয় না। আমি কথা দিচ্ছি, কৃষি বিভাগের মাধ্যমে খবর নিয়ে ও পান চাষিদের সঙ্গে কথা বলে যা যা করা প্রয়োজন তা উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে করা হবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নোয়াখালীর উপ-পরিচালক মো. শহীদুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, নোয়াখালী জেলায় পান চাষ হচ্ছে ১২৪ হেক্টর জমিতে। প্রায় ৫৫২ জন চাষি পান চাষের সঙ্গে জড়িত। এর মধ্যে সব থেকে বেশি হলো হাতিয়া উপজেলায়। পান চাষ অত্যন্ত অর্থকারী ফসল। দিন দিন এটি সম্প্রসারিত হচ্ছে। তবে হাতিয়ায় জোয়ারের সময় পান গাছ  ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমি চেষ্টা করছি তাদের ক্ষতি থেকে রক্ষা করার জন্য। এখানকার সবাই দিন দিন পান চাষে আগ্রহী হচ্ছে। আবাদ আরও বাড়বে বলে মনে করছি। শুধু দেশে নয় বিদেশেও পান রপ্তানি করে কৃষক লাভবান হচ্ছেন। কৃষি বিভাগ সব সময় পান চাষিদের পাশে আছে।

হাসিব আল আমিন/আরকে