পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলার বাসিন্দা সুমন হাওলাদার পেশায় একজন অটোরিকশা চালক। গত বছর ২৪ সেপ্টেম্বর পটুয়াখালীর প্রাইম ক্লিনিকে তার স্ত্রী এক সঙ্গে ৩ সন্তানের জন্ম দেন। আর তাদের জন্মের পর থেকেই শুরু হয়েছে সুমনের জীবনযুদ্ধ। তিনটি শিশুর জন্য পর্যাপ্ত হচ্ছে না মায়ের বুকের দুধ। তাই সন্তানদের ফর্মুলা মিল্ক (নবজাতকের বিকল্প দুধ) কেনার জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তিনি।

অভাবের সংসারে নিজেদের খাবার সংগ্রহ করতেই যেখানে হিমশিম খেতে হয় সেখানে তিন সন্তানের চিকিৎসা ও খাবার যোগাতে নিজের অটোরিকশাটিও বিক্রি করতে হয়েছে তাকে।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, শাহজাহান হাওলাদারের ছেলে সুমন হাওলাদার ১০ বছর আগে কৃষক সোহরাব ব্যাপারীর মেয়ে নুপুর বেগমকে পারিবারিকভাবে বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকেই অনেক কষ্ট করে অটোরিকশা চালিয়ে নিজেদের সংসার চালাচ্ছিলেন তিনি। নিজেদের কোনো কৃষি জমি না থাকায় অটোরিকশার আয়ের ওপর নির্ভর ছিল সুমন ও তার পরিবার। খাদিজা নামে তার ৪ বছরের একটি মেয়ে আছে। এরপর গত বছর তাদের একসঙ্গে তিনটি সন্তানের জন্ম হয়। 

নবজাতক তিন সন্তানের নাম আব্দুল্লাহ, রহিমা ও রহিম। জন্ম নেওয়া নবজাতকরা অসুস্থ থাকায় অটোরিকশা বিক্রি করে কয়েক দফা পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েছেন এই অসচ্ছল বাবা। বিভিন্ন এনজিও এবং আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে ধারও নিতে হয়েছে তাকে। তবে এখন কোথাও থেকে টাকা ধার না পেয়ে শিশু তিনটির জন্য প্রতিদিন ৬৮০ টাকার দামের দুধের কৌটা কিনতে পারছেন না সুমন। শিশুদের খাবার সংগ্রহের জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তিনি।

নবজাতকের দাদি নাজমা বেগম বলেন, আমরা নাতি-নাতনিদের নিয়ে বিপদে পড়েছি। আল্লাহ তায়ালা দিয়েছে তিনজন ছেলেমেয়ে এহন আমরা তো হালাইতে পারমু না।

প্রতিবেশী সবুজ আকন বলেন, সুমন আমাদের বাড়ির ছেলে। সে অনেক কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। আল্লাহ তায়ালা তার ঘরে ফুটফুটে তিনটি সন্তান দিয়েছে। আমরা সবাই খুব খুশি হয়েছি। কিন্তু সুমনের তো সন্তানদের খাওয়ানোর মতো টাকা নেই, একটি অটোরিকশা ছিল সেটাও বিক্রি করে দিয়েছে। সুমন এখন অনেক কষ্টে দিন যাপন করছে। বাচ্চাদের খাওয়ানোর মতো টাকা তার নেই।

সুমন হাওলাদারের স্ত্রী নুপুর বেগম বলেন, আমাদের তিনটি সন্তানের খাবার জোগাড় করতে অনেক কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অটোরিকশাটি ছিল সেটাও বিক্রি করে দিয়েছে। আমরা অনেক কষ্টে দিন যাপন করছি। তিনজনের দুধের কৌটা কেনার মতো টাকা আমাদের কাছে নেই।

সুমন হাওলাদার বলেন, আমার বর্তমানে এখন কোনো ইনকামের সোর্স নেই। গত ১৪ দিন পটুয়াখালী সদর হাসপাতালে ভর্তি ছিল বাচ্চারা। চিকিৎসা চালাতে গিয়ে আমার নিজের অটোরিকশাটি বিক্রি করে দিয়েছি। আত্মীয়-স্বজন যারা আছে তাদের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা নিলেও এখন বাচ্চাদের জন্য দুধ জোগাড় করতে পারি না। তিনজন বাচ্চার জন্য প্রতিদিন ৬৮০ টাকার দুধ কিনতে হয়। আমি খুব অসহায় হয়ে পড়েছি। বিভিন্ন অফিস-আদালতে গিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি, কারো কাছে সহযোগিতা পাচ্ছি না। আমাকে আর্থিক সহায়তা করুন।

৩নং মুরাদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান ফোরকান বলেন, সুমন আমার ওয়ার্ডের বাসিন্দা। তিন মাস আগে তার তিনটি সন্তান হয়েছে। বর্তমানে একটি সন্তানকে বড় করতেই আমাদের অনেক কষ্ট হয়ে যায় সেখানে তিনটি সন্তান। ইতোমধ্যে সে তার নিজের অটোরিকশাটি বিক্রয় করে দিয়েছেন। এখন সে খুব অসহায়।

পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শিশু তিনটি জন্মগতভাবে অপুষ্টিতে ভুগছে। নবজাতকদের মাও অসুস্থ। এখন পর্যাপ্ত খাবার না পাওয়ায় মা-শিশুদের বিভিন্ন জটিলতা তৈরি হচ্ছে। তাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থাও ভালো না। বড় ধরনের কোনো সমস্যা নেই। তবে তিনটি বাচ্চা হওয়ায় মায়ের পর্যাপ্ত দুধ হচ্ছে না। ফর্মুলা মিল্ক কিনে খাওয়াতে হচ্ছে।

মাহমুদ হাসান রায়হান/আরকে