হাসপাতালের বেডে নির্যাতনের শিকার চাঁদনী

কুষ্টিয়ার খোকসায় ১০ বছর বয়সী এক শিশুকে গরম খুন্তি দিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। চাঁদনী নামে ওই শিশু গৃহকর্মীর কাজে ঢাকা গিয়েছিল। কিন্তু ৯ মাস পর সারা শরীরে নির্যাতনের ক্ষত নিয়ে বাড়ি ফিরেছে। বুধবার (১০ মার্চ) দুপুরে অসুস্থ চাঁদনীকে হাসপাতালে ভর্তি করেছে তার পরিবার। 

নির্যাতনের শিকার চাঁদনী খোকসা উপজেলার বনগ্রাম পশ্চিমপাড়ার তমিজ উদ্দিন তোজের মেয়ে। অভিযুক্ত রোমানা নেছা একই গ্রামের মাসুদুজ্জামান রান্টুর মেয়ে। রোমানা ঢাকার মিরপুর ১১ নম্বরে বসবাস করেন। তার স্বামী ব্যবসা করেন।  

শিশুটির পরিবার সূত্রে জানা গেছে, করোনার শুরুর দিকে রোমানা নেছার বাসায় কাজের কথা বলে চাঁদনীকে নিয়ে যায়। এর কয়েকদিন পর তারা চাঁদনীর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। গ্রামের মানুষের চাপের মুখে ৯ মাস পর মঙ্গলবার দুপুরে শিশুটিকে তার নানির কাছে বুঝে দেওয়া হয়। শিশুটির শারীরিক অবস্থা দেখে গ্রামবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। তারা শিশুকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত মেডিকেল অফিসার শামীম মাহমুদ জানান, মেয়েটির গায়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। সে শারীরিকভাবে দুর্বল এবং তার শরীরে বিভিন্ন আঘাতের চিহ্ন পেয়েছি। অবস্থা বেশি খারাপ দেখে তাকে ভর্তি করে নিয়েছি।

হাসপাতালের বিছানায় বসে চাঁদনী তার শরীরের নির্মম নিযাতনের ক্ষত চিহ্ন দেখাচ্ছিল। ঢাকার বাসায় পৌঁছানোর চার দিন পর থেকে তার ওপর নির্যাতন শুরু হয়। তাকে মারধর করার পর রাতে ওড়না দিয়ে হাত-পা বেঁধে ফ্লোরে ফেলে রাখা হত। থালাবাসন, কাপড় পরিষ্কার করা, ঘর মোছার কাজ খারাপ হলেই নির্যাতন করা হত। রেগে গিয়ে খুন্তি দিয়েও মারপিট করা হতো।

চাঁদনীর বাবা জানান, ঝন্টু রান্টুরা অনেকটা জোর করে বাচ্চা রাখার জন্য চাঁদনীকে ঢাকায় নিয়ে যায়। মাসে মাসে মেয়ের পারিশ্রমিক হিসেবে টাকা দেওয়া কথা ছিল। কিন্তু একটা পয়সাও দেয়নি তারা। তিনি মেয়ের ওপর নির্যাতনের বিচার দাবি করেন।

এ ব্যাপারে গৃহকর্ত্রী রোমানা নেছার বাবা মাসুদুজ্জামান রান্টু ঢাকা পোস্টকে বলেন, কাজের মেয়েটিকে নিয়ে এক ধরনের চক্রান্ত করা হচ্ছে। মঙ্গলবার (৯ মার্চ) বাসা থেকে মেয়েটিকে তার নানি নিয়ে গেছে। এ বিষয়টি তিনি ভিডিও করে রেখেছেন। মেয়েটির গায়ে আগে থেকেই দাগ ছিল। 

এ বিষয়ে অভিযুক্ত রোমানা নেছা বলেন, কাজের মেয়েটিকে আমি নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসতাম। তাকে নির্যাতন করা হয়নি। তাদের অভিযোগ মিথ্যা।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে খোকসা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কমরুজ্জামান তালুকদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঢাকাতে ঘটেছে। শিশুটি এখন খোকসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে ভর্তি আছে। বিষয়টি আমি জেনেছি। তদন্তে অফিসার পাঠিয়েছিলাম। শিশুটি নির্যাতনের শিকার হয়েছে। ভুক্তভোগী পরিবারকে লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

রাজু আহমেদ/এসপি