গাইবান্ধা-৫ আসনের দ্বিতীয় দফার উপনির্বাচনে সকাল সাড়ে ৮টায় শুরু হওয়া ভোটগ্রহণ চলছে ১৪৫টি কেন্দ্রে। এখন পর্যন্ত সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ চললেও অধিকাংশ কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি কম দেখা গেছে।

ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতের প্রকোপের কারণে ভোটাররা কেন্দ্রে আসছেন না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা। তবে দুপুরের পর থেকে কেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের উপস্থিতি বাড়বে বলেও জানান তারা। ফাঁকা কেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ ও আনসার সদস্যদেরও অনেকটা অলস সময় কাটাতে দেখা গেছে।

এদিকে, কেন্দ্রগুলো ফাঁকা হওয়ায় অল্প সময়ের মধ্যে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পেরে খুশি ভোটাররা। এছাড়া ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট দিতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না বলেও জানিয়েছেন ভোটাররা। ভোটগ্রহণ শুরুর পর থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলার বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে কম ভোটার উপস্থিতির চিত্র দেখা গেছে।

সকাল ৯টার দিকে কঞ্চিপাড়া এমএইউ একাডেমিক কেন্দ্রে গিয়ে ভোটারদের কোনো লাইন দেখা যায়নি। দুই থেকে চারজন ভোটার এসে ভোট দিতে দেখা গেছে।

এছাড়া কুকড়াহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রেও ভোটারদের উপস্থিতি দেখা যায়নি। এ ভোটকেন্দ্রে ২ হাজার ৫০৫ জন ভোটারের মধ্যে সকাল ১১টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে মাত্র ১১০টি।

ভরতখালি বন্দর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রেও দুপুর ১২টা পর্যন্ত ভোটারদের কোনো লাইন দেখা যায়নি। তবে কেন্দ্রের মধ্যে ১৫ থেকে ২০ জন নারী ভোটারকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।

কেন্দ্রটির প্রিসাইডিং কর্মকর্তা কৃষ্ণ চন্দ্র রায় বলেন, এই কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ হাজার ৩৯ জন। তবে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে মাত্র ৫০০। তীব্র শীতের কারণে দুপুর পর্যন্ত সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। এ কারণে ভোটার উপস্থিতি কম। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটারদের উপস্থিতি বেড়েছে বলে জানান তিনি।

ভোটারদের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে ভরতখালি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে। এ কেন্দ্রে নারী ভোটারের উপস্থিতি কম থাকলেও পুরুষ ভোটারের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। একই অবস্থা গোবিন্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রেও। এ কেন্দ্রে পুরুষ ও নারী ভোটারদের লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিতে দেখা গেছে।

এদিকে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট দিয়ে খুশি ভোটাররা। ভরতখালি বন্দর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোট দিতে আসা শেফালি বেগম জানান, গত ১২ অক্টোবর ভালোভাবেই ভোট দিয়েছেন তিনি। এবারও কেন্দ্রে এসে দ্রুত ভোট দিয়েছেন পছন্দের প্রার্থীকে। ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট দিয়ে তিনি খুশি।

এই কেন্দ্রের আরেক ভোটার আবদুল মান্নান জানান, ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট দেওয়ার আগে ভয় লাগলেও পরে ভয় কেটে গেছে। একই সঙ্গে তিনি কেন্দ্র ও কেন্দ্রের বাহিরের পরিবেশ খুব ভালো বলে জানান।

ভরতখালি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট প্রদান শেষে জমির আলী বলেন, ভেবেছিলাম ভোট দিতে এসে কোনো সমস্যায় পড়ি কি না। লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষার পর পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে খুবই ভালো লাগছে। এখন পর্যন্ত ভোটের পরিবেশ যেমনটি রয়েছে তেমনি যেন বজায় থাকে।

উপনির্বাচনে সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নে ১৪৫টি কেন্দ্রে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ চলছে বলে জানিয়েছেন রিটানিং কর্মকর্তা মো. ফরিদুল ইসলাম।

তিনি বলেন, দুপুর ১টা পর্যন্ত কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। কেন্দ্রগুলোতে ইভিএম মেশিনেও কোনো ত্রুটি পাওয়া যায়নি। দুপুরের আগ পর্যন্ত কেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি কম থাকলেও তা এখন বাড়তে শুরু করেছে। বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণের আশা করেন তিনি।

নির্বাচনে যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের কথা জানিয়েছেন পুলিশ সুপার (এসপি) কামাল হোসেন।

তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ শেষ করতে মাঠে রয়েছে বিজিবি, র‍্যাব ও পুলিশের মোবাইল টিম, স্ট্রাইকিং ফোর্সের পাশাপাশি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট।

গাইবান্ধা-৫ আসনটি ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলা নিয়ে গঠিত। এ দুই উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নে মোট ভোটার ৩ লাখ ৩৯ হাজার ৪ জন। ১৪৫টি কেন্দ্রে এসব ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।

এই নির্বাচনে ৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও মাঠে সক্রিয় আওয়ামী লীগের মাহমুদ হাসান রিপন (নৌকা) ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী (জাপা) এএইচএম গোলাম শহিদ রঞ্জু (লাঙ্গল)। ভোটের মাঠে প্রচারণায় দেখা যায়নি বিকল্পধারা বাংলাদেশের জাহাঙ্গীর আলম (কুলা) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ মাহবুবুর রহমানকে (ট্রাক)। এছাড়া গত ২৫ ডিসেম্বর অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদুজ্জামান নিশাদ (আপেল) এক সংবাদ সম্মেলন করে ভোট কারচুপির আশঙ্কায় নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন।

রিপন আকন্দ/এমজেইউ