শীতের মাঝামাঝি সময়ে এসে দক্ষিণাঞ্চলের দুয়ারে কড়া নাড়ছে দুটি শৈত্যপ্রবাহ। এর মধ্যে একটি একেবারে নিকটে চলে এসেছে বলে জানিয়েছে বরিশাল আবহাওয়া অফিস। তারই প্রবাহে ইতোমধ্যে তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে। সেই সঙ্গে টানা তিন দিন ধরে অব্যাহত হিমেল হাওয়ায় জবুথবু হয়ে পড়েছেন বরিশাল বিভাগের বাসিন্দারা। দুপুরে কিছু সময়ের জন্য সূর্য দেখা গেলেও দিন এবং রাতের বাকি সময় কুয়াশা ঢাকা থাকছে এই অঞ্চল।

শীতের প্রকোপে হাসপাতালের ধারণক্ষমতার বেশি ঠান্ডাজনিত রোগী ভর্তি হওয়ায় হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আর বৈরী আবহাওয়ায় বিপাকে পড়েছে খেটে খাওয়া দিনমজুর, ছিন্নমূল, প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষেরা। পাশাপাশি গবাদিপশু নিয়েও বেকায়দায় আছেন গৃহস্থরা।

বরিশাল আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক প্রণব কুমার রায় বলেন, বুধবার বরিশালের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃহস্পতিবার তা কমে নেমেছে ১২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। তাপমাত্রা আরও কমার সম্ভাবনা রয়েছে।

এই আবহাওয়াবিদ বলেন, যে তাপমাত্রা তাতে তুলনামূলক শীত লাগার কথা না। কিন্তু কনকনে হিমেল হাওয়ার অব্যাহত প্রবাহ সকলকে কাবু করে দিচ্ছে। আজ (৫ জানুয়ারি) বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১০ কিলোমিটার।

আবহাওয়া তরঙ্গের পূর্বাভাস বলছে, চলতি মাসে দুটি শৈত্যপ্রবাহ দক্ষিণাঞ্চলের জেলাসমূহের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হবে। এর মধ্যে একটি ১২ থেকে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে।

বিভাগীয় আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ বশির আহম্মেদ বলেন, গত ২৪ ডিসেম্বর বরিশাল বিভাগের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমেছিল ১০ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তখনো কিন্তু এত শীত অনুভূত হয়নি। মৃদু শৈত্যপ্রবাহের আওতায় না এসেও মৌসুমী হিমেল হাওয়ায় অতিরিক্ত শীত অনুভূত হচ্ছে। পুরো জানুয়ারি মাসজুড়ে এমন শীত বিরাজ করার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে শৈত্যপ্রবাহের সন্নিকটে এলে মাত্রা বাড়ে।

বরিশাল নদী বন্দরে পরিবারসহ থাকে ছিন্নমূল সুমাইয়ার পরিবার। তারা জানান, গত তিন দিন ধরে উত্তরের টানা বাতাসে টিকে থাকা দায় হচ্ছে। এমনিতে শীতের কাপড় বা কম্বল নেই তার ওপরে উন্মুক্ত স্থানে রাতযাপন করতে হচ্ছে। যে কারণে দুরূহ হয়ে পড়েছে প্রতিটি রাত।

সদর উপজেলার কাগাশুরা গ্রামের বাসিন্দা আনিসুর রহমান বলেন, দুপুরে রোদ উঠলেও বাতাসে এতো বেশি কনকনে ঠান্ডা নিয়ে আসছে যে ঘরে বাইরে কোথাও থাকা যাচ্ছে না। এছাড়া গবাদিপশু নিয়ে মাঠেও যেতে পারছি না, আবার ঘরে রেখে কী খাওয়াবো?

সরকারি একটি ব্যাংকের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার সাইফুল ইসলাম বলেন, খুব ভোরে অফিসের জন্য বের হতে হয়। তখন কুয়াশা এতো বেশি থাকে যে পথ চলতেই ভয় লাগে। এই সময়টায় দুর্ঘটনাও বেশি ঘটে বলে আমার মনে হচ্ছে।

বরিশাল জেলা ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. সব্যসাচী দাস বলেন, মৌসুমের শুরু থেকেই বরিশালে এবার তুলনামূলক বেশি শীত অনুভূত হয়েছে। বিশেষ করে গত ৩/৪ দিন ধরে এর তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর চাপ বেড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী শিশু এবং বয়স্করা।

তিনি বলেন, ঠান্ডাজনিত রোগ মোকাবিলায় প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নির্দেশনা দেওয়া আছে। এজন্য যদি শিশু বা বয়স্কদের শ্বাসকষ্ট বা অন্য কোনো মারাত্মক উপসর্গ দেখা দেয়, তাহলে যেন দ্রুত হাসপাতালে ডাক্তারের শরণাপন্ন হন।

শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম জানান, হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ৩৬টি বেড রয়েছে। অথচ কয়েকদিন প্রচণ্ড রোগীর চাপ বেড়েছে। আমরা জায়গা দিতে পারছি না। এজন্য ১০০ বেডে উন্নীত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছি। দু-একদিনেই ১০০ বেড চালু হবে বলে আশা করছি।

পরিচালকের কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে- ডিসেম্বরে ১০ জন এবং ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত আরও ৩ শিশু ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ১৫৪ জন শিশু ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। 

বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে বিভাগের ৬টি হাসপাতালে মোট ২১০ জন ভর্তি হয়েছে। 

বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানবিদ এএসএম আহসান কবির বলেন, ভর্তি রোগীর মধ্যে ৩৭ জন ঠান্ডাজনিত রোগে, ১১৫ জন ঠান্ডায় ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে এবং ৫৮ জন অন্য রোগে আক্রান্ত থাকলেও ঠান্ডায় তারা বেশি অসুস্থ হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর