রংপুর অঞ্চলে পৌষের শেষ বেলায় জেঁকে বসেছে শীত। মৃদু ও মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহে বিপর্যস্ত জনজীবন। কনকনে শীত আর হিমেল হাওয়ায় চরম বিপাকে শীতার্ত মানুষেরা। শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ছিন্নমূল মানুষদের দুর্দশাও বেড়েছে। ভোর আর সন্ধ্যায় গ্রামে গ্রামে জটলা বেঁধে আগুন পোহানোর মাধ্যমে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে অনেকেই। শীতের তীব্রতা থেকে বাঁচতে খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুনের উষ্ণতা নিতে গিয়ে কোথাও কোথাও ঘটছে অগ্নিদগ্ধের ঘটনাও।

গত ২৪ ঘণ্টায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে ৫ নারী রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে একজনকে বার্ন ইউনিটে এবং বাকি চারজনকে ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। 
চিকিৎসকরা বলছেন, পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। কারো কারো শরীরের ৭০-৮০ শতাংশ, কারো আবার ৪০-৫০ শতাংশ পুড়ে গেছে।

রমেক হাসপাতালের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীনরা হলেন- কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীর ফাতেমা বেগম (৬০), একই জেলার ফুলবাড়ির আয়েশা (৬৫), লালমনিরহাটের আদিতমারির সফুরা বেগম (৫০) এবং দিনাজপুরের ফুলবাড়ি উপজেলার বুললি আক্তার (৩০)। এছাড়াও বার্ন ইউনিটে নীলফামারীর রহিমা বেগম (৬২) চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

শনিবার (৭ জানুয়ারি) দুপুরে হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. এম এ হামিদ পলাশ জানান, চিকিৎসাধীন বেশির ভাগ রোগীই শীতের তীব্রতা থেকে উষ্ণতা পেতে আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হয়েছেন। প্রতি শীত মৌসুমে রংপুর অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় অগ্নিদগ্ধের এমন ঘটনা ঘটে। বর্তমানে বার্ন ইউনিটসহ হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

বার্ন ইউনিট সূত্রে জানা যায়, গত ডিসেম্বর মাসে ৩৪ জন ভর্তি হয়েছিল। বর্তমানে বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন মোট ২৫ জন অগ্নিদগ্ধ রোগী। ডিসেম্বরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত অগ্নিদগ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার আফরোজা (৩৭) ও পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার নছিমন বেওয়া (৬৮) নামে দুই নারীর মৃত্যু হয়েছে। ঢাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে ৫ জনকে এবং চিকিৎসা শেষে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে ১৭ জনকে। এছাড়া গত মাসে বহির্বিভাগে ৪১ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

এদিকে অগ্নিদগ্ধ রোগী ছাড়াও রমেক হাসপাতালসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শীতের প্রকোপে বেড়েছে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত রোগীদের ভর্তির চাপ। গত কয়েক দিনের তুলনায় হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছে, শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শীতজনিত রোগীও বাড়তে শুরু করেছে। বেশির ভাগ শিশু ও বয়স্করা শীতে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।

এদিকে রংপুর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের সহকারী আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, শনিবার সকাল ৬টায় দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগের দিন শুক্রবার এ এলাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১১.০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রংপুর বিভাগের সৈয়দপুর, তেঁতুলিয়া, দিনাজপুরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ চলছে।

তিনি জানান, আরও কয়েকদিন দেশের উত্তর ও পশ্চিমাংশে মৃদু/মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ চলতে পারে। এ সময় তামপাত্রা ৬  থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠানামা করতে পারে। একই সঙ্গে স্থানভেদে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা বিরাজমান থাকবে।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরএআর