বেলা ১১টা। গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের হাতিশালায় ঢুকতেই বিপদ ভেবে মা হাতি বেলকলির হুংকার, সঙ্গে রক্তচক্ষু চাহনি। হঠাৎ গভীর জঙ্গল থেকে ডাক শুনেই দৌঁড়ে এসে মায়ের কাছে লুকাচ্ছে চার মাস বয়সী আনারকলি। নিরাপদ ভেবে আবার দৌড়ে লুকাচ্ছে গভীর জঙ্গলে। তার দুরন্তপনায় মা বেলকলিকে অনেকটা ঘাম ঝড়াতে হয়। শাবকের নিরাপত্তার জন্য তাকে ছুটতে হয় তার পেছনেই। বেলকলির শাবক আনারকলিকে নিয়েই ব্যস্ত সময় পাড় করছেন হাতিশালার মাহুতসহ অন্যরা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের এক কোনে ঘন অরণ্যে ঘেরা সীমানা বেষ্টনীর সঙ্গে হাতির বিশ্রামাগারের জন্য নির্ধারিত স্থান। এরই মধ্যে হাতিগুলোকে বিশেষ পরিচর্যায় দেখভাল করে দলের সদস্যরা (মাহুত)। দলের সব সদস্যের পায়ে শিকল দিয়ে রাখা হলেও মা বেলকলি ও তার শাবক আনারকলিকে উন্মুক্ত করে রাখা হয়। তারা বনের ভেতর একটু নির্জনতায় থাকতে পছন্দ করে। তাদের পছন্দময় জায়গায় খাবার পৌঁছে দেন পরিচর্যাকারীরা।

গত বছরের ৮ আগস্ট সাফারে পার্কে মা হাতি বেলকলি আনারকলিকে জন্ম দেয়। এর আগে ২০১৮ সালের ৫ জুন এই বেলকলিই পার্কে আরও একটি শাবক ফুলকলির জন্ম দিয়েছিল। ফুলকলির বয়স এখন চার বছর পেরিয়েছে। এর আগে ২০১৭ সালের আগস্ট আরও একটি হাতি শাবকের জন্ম হয়েছিল। সাফারি পার্কের পরিবেশে দুটি শাবক মায়ের থেকে আলাদা হয়ে এখন প্রশিক্ষিত হওয়ার পর্যায়ে রয়েছে।

পার্ক কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য মতে, ২০১৩ সালে পার্ক প্রতিষ্ঠার সময় ছয়টি বন্যহাতি সাফারি পার্কে এনে পোষ মানানো হয়। এদের মধ্যে ছিল দুটি পুরুষ ও চারটি মাদি। পরে আরও তিনটি শাবকের জন্ম হয়। এর মধ্যে গত ২১ সেপ্টেম্বর পুরুষ হাতি আমির বাহাদুরের আক্রমণে অপর পুরুষ হাতি শেল বাহাদুর মারা যায়। এখন পার্কে ১টি পুরুষ ও ৭টি মাদি হাতি রয়েছে। 

সাফারি পার্কের হাতির পরিচর্যাকারী দলের সদস্য আবু তাহের বলেন, আমাদের হাতির পালের সর্বকনিষ্ট সদস্য আনারকলি। শাবকটির নিরাপত্তার কথা ভেবে আমাদের সদস্যদের বিশেষ নজরে থাকে সে। সারাদিন এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করে। তারা একটু নির্জনতায় থাকতে পছন্দ করে। তবে আমরা তাকে কোনো ধরনের বাধা দেই না। সবই চলে তার খেয়াল-খুশি মতো। এদিক-ওদিক সবদিকে তার মা যেন তার নিরাপত্তা প্রহরী। সেও মায়ের পিছু যেন ছাড়েই না।

সাফারি পার্কে থাকা হাতিগুলো এশিয়ান হাতি। দেখতে কিছুটা ধূসর রংয়ের। আকারে আফ্রিকান হাতির চেয়েও কিছুটা বড়। বিভিন্ন ধরনের ফলমূল, ঘাস, কলাগাছ, গাছের পাতা, ভুট্টা গাছ খেয়ে বেঁচে থাকে। দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার ১৩টি দেশে এই প্রাণীর দেখা মেলে। এর মধ্যে একটি দেশ বাংলাদেশ।

সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, এই পার্কে হাতির সঠিক খাদ্যাভ্যাস, সঠিক পরিচর্যা করায় ইতিমধ্যেই তিনটি শাবকের জন্ম হয়েছে। আমাদের দক্ষ টিম সদা সচেষ্ট হাতির পরিচর্যায়। তাদের নিয়মিত খাবার, গোসল, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ সব দিকেই খেয়াল রাখা হয়। দুর্ঘটনায় একটি হাতি মারা গেলেও বাকি সবাই সুস্থ রয়েছে। আমাদের আশা ভবিষ্যতেও পার্কে আরও হাতি শাবকের জন্ম হবে। প্রতিটি প্রাণীর ছোট সদস্যের প্রতি একটু বিশেষ মায়া ও ভালোবাসা থাকে। আমাদেরও হাতির পালের এই সদস্য সবার ভালোবাসায় বড় হচ্ছে। 

তিনি আরও বলেন, হাতি শাবক চার বছর বয়স পর্যন্ত তার মায়ের পরিচর্যায় বড় হয়। চার বছরের পর সে প্রাকৃতিকভাবে নিজেই নিজের খাবার গ্রহণ করে। তখন আর মায়ের সাহায্য তার প্রয়োজন হয় না। আনারকলি এখন পুরোটায় আমাদের নজরদারিতে তার মায়ের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। মায়ের দুধই তার প্রধান খাদ্য। তবে আমরা শাবকের উন্নত পুষ্টির কথা বিবেচনা করে তার মাকেও চাহিদা অনুযায়ী খাবার দিচ্ছি। 

শিহাব খান/আরএআর