ঝিনাইদহে গ্রাম-বাংলার ঐহিত্যবাহী গরুর গাড়ির দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই প্রতিযোগিতাকে ঘিরে সদর উপজেলা বাজার গোপালপুর নিমতলা পরিণত হয়েছিল উৎসবের গ্রামে। যা দেখতে ভিড় করেন বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থী।

সোমবার (৯ জানুয়ারি) দুপুরে ২নং মধুহাটি ইউনিয়নের বাজার গোপালপুর নিমতলা গ্রামের মাঠে এই দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন সাবেক চেয়ারম্যান ও স্থানীয় যুব সমাজ।

সরেজমিনে দেখা যায়, ঝিনাইদহসহ আশপাশের জেলা থেকে বিপুল সংখ্যক দর্শক গোপালপুর গ্রামের নিমতলা মাঠে হাজির হয়েছেন। মঞ্চ থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে গরু ও গাড়ি নিয়ে চারটি সারিতে চলছে দৌড়ের প্রস্তুতি। বাঁশিতে ফুঁ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গাড়োয়ানদের হাতের ছোঁয়ায় যেন মুহূর্তে পাল্টে যায় চিত্র। একে অপরকে পেছনে ফেলতে গরু ছুটতে থাকে বিদ্যুৎ গতিতে। রোমাঞ্চ ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। যা দেখে উল্লাসে ফেটে পড়েন আগত হাজারো দর্শক। চমৎকার এ প্রতিযোগিতাকে ঘিরে আয়োজন করা হয় আনন্দ মেলারও। ছিল নাগরদোলা, নানা পণ্য সামগ্রীর দোকান। এমন আয়োজন প্রতি বছর আয়োজনের দাবি দর্শকদের।

দিনভর উত্তেজনাপূর্ণ এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় ঝিনাইদহ, যশোর এবং চুয়াডাঙ্গা জেলা থেকে আসা ১০টি গরুর গাড়ি। গরুর গাড়ির দৌড় প্রতিযোগিতা উপলক্ষে মাঠে বসে গ্রামীণ মেলা। নানা পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেন বিক্রেতারা। 

এবারের প্রতিযোগিতায় প্রথম হন ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার আশরাফুল ইসলাম। তাকে পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হয় বড় একটি বাইসাইকেল। দ্বিতীয় হন চুয়াডাঙ্গার জীবননগর এলাকার বিল্লাল হোসেন। তাকে ছোট একটি বাইসাইকেল দেওয়া হয়। আর তৃতীয় স্থান অধিকারী কোটচাঁদুপর উপজেলার রাকিবুল ইসলামকে একটি মোবাইল ফোন দেওয়া হয়।

প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ঝনঝনিয়া গ্রামের ইসলাম উদ্দীন ঢাকা পোস্টকে বলেন, সারা বছর চাষাবাদে ব্যস্ত থাকি। শীত মৌসুম আসলে যেখানেই খেলা হোক সেখানেই অংশ গ্রহণ করি। বিভিন্ন জায়গা থেকে আয়োজকরা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য আমাদেরকে ফোন দিয়ে থাকে। এ বছরও দুই জায়গাই অংশগ্রহণ করে প্রথম এবং দ্বিতীয় পুরস্কার জিতেছি।

প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার বদ্দিনাথপুর গ্রামের মোশারফ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা বিভিন্ন জায়গায় গরুর গাড়ির দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করি। এই মাঠে আমরা প্রথম এসেছি। যেখানেই যাই সেখানেই পুরস্কার জিতে আসি। যার কারণে এই খেলার প্রতি আলাদা আগ্রহ থাকে। মানুষকে আনন্দ দিয়ে আনন্দ লাভের জন্যই দূর থেকে আসি। 

 চুয়াডাঙ্গা থেকে আসা দর্শক ফেরদৌসি আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, গরুর গাড়ির দৌড় প্রতিযোগিতা কখনো দেখিনি। এবারই প্রথম এতো দূর থেকে এই খেলা দেখতে আসছি। ভাবছিলাম কেমন হবে? ভালো হবে কি না? তবে এখানে এসে গরুর গাড়ির দৌড় প্রতিযোগিতা দেখে আসলেই অনেক ভালো লাগছে।

দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী শাহিন ঢাকা পোস্টকে জানান, বড়দের থেকে গ্রাম-বাংলার এই গরুর গাড়ির দৌড় প্রতিযোগীর কথা শুনে সে এসেছে। এবারই প্রথম কয়েকজন বন্ধু মিলে এই দৌড় প্রতিযোগিতা দেখতে এসেছে। খুব আনন্দ ও মজা পেয়েছে তারা।

আয়োজক ২নং মধুহাটি ইউনিয়নের সাবেক চেয়াম্যান মো. ফারুক হোসেন জুয়েল ঢাকা পোস্টকে বলেন, গ্রাম-বাংলার দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য আস্তে আস্তে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এজন্য এলাকার যুবসমাজকে সঙ্গে নিয়ে এই খেলার আয়োজন করা হয়েছে। চেষ্টা করছি গ্রাম-বাংলার এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখার জন্য। প্রতি বছরই এমন আয়োজন করবো।  

গরুর গাড়ি দৌড় প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঝিনাইদহ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুর রশিদ। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, গরুর গাড়ির দৌড়, ঘোড় (ঘোড়া) দৌড়, নৌকা বাইচ এটা বাংলার ঐতিহ্যেরে সঙ্গে জড়িত। আমরা প্রতিনিয়ত বাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা করি। 

 আব্দুল্লাহ আল মামুন/আরএআর