রাজধানীর ফুটপাতে থাকতেন ৬৫ বছর বয়সের বৃদ্ধা সাজেদা বেওয়া। চোখেও তেমন ভালো দেখতে পান না তিনি। নাটোরের সিংড়া উপজেলার শুকাশ ইউনিয়নের হাঁসপুকুরিয়া গ্রামে স্বামী, চার ছেলে ও তিন মেয়েকে নিয়ে চলে ছিল তার সংসার। প্রায় ১২ বছর আগে সাজেদার স্বামী যশমত আকন্দ মারা যান। এক প্রতিবন্ধী ছেলেও মারা যায় তার স্বামীর মৃত্যুর পর। ওদিকে কৃষিকাজ করে জীবিকা চালানো দুই ছেলে আর তাকে দেখেনি। তাদের কাছে ঠাঁই হয়নি বৃদ্ধ মা আর প্রতিবন্ধী এক ভাইয়ের। অবশেষে তিনি মনের কষ্ট, অবহেলা আর যন্ত্রণা নিয়ে একাকী একদিন বের হয়ে যান বাড়ি থেকে। 

গত রোববার (৮ জানুয়ারি) একটি গণমাধ্যমে বৃদ্ধা সাজেদা বেওয়াকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে সেটি আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের নজরে আসে। তিনি বৃদ্ধা সাজেদা বেওয়াকে খুঁজে বের করে কম্বল ও নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করেন। এ সময় প্রতিমন্ত্রী তার গাড়িতে করে বৃদ্ধাকে নিজ বাসভবনে নিয়ে যান। বর্তমানে বৃদ্ধা সাজেদা বেওয়া তার ভাতিজা আবু বকর সিদ্দিকীর বাড়িতে আছেন।

জানা গেছে, নাটোরের সিংড়া উপজেলার শুকাশ ইউনিয়নের হাঁসপুকুরিয়া গ্রামে সাজেদা বেওয়ার জন্য ঘর নির্মাণ কাজ শুরু করেছে প্রশাসন। তার কোনো জায়গা-জমি না থাকায় ভূমিহীনদের জন্য বরাদ্দ প্রধানমন্ত্রীর উপহার ঘরসহ ২ শতক জায়গা দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

সোমবার (১০ জানুয়ারি) দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এমএম সামিরুল ইসলাম শুকাশ ইউনিয়নের হাঁসপুকুরিয়া গ্রামে যান এবং ওই বৃদ্ধা মহিলার আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন তিনি অসহায় ও ভূমিহীন। পরে সাজেদা বেওয়ার মৃত স্বামীর গ্রামে হাঁসপুকুরিয়া মৌজায় রাস্তার পার্শ্বে ২ শতক সরকারি জায়গায় ঘরের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন।

 প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের বাড়িতে বৃদ্ধা সাজেদা বেওয়া

বৃদ্ধা সাজেদার ভাতিজা আবু বকর সিদ্দিকী বলেন, গত ১০-১২ বছর আগে তার ফুফা যশমত আকন্দ মারা যান। এরপর গত দুই বছর আগে একদিন বাড়ি ছেড়ে চলে যান ফুফু। এরপর বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও কোনো খোঁজ পাইনি। অবশেষে গত রোববার ঢাকায় প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক সাহেব ফুফুকে দেখতে যান। এ সময় পলক ভাই আমাকে ঢাকায় ডেকে নেন। পরে আমার সঙ্গে ফুফুকে নিজ গাড়িতে বাড়ি পাঠিয়ে দেন। এ সময় ফুফুকে ২০ হাজার টাকা দিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী। 

তিনি আরও জানান, প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক তিন লাখ টাকা দিয়েছেন তার ফুফুর বাড়ি করে দেওয়ার জন্য। এছাড়া একটি গাভী দিয়েছেন। সোমবার সকালে আইসিটি প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশনায় ফুফুকে বিধবা কার্ড ও তার প্রতিবন্ধী ছেলেকে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন। এছাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্বামীর বাড়ির পাশেই ২ শতক ভূমি নির্ধারণ করে মাপ করে দিয়েছেন। সেখানেই ফুফুর বাড়ির কাজ শুরু হয়েছে।

এদিকে অনেকদিন পর মাকে ফিরে পেয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েছে সাজেদার প্রতিবন্ধী ছেলে। ওই ছেলেকে নিয়ে যাতে সুখে জীবনযাপন করতে পারেন সেই জন্য ওই বিশ হাজার টাকা দিয়ে বাড়ির পাশেই একটি ছোটখাটো ব্যবসা খুলতে পরামর্শ দিয়েছেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী। ব্যবসার প্রয়োজনীয় মালামালসহ অন্যান্য সামগ্রী কেনার জন্য প্রয়োজনীয় টাকাও দেবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

সাজেদা বেগম জানান, তার স্বামীর গ্রামে মাথাগোঁজার ঠাঁই পেয়ে তিনি আনন্দিত। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রতিমন্ত্রী পলককে ধন্যবাদ জানান। আর সেই সঙ্গে রাজধানীর ফুটপাতে তার কষ্টের সঙ্গীদের নিজ নিজ এলাকায় মাথাগোঁজার ঠাঁই মিলবে বলে আশা ব্যক্ত করেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এমএম সামিরুল ইসলাম বলেন, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের নির্দেশনা অনুযায়ী সরকারি ২ শতক জায়গায় ঘরের নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন। দ্রুত সেই ঘরে সাজেদা বেগমের ঠাঁই মিলবে। ইতোমধ্যেই ঘর তৈরির ইট, বালি, সিমেন্ট, রড নিয়ে আসা হয়েছে। শুরু হয়েছে কাজ। বাড়ির নির্মাণ শেষ হলে সেখানে ওই বৃদ্ধা উঠবেন তার ছেলেকে নিয়ে। বাড়ির সঙ্গে ছোটখাটো একটা ব্যবসা করবেন। সেই জন্যও সহযোগিতা করবেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী পলক।

তাপস কুমার/আরকে