নড়াইলে পুলিশের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে লক্ষাধিক টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ভুয়া দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে আটক করেছে লোহাগড়া থানা পুলিশ। সোমবার (৯ জানুয়ারি) দিবাগত রাতে লোহাগড়া উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফারহানা ইয়াসমিন ইতির বাসা থেকে স্থানীয় জনতা তাদের আটক করে পুলিশে দেয়। মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) বিকেলে ভুক্তভোগীর মামলার প্রেক্ষিতে তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

গ্রেপ্তার দুজন হলেন- গোপালগঞ্জ সদরের পারচন্দ্র দিঘলিয়া গ্রামের মো. আকরাম মোল্যার ছেলে তুহিন মোল্যা (৩৫) এবং বাগেরহাটের মোল্লারহাট উপজেলার আড়োঢেকি গ্রামের এনায়েত শেখের ছেলে মো. রিপন শেখ (৩০)। লোহাগড়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাসির উদ্দীন ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

পুলিশ ও ভুক্তভোগীর পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, লোহাগড়া উপজেলার ভুক্তভোগী ইয়াসিন তার ছোট ভাইয়ের পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগের জন্য বিভিন্ন লোকের শরণাপন্ন হন। এর ধারাবাহিকতায় গ্রেপ্তারকৃত প্রতারক দুজন নিজেদের পুলিশের উপ-পরিদর্শক পরিচয় দেন। পুলিশের পোশাক ও ব্যবহৃত মোটরসাইকেলে পুলিশ স্টিকার দেখিয়ে ভুক্তভোগীর বিশ্বাস অর্জন করেন। ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার মাধ্যমে পুলিশে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ১০ লাখ টাকা চুক্তিতে ৩ লাখ ১০ হাজার টাকা অগ্রীম নিয়ে নেন প্রতারক চক্রের সদস্যরা। গত নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ভুক্তভোগীর ভাইয়ের চাকরি না হওয়ায়, টাকা ফেরত চায়। প্রতারক চক্রটি টাকা ফেরত না দিয়ে  বিভিন্ন তালবাহানা শুরু করে। 

চলতি পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগে চাকরির নিশ্চয়তা দিয়ে ভুক্তভোগী পরিবারের কাছে আরও এক লাখ টাকা দাবি করেন প্রতারক দুজন। সোমবার রাতে নগদ এক লাখ টাকা নিতে আসলে কৌশলে প্রতারক চক্রের সদস্যদের উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। স্থানীয় জনতা আটক করে পুলিশে খবর দিলে তাদের আটক করা হয়।

লোহাগড়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাসির উদ্দীন ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্থানীয় জনতা পুলিশ কর্মকর্তা পরিচয়দানকারী প্রতারক চক্রের দুই সদস্যকে আটক করে থানায় খবর দেয়। তাদেরকে আটক করে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা পুলিশ পরিচয় দিয়ে প্রতারণার কথা স্বীকার করেছেন। ভুক্তভোগীর মামলার ভিত্তিতে তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এ সময় তাদের থেকে পুলিশের সরকারি ক্যানভাস-স্যু ও পুলিশ স্টিকার সম্বলিত একটি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে। তাদের আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।

জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) সাদিরা খাতুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা দীর্ঘদিন যাবৎ নড়াইল ও তার আশেপাশের এলাকায় গরিব ও অসহায় চাকরি প্রত্যাশীদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলে প্রতারণা করে আসছিল। আপনাদের সবার প্রতি আহ্বান, পুলিশের কনস্টেবল পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া শতভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গে হবে। যোগ্যতার মাপকাঠিতে প্রার্থীরা চাকরি পাবেন। এখানে বিভ্রান্ত হয়ে কারো ফাঁদে পা দিয়ে নিজের জমানো অর্থ নষ্ট করবেন না। 

সজিব রহমান/আরকে