গাজীপুরের শ্রীপুরে স্থাপিত সৌরশক্তির সেচ পাম্প

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার শেষ প্রান্তের শীতলক্ষ্যা নদীঘেঁষা গ্রাম নান্দিয়া সাঙ্গুন। এ গ্রামের বাসিন্দাদের প্রধান পেশা কৃষি। সঠিক সময়ে বিদ্যুৎ না পাওয়ায় কৃষিতে সেচ না দিতে পেরে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতেন তারা। এ ছাড়া ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং ছিল তাদের কৃষির জন্য প্রধান বাধা। মৌসুম শেষে কৃষি থেকে প্রাপ্ত আয়ের সিংহভাগই চলে যেত বিদ্যুৎ বিলে। তা ছাড়া বিঘাপ্রতি এক থেকে দেড় হাজার টাকা নিতেন সেচ পাম্পের মালিক।

কৃষকের এসব সমস্যা সমাধানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি শক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষিতে সেচসুবিধা পাচ্ছেন গাজীপুরের সাতটি এলাকার কয়েক শ কৃষক। সৌরশক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বিনামূল্যে তারা এ সুবিধা পাচ্ছেন। সরকারের এ ক্ষুদ্র সেচ কর্মসূচি এখন আলো ছড়াচ্ছে স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে। কৃষকদের মতে, এতে কৃষিপণ্যের উৎপাদন খরচ অনেক কমে আসবে। পাশাপাশি পরিবেশেরও সুরক্ষা হবে।

গাজীপুর বিএডিসি (সেচ) অফিসের দেওয়া তথ্যমতে, বর্তমানে দেশের সিংহভাগ কৃষককে তাদের কৃষিজমিতে সেচ দিতে ডিজেলচালিত ইঞ্জিন ও বিদ্যুৎ-চালিত মোটরের সাহায্য নিতে হয়। এতে কৃষিজমিতে উৎপাদন খরচ যেমন বাড়ে, তেমনি কৃষকদের নিরবচ্ছিন্ন সেচের ভোগান্তি ও ভূগর্ভস্থ পানিরও অপচয় হয়।

বর্তমান সরকার কৃষির উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনতে ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি শক্তির ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দিয়ে সৌরশক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ক্ষুদ্র সেচ নামের একটি কর্মসূচি চালু করে। এ কর্মসূচির অধীনে গাজীপুরের শ্রীপুরের নান্দিয়াসাঙ্গুনে দুটি, ধামলই গ্রামে দুটি, কালিয়াকৈর উপজেলার ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নে একটি ও গাজীপুর সদরের পিরুজালী এলাকায় দুটি সোলার পাম্প সরকারি অর্থায়নে স্থাপন করা হয়।

ইউরোপিয়ান যন্ত্রাংশে প্রতিটি সোলার পাম্প স্থাপনে ব্যয় হয়েছে ২৩ লক্ষাধিক টাকা। গত অর্থবছরে স্থাপন করা এক কিউসেক পানি উৎপাদনে সক্ষম এসব পাম্পের মাধ্যমে গাজীপুরের সাতটি এলাকার দেড় শতাধিক কৃষক প্রায় অর্ধশত একর জমিতে বিনামূল্যে সেচ দিচ্ছেন। জ্বালানি খরচ না হওয়া, পানির অপচয়রোধ, নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহারযোগ্য এ সেচ নিয়ে স্থানীয় কৃষকদের আগ্রহ তৈরি হয়েছে।

শ্রীপুরে স্থাপিত সৌরশক্তির সেচ পাম্প

নান্দিয়া সাঙ্গুন এলাকার কৃষক আবু নাছের ঢাকা পোস্টকে বলেন, তাদের এলাকার কৃষিকাজে কৃষকদের সেচনির্ভরতা ছিল ডিজেলচালিত মেশিনের ওপর। এতে ৩৩ শতকের এক বিঘা জমিতে সেচ দিতে ১ হাজার ৫০০ টাকা লাগত। সোলার পাম্প স্থাপন করায় এখন আর সে খরচটা লাগছে না। এতে নানা ধরনের সুযোগ তৈরি হয়েছে কৃষকদের, বিশেষ করে কৃষিপণ্য উৎপাদন খরচ কমেছে। লাভবান হওয়ায় স্থানীয় কৃষকরা এতে প্রতিনিয়ত আগ্রহী হচ্ছেন।

নাছের বলেন, কৃষকদের সমন্বয়ে সমিতি গঠন করে এ সোলার পাম্পের স্কিম পরিচালিত হচ্ছে। ইরি ও বোরো মৌসুম ছাড়াও বছরজুড়ে নানা ধরনের মৌসুমি সবজির চাষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এ সোলার সেচ পাম্প।

কৃষক বাদল মিয়া জানান, সোলার পাম্পের উৎপাদিত শক্তি সংরক্ষণের জন্য ব্যাটারির কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। ফলে শুধু দিনের বেলায় সেচ দিতে হয়। এ ছাড়া শীতকাল ও আবহাওয়া খারাপ থাকলে সেচ দেওয়া যায় না। তবে ব্যাটারির ব্যবস্থা হলে দিনের সঙ্গে রাতের বেলায়ও সেচ দেওয়া যেত। এতে সেচ-সুবিধার মধ্যে আসতেন বেশিসংখ্যক কৃষক।

বিএডিসি (ক্ষুদ্র সেচ) গাজীপুর ও মানিকগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী ফারুক হোসেন বলেন, পরিবেশবান্ধব সেচ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারে গুরুত্ব দিয়ে সৌরশক্তির এ সেচ পাম্প  স্থাপন করা হয়েছে। কৃষকরা বিনামূল্যে সরকারি এ সুবিধা ভোগ করতে পারছেন। এ সেচ পাম্প চালাতে কোনো খরচ হয় না বিধায় কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় কৃষকরা এমন ধরনের সৌরবিদ্যুৎ-চালিত সেচ পাম্পের দিকে প্রতিনিয়তই ঝুঁকছেন।

এ বিষয়ে ক্ষুদ্র সেচ উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সারোয়ার হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, কৃষিবান্ধব সরকার কৃষির উন্নয়নে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। পানি সংরক্ষণ, সেচের অপচয় রোধ, ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহারের লক্ষ্যে সৌরশক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ক্ষুদ্র সেচ তেমনই একটি উদ্যোগ। এ ধরনের কর্মসূচির মাধ্যমে সরকার কৃষকদের সৌরশক্তির ব্যবহারের ওপর আগ্রহ তৈরি করছে। ফলে কৃষিতে উৎপাদন খরচ অনেক কমে আসবে।

শিহাব খান/এনএ