নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপে জোয়ারের প্রভাবে ছোয়াখালী ব্রিজটি ভেঙে যাওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন পর্যটক-স্থানীয়রা। ৩ বছর অতিবাহিত হলেও এখনো সংস্কার বা নতুন ব্রিজ নির্মাণ করা হয়নি।

এদিকে সাময়িক চলাচলের জন্য ভাঙা ব্রিজের পাশে একটি অস্থায়ী কাঠের পুল নির্মাণ করা হলেও ঝুঁকিপূর্ণ কাঠের পুলটিও এখন ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে প্রতিদিন চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন নিঝুম দ্বীপে ঘুরতে আসা পর্যটক, শিক্ষার্থী ও স্থানীয় লোকজন।

স্থানীয়রা জানান, নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নের ছোয়াখালী বাজার সংলগ্ন সেতুটি ৪ ও ৫নং ওয়ার্ডের সংযোগস্থল। নিঝুম দ্বীপের প্রধান সড়কের সেতু হওয়ায় প্রতিদিন কয়েক হাজার বাসিন্দাকে পারাপার হয়ে উপজেলায় যেতে হয়। কিন্তু ৩ বছর অতিবাহিত হলেও এখনো সংস্কার বা নতুন ব্রিজ নির্মাণ না করায় ভোগান্তির যেন শেষ নেই। বিকল্প কাঠের সেতু নির্মাণ করা হলেও প্রায়ই সেখানে দুর্ঘটনা ঘটছে। নিঝুম দ্বীপে ঘুরতে আসা পর্যটকরা একবার এলে আর দ্বিতীয়বার আসতে চান না।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রশাসনের সুদৃষ্টির অভাব আর অবহেলার কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ব্রিজটি যেমন সংস্কার করা হয়নি, তেমনি নতুন ব্রিজ নির্মাণেরও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

স্কুলশিক্ষার্থী মো. আল আমিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা নিঝুম দ্বীপ স্কুলে পড়ি। ব্রিজ না থাকায় আমাদের আসা-যাওয়া করতে অসুবিধা হয়। সময়মতো স্কুলে যাওয়া যায় না। পড়াশোনার ক্ষতি হয়। ব্রিজটি দ্রুত নির্মাণ হলে শিক্ষার্থীদের অনেক উপকার হবে।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. শাহিন খান বলেন, ৩ বছর হলেও ছোয়াখালী ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়নি। এপাশ থেকে ওপাশ যাতায়াত করা অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে। মালামাল আনা-নেওয়া করা যায় না। বিকল্প কাঠের সেতু ভেঙে কিছুদিন আগেও সিএনজিচালিত অটোরিকশা দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। আল্লাহ রক্ষা করেছেন বলে কোনো প্রাণহানি হয়নি।

সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক নিজাম উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ৩ বছর থেকে ব্রিজ নেই। প্রথম বর্ষায় মানুষ নৌকা দিয়ে চলাফেরা করেছে। বর্তমান চেয়ারম্যান বিকল্প কাঠের ব্রিজ নির্মাণ করেছেন। কিন্তু যাত্রী নিয়ে গাড়ি পার হতে পারে না। যাত্রী নামিয়ে দিয়ে খালি গাড়ি পার করতে হয়।

মিলন মাঝি নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নিজের অর্থ দিয়ে একটা সেতু নির্মাণ করে দিলেও ভারি মালামাল আনা-নেওয়া করা যায় না। অনেকদিন থেকে শুনেছি ব্রিজটি হবে কিন্তু এখনো হচ্ছে না।

নিঝুম দ্বীপে ঘুরতে আসা পর্যটক সুজন ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, পরের বার আসব কি না বলা যায় না। ব্রিজ নেই, সড়ক নেই কীভাবে কি বুঝা যাচ্ছে না। রাস্তাঘাটের যে অবস্থা তাতে কেউ একবার এলে পরের বার আর আসবে বলে মনে হয় না।

নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল আফছার দিনাজ ঢাকা পোস্টকে বলেন, নিঝুম দ্বীপের ছোয়াখালী ব্রিজটি অতিরিক্ত স্রোতের কারণে ভেঙে গেছে। আমাদের এমপি আয়েশা ফেরদাউসের মাধ্যমে এখানে গার্ডার ব্রিজ নির্মাণের অনুমতি নেওয়া হয়েছে। অতি দ্রুত এটি টেন্ডার হবে।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুব মোর্শেদ লিটন বলেন, নিঝুম দ্বীপে বেড়িবাঁধ নেই। ফলে যেকোনো জোয়ারে পানি প্রবেশ করে রাস্তাঘাট ব্যাপকভাবে ক্ষতি হয়। বিশেষ করে ছোয়াখালী ব্রিজটি ভেঙে গেছে। মানুষ আপাতত কাঠের সেতুতে চলাচল করছে। আমরা বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বিভাগকে জানিয়েছি। আমাদের মাননীয় এমপি আয়েশা ফেরদাউস ও সাবেক এমপি মো. আলী বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছেন।

হাতিয়া উপজেলার প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ৩৯ মিটার দৈর্ঘ্যের ব্রিজটি নির্মাণের জন্য আমাদের অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। তবে আনন্দের বিষয় হচ্ছে ছোয়াখালী ব্রিজটি টেন্ডার পর্যায়ে আছে। এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে আমরা কাজের অর্ডার পাব।

হাসিব আল আমিন/এমজেইউ