সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থেকে দুই বন্ধু ফয়সাল ও মেহেদী এসেছেন গাজীপুরের টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা মাঠে। মুসল্লিদের অতিরিক্ত চাপে তাদের খিত্তায় না যেতে পারায় স্টেশন রোড-কামারপাড়া সড়কে বসেছেন তারা। সেখান থেকেই তারা ইজতেমার যাবতীয় কাজ করবেন। খাবেন হোটেলে।

আগামীকাল শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) ফজরের নামাজের পর থেকে তিন দিনের বিশ্ব ইজতেমা শুরু হচ্ছে। এর একদিন আগেই বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) সকালে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় পুরো ইজতেমা মাঠ। পৌষের হাড় কাঁপানো শীত উপেক্ষা করে দলে দলে মুসল্লিরা গত মঙ্গলবার থেকেই টঙ্গীর ইজতেমা মাঠে প্রবেশ করতে শুরু করেন। এই জনস্রোত আখেরি মোনাজাত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা। আয়োজকদের আশা এবার স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি মানুষের উপস্থিতি হবে ইজতেমায়। 

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থেকে আসা ফয়সাল আহমেদ জানান, শাহজাদপুর এলাকা থেকে ৩০ জনের জামাত বদ্ধ হয়ে একটি দল এসেছে ইজতেমায়। তারা নির্দিষ্ট খিত্তায় অবস্থান করছে। কিন্তু অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে আমরা সেখান পর্যন্ত পৌঁছতে পারিনি। তাই অন্যান্যদের দেখাদেখি আমরা সড়কের ওপর বসে পড়েছি।

পাশেই বসে জিকির করছেন নেত্রকোণার বাসিন্দা আব্দুস সামাদ। তিনি বলেন, আমার এলাকা থেকে একটি জামাত এসেছে। মোবাইলে চার্জ শেষ, অতিরিক্ত মুসল্লির কারণে আমি তাদের খুঁজে পাচ্ছি না। আমি তাদের খুঁজে না পেয়ে আপাতত সড়কে সামিয়ানা বিছিয়ে বসে জিকির করছি। কোথাও মোবাইল চার্জ দিয়ে জামাতের সদস্যদের সঙ্গে যোগযোগ করে খিত্তায় চলে যাব।
 
শুক্রবার বাদ ফজর মাওলানা জিয়াউল হকের আনুষ্ঠানিক আম বয়ানের মধ্য দিয়ে আলমি শূরার তত্ত্বাবধানে (জুবায়ের অনুসারী) মূল পর্বের আনুষ্ঠানিকতা শুরুর কথা থাকলেও একদিন আগেই বৃহস্পতিবার বাদ জোহর মাওলানা রবিউল হক ও বাদ আসর মাওলানা ফারুকের হেদায়াতি বয়ানের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। বাদ মাগরিব বয়ান করেন ভারতের আলেম আল্লামা ইব্রাহিম দেওলা। তার বয়ান অনুবাদ করেন মাওলানা জোবায়ের। এতে মহান আল্লাহর রাস্তায় সময় দেওয়া ও দাওয়াতে তাবলিগের বিভিন্ন গুরুত্ব তুলে ধরা হয়।

আয়োজক কমিটির মিডিয়া সমন্বয়ক মুফতি জহির ইবনে মুসলিম বলেন, বিশ্বের ৭০টি দেশের প্রায় চারহাজার বিদেশি মুসল্লি ইজতেমা মাঠে এসে পৌঁছেছেন। বৃহস্পতিবার পুরো মাঠ মুসল্লিতে পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আখেরি মোনাজাতের আগ পর্যন্ত মুসল্লিদের এই জনস্রোত অব্যাহত থাকবে। শুক্রবার জুমার নামাজকে ঘিরেও ঢাকা ও আশপাশের মুসল্লিরা অংশ নেবেন। 

তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে বয়ান শুরু হলেও শুক্রবার বাদ ফজর মাওলানা জিয়াউল হকের (পাকিস্তান) বয়ানের মাধ্যমে শুরু হবে মূল আনুষ্ঠানিকতা।

প্রসঙ্গত, তাবলিগ জামাতের নিজেদের মধ্যে বিরোধের কারণে এবারও বিশ্ব ইজতেমা দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীরা ইজতেমা পালন করবেন শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) থেকে। তাদের ইজতেমা চলবে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। আর সাদ কান্ধলভীর অনুসারীরা ইজতেমা করবেন জানুয়ারির ২০, ২১ ও ২২ তারিখে। সে হিসেবে এখন যারা মাঠে আছেন বা আসছেন তারা সবাই মাওলানা জুবায়েরপন্থি।

শিহাব খান/আরএআর