রাজবাড়ীতে তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে বোরো আবাদ ব্যাহত হচ্ছে। কুয়াশায় নষ্ট হচ্ছে বীজতলার চারা। এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বাড়তি টাকা খরচ করে চারা কিনে ধান চাষ করতে হবে বলে জানান কৃষকরা। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, বীজতলা রক্ষায় কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। শীত কমে আসলে কৃষকরা পুরোদমে বোরো আবাদ করতে পারবেন।

জানা গেছে, রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর, বরাট, রামকান্তপুর, দাদশী, পাচুরিয়া, গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম, ছোটভাকলা, বালিয়াকান্দি উপজেলার জামালপুর, নারুয়া ও কালোখালির উপজেলার রতনদিয়া, কালিকাপুরসহ বিভিন্ন স্থানে কুয়াশায় ও শৈত্যপ্রবাহে বোরো ধানের বীজতলার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সবুজ বীজতলা এখন ফ্যাকাশে, লালচে ও পচে নষ্ট হওয়ায় চরম লোকসানে পড়েছেন চাষিরা। কোনো কোনো স্থানে ধানের বীজ অঙ্কুরিত হওয়ার আগেই কুয়াশা ও শীতে পচে গেছে।

রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাজবাড়ীর ৫টি উপজেলার মধ্যে রাজবাড়ী সদর, পাংশা, গোয়ালন্দ, বালিয়াকান্দি ও কালুখালীতে বোরো ধানের আবাদের লক্ষে এ বছর ৫৩১ হেক্টর বীজতলা তৈরি করা হয়। কিন্তু টানা ১৮ দিন ঘন কুয়াশা ও শীতের তীব্রতায় এসব বীজতলার অধিকাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। এ বছর বীজতলা তৈরির লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩৬ হেক্টর বেশি বীজতলা তৈরি হয়েছে। যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৭৫ হেক্টর, সেখানে আবাদ বৃদ্ধি পেয়ে ৫৩১ হেক্টর আবাদ হয়েছে।

গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের তোরাপ শেখের পাড়া এলাকার বোরো ধান চাষি আজিজুল শেখ বলেন, অতিরিক্ত কুয়াশা ও শীতের কারণে তাদের বেশিরভাগ বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। এখন আর সময় নেই আবার বীজতলা তৈরি করে ধান আবাদ করার। এখন বেশি দামে চারা কিনে ধান আবাদ করা ছাড়া কোনো পথ নেই।

রাজবাড়ী সদর উপজেলার বরাট ইউনিয়নের কৃষক ফজলে করিম জানান, প্রচন্ড শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে কৃষক মাঠে নামতে পারছেন না। চারা রোপণের জন্য কৃষি শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। ঘন কুয়াশায় বীজতলার চারা নষ্ট হতে বসেছে। 

এছাড়াও জেলার বিভিন্ন উপজেলার একাধিক কৃষকরা বলছেন, ধানের বীজতলার অর্ধেক চারা শীত ও কুয়াশার কারণে মরে যাচ্ছে। কৃষকরা বীজতলা রক্ষার জন্য বিভিন্ন ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করছেন। কিন্তু তাতে তেমন কোনো ফল পাওয়া যাচ্ছে না। এরকম চলতে থাকলে বোরো ধান চাষ হুমকির মুখে পড়বে। কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এস এম সহীদ নুর আকবর বলেন, শীত ও কুয়াশার কারণে বোরোর বীজতলা বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। যদি এ রকম আবহাওয়া থাকে এবং বীজতলা বিবর্ণ হয়ে যায়, তাহলে প্রতি শতক বীজতলায় ৭ গ্রাম ইউরিয়া সার দিতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এরপরও যদি সমস্যা না কাটে, তাহলে প্রতি শতকে ১০ গ্রাম হারে জিপসাম সার দিলে চারা বিবর্ণ হওয়ার সমস্যা কেটে যাবে।

তিনি আরও বলেন, যেসব বীজতলায় দেরিতে বীজ বপন করা হয়েছে ওই সব চারা শীত ও কুয়াশায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে প্রতিদিন তিন-চার ঘণ্টা করে রোদ পাওয়া গেলে ক্ষতির পরিমাণ কমে আসবে।

মীর সামসুজ্জামান/এমজেইউ