দুই বিচারক ও নাজিরের অপসারণ চেয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চলমান আদালত বর্জন কর্মসূচি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আইনজীবীরা। বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) রাতে ঢাকায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে বৈঠকের পর এ তথ্য জানিয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি তানভীর ভূইয়া ও সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বাবুল।

এর আগে রাত সাড়ে ৯টায় আইনমন্ত্রীর বাসভবনে বৈঠকে বসেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইনজীবী সমিতির নেতারা। রাত ১১টা পর্যন্ত চলা এ বৈঠকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মমতাজ উদ্দিন ফকির এবং সাধারণ সম্পাদক আব্দুন নূর দুলাল উপস্থিত ছিলেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বাবুল মুঠোফোনে বলেন, আইনজীবীদের তিনটি দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে আগামী রোববার (১৫ জানুয়ারি) থেকে আইনজীবীরা আদালতে যাবেন। তবে জেলা ও দায়রা জজ শারমিন নিগার এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের বদলির আগ পর্যন্ত তাদের আদালত বর্জন অব্যাহত থাকবে। এছাড়া নাজিরকে দ্রুত সময়ের মধ্যে বদলি করা হবে বলে বৈঠকে জানানো হয়েছে।

আইনজীবী সমিতির সভাপতি তানভীর ভূইয়া বলেন, আগামী শনিবার (১৪ জানুয়ারি) আইনজীবী সমিতির সাধারণ সভা করে সকল আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করে আন্দোলন প্রত্যাহারের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, গত ১ ডিসেম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এ আইনজীবীরা মামলা দাখিল করতে গেলে বিচারক মোহাম্মদ ফারুক মামলা না নিয়ে আইনজীবীদের সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য এবং মিথ্যাচার করেন বলে অভিযোগ করেন আইনজীবীরা। এ ঘটনায় ২৬ ডিসেম্বর সমিতির সভা করে আইনজীবীরা ১ জানুয়ারি থেকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের আদালত বর্জনের ঘোষণা দেয়। এরপর জেলা ও দায়রা জজের ইন্ধনে আদালতের কর্মচারীরা গত ৪ জানুয়ারি আইনজীবীদের বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও কর্মবিরতি দিয়ে আইনজীবীদের সম্মানহানি করা হয়েছে অভিযোগ তুলে এবং আদালতের নাজির মোমিনুলের নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরে জাল স্ট্যাম্প ও কোর্ট ফি বাণিজ্য চলছে উল্লেখ করে তাদের তিনজনের অপসারণ দাবিতে তিন কার্যদিবস আদালত বর্জন কর্মসূচি দেয় আইনজীবী সমিতি। তবে দাবি আদায় না হওয়ায় দ্বিতীয় দফায় আরও তিন কার্যদিবস আদালত বর্জন করেন আইনজীবীরা। সর্বশেষ ১২ জানুয়ারি তৃতীয় দফায় আবারও তিন কার্যদিবস আদালত বর্জন কর্মসূচি ঘোষণা করে আইনজীবী সমিতি।

এদিকে, আইনজীবীদের আদালত বর্জনের কারণে বন্ধ হয়ে যায় বিচারিক কার্যক্রম। এতে ভোগান্তিতে পড়েন বিচারপ্রার্থীরা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ও দায়রা জজ আদালত এবং চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের এজলাসগুলোতে প্রতিদিন অন্তত দুই হাজার মামলার শুনানি হয় বলে জানিয়েছে আইনজীবী সমিতি।

বাহাদুর আলম/এমজেইউ