প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে বাগাড় মাছ

দেখতে বিশাল আকৃতির মাছ। একেকটার ওজন ৮০ থেকে ১০০ কেজি। দামও আকাশচুম্বী। এই মাছটির নাম বাগাড় বা দানব বাঘাইড়। বন্যপ্রাণী আইন অনুযায়ী এই মাছ শিকার ও বিক্রি নিষিদ্ধ থাকলেও তা মানছে না কেউ। বরং মাছ ব্যবসায়ীরা প্রকাশ্যে অবাধে দাম হাঁকিয়ে বিক্রি করছেন এই মাছ।

শনিবার (১৪ জানুয়ারি) মৌলভীবাজারের শেরপুরে কুশিয়ারা নদীর পাড়ে দেড়শ বছরের ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলায় এমনি দৃশ্য চোখে পড়ে। করোনার কারণে দুই বছর পর এই মেলা আবারও পুরোনো রুপে ফিরে এসেছে। প্রতি বছর ১৩ জানুয়ারি রাতে পৌষ সংক্রান্তি ও নবান্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে আয়োজন করা হয় এই মেলার। 

মেলায় একটি বাগাড় মাছের দাম হাঁকানো হয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। মাছ নিয়ে আসা বিক্রেতা ইব্রাহিম বলেন, এ বছর ৫০ লাখ টাকার মাছ নিয়ে মাছের মেলায় এসেছি। এই বাগাড় মাছটি পদ্মা নদীর মাছ। ৮০ কেজি ওজনের মাছটি ২ লাখ টাকায় বিক্রি করতে চাই। 

শেরপুর মাছের মেলায় ৩০টির বেশি ছোট-বড় বাগাড় মাছ উঠেছে। যেগুলো বিক্রি হচ্ছে আকাশচুম্বী মূল্যে। বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ এর আওতায় বাগাড় মাছ শিকার ও বিক্রি নিষিদ্ধ। কেউ তা অমান্য করলে এক বছর সশ্রম কারাদণ্ড অথবা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডও হতে পারে। দেশের যেকোনো প্রান্তে, মেলায় বা বাজারে  বাগাড় বিক্রি ঠেকাতে স্থানীয় প্রশাসন আগে থেকেই এই উদ্যোগ নিলেও মানছে না কেউ। একইভাবে মৌলভীবাজারেও এমন কোনো উদ্যোগের দেখা মেলেনি। 

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ফাহমিদা সুলতানা ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাগাড় মাছ বিলুপ্তের পথে। আইন করে এটির শিকার ও বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।  এই আইন প্রয়োগের দায়িত্বে যারা আছেন তাদেরকেও আরেকটু সচেতন হওয়া প্রয়োজন। হয়ত প্রথমদিকে কিছু কষ্টকর হলেও পরে সুধূর প্রসারী ফল পাওয়া যাবে। জাটকা ইলিশের মতো এই মাছের শিকার ও বিক্রি অনেকটা বন্ধ করা যাবে। সেই ক্ষেত্রে সচেতনতার পাশাপাশি যারা সরকারের পক্ষ থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত তাদেরকেও এগিয়ে আসতে হবে।

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, উৎসব উপলক্ষে মানুষ না বুঝে এটি ধরে এবং খায়। এটি অনেকদিন ধরে চলতে থাকায় একটি ট্রেন্ড চালু হয়ে গেছে। আমাদের পক্ষ থেকে মাছ বাজারে মাইকিং ও প্রচার কাজ করছি মানুষকে সচেতন করতে। গত বছরও জেল জরিমানা করেছি। আশাকরি এভাবে মানুষ সচেতন হলে এক দুই বছরের মধ্যে এটি আর শিকার ও বিক্রি হবে না। 

মৌলভীবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মুহম্মদ মিজানুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি আমার কর্মকর্তাকে বলে দিচ্ছি এই বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে। আইনে নিষিদ্ধ থাকলে এই মাছ কোনোভাবেই বাজারে বিক্রি করা যাবে না। 

ওমর ফারুক নাঈম/আরকে