‘ঘুম বিরোধী অ্যালার্ম’

গাড়ি চালানোর সময় চালক ঘুমিয়ে পড়ায় ঘটে যায় ভয়াবহ দুর্ঘটনা। তবে চোখে একটি বিশেষ চশমা পড়ে গাড়ি চালালে চালক চাইলেও ঘুমাতে পারবে না। শুনতে অবাক লাগলেও এমন একটি চশমা তৈরি করেছে দুই শিক্ষার্থী।

চশমাটি রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত বিসিএসআইআর বিজ্ঞান ও শিল্প-প্রযুক্তি মেলায়ও স্থান পেয়েছে। ঘুম তাড়ানো চশমাটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘Anti Sleeping Alarm’ বা ‘ঘুম বিরোধী অ্যালার্ম’। এটি মূলত যানবাহনের চালকদের জন্য তৈরি করা হয়েছে। গাড়ি চালানোর সময়ে চালকের ঘুমের কারণে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনা রোধে এটি সাহায্য করবে। 

এই ‘ঘুম বিরোধী অ্যালার্ম’ চশমাটি তৈরি করেছে রাজশাহীর বিসিএসআইআর ল্যাবরেটরি উচ্চ বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী। তারা হলেন- ১০ম শ্রেণির আরবি হক নিরব ও ৭ম শ্রেণির আতিয়া আহসান ফাইজা। দীর্ঘ ১৫ দিনের চেষ্টায় এমন একটি চশমা তৈরি করতে সফল হয়েছে তারা। চশমাটি তৈরিতে খরচ তাদের পড়েছে মাত্র ৮০০ টাকা।

নিরব ও ফাইজা জানায়, ঘুম বিরোধী অ্যালার্ম’ তৈরিতে লেগেছে ব্লুটুথ টাইপ ব্যাটারি, ইউএসবি চার্জার, আইআর ফটোডায়ার অবস্ট্রাকল মোডিউল, পিজো বাজার, ট্রানজিস্টার, ক্যাপাসিটার ও রেসটেন্স। অবস্টাকল মোডিউল যখন কোন বাধা পাবে, সেই সময় পিজো বাজারে ভোল্টেজ পাঠাবে এবং শব্দ হতে থাকবে। ট্রানজিস্টার ক্যাপসিটারের কারণে অল্পক্ষণ পরে শব্দ হবে।

শিক্ষার্থী আতিয়া আহসান ফাইজা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘এটা মূলত ডাইভারদের (চালক) জন্য বানিয়েছি। আমাদের দেশের বেশিরভাগ দুর্ঘটনাগুলো ঘটে ডাইভারদের অসচেতনতা ও ঘুমের কারণে। মাঝে মাঝে তারা ওভার টাইম ডিউটি করে। এক জায়গা থেকে গাড়ি চালিয়ে আসার পর আবার তাকে পাঠানো হয় আরেক জায়গায়। এক্ষেত্রে বেশি টাকা বা মালিকের চাপ থাকে। এমন সময় তাদের ঘুম ধরাটা স্বাভাবিক। যে এক জায়গা থেকে কাজ করে এসে ক্লান্ত। কিন্তু চালক ঘুমালে তো এক্সিডেন্ট (সড়ক দুর্ঘটনা) হয়ে যাবে। সেই দুর্ঘটনা রোধে সহযোগী হিসেবে আমরা একটা চশমা তৈরি করেছি।’

বিসিএসআইআর ল্যাবরেটরি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা

তিনি ঢাকা পোস্টকে আরও বলেন, ‘সেই চশমাটি চালককে জেগে থাকতে সাহয্য করবে। চালকের চোখের পাতা যখন দুই সেকেন্ডের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে, তখন চশমাটির অ্যালার্ম বেজে উঠবে। আর চালক জেগে যাবে। তাহলে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকবে না। এটি তৈরি করতে প্রায় এক হাজার টাকা খরচ হবে।’

শিক্ষার্থী আরবি হক নিরব ঢাকা পোস্টকে বলেন, চালকরা ঘুমিয়ে গেলে বেশিরভাগ এক্সিডেন্ট (সড়ক দুর্ঘটনা) হয়। এই এক্সিডেন্ট (সড়ক দুর্ঘটনা) থেকে রক্ষা পেতে চালক চশমা চোখে দিয়ে থাকবে। এরপর গাড়ি চালাবে। চালক যখনই তার চোখ বন্ধ করবে সঙ্গে সঙ্গে চশমার পাশ থেকে অ্যালার্ম বেজে উঠবে। এটার সময় দুই সেকেন্ড দেওয়া না হলে চোখের পলক ফেললেও বেজে উঠত। তাই দুই সেকেন্ড সময় দেওয়া হয়েছে। যদি এই অ্যালার্মেও চালকের ঘুম না ভাঙে। তবে খুব কাছে থাকা তার সহযোগী বা হেলপার অ্যালার্মের শব্দে বুঝতে পারবে চালক ঘুমিয়ে গেছে। তখন তিনি দ্রুত চালককে জাগাতে পারবেন। এর ফলে দুর্ঘটনা থেকে আমরা বেঁচে যেতে পারি।

রাজশাহীর বিসিএসআইআর ল্যাবরেটরি উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক আবদুল জলিল ঢাকা পোস্টকে জানান, প্রতিবছরই বিসিএসআইআর বিজ্ঞান ও শিল্প-প্রযুক্তি মেলা হয়ে থাকে। এখানে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। আমাদের শিক্ষপ্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের তৈরিকৃত বিভিন্ন জিনিস মেলায় প্রতিবছর স্থান পায়। তবে এ বছর শিক্ষার্থীরা একটি ‘Anti Sleeping Alarm’ বা ‘ঘুম বিরোধী অ্যালার্ম’ চশমা তৈরি করেছে। এই চশমাটা মেলায় সবার মধ্যে বেশ সারা ফেলেছে।  

রাজশাহী সড়ক পরিবহন গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মতিউল হক টিটো ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাত ৩টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত যে দুর্ঘটনাগুলো ঘটে তার ৯০ শতাংশ চালকের ঘুমের কারণে ঘটে। মুখোমুখি সংঘর্ষ বা সড়কে থেকে গাড়ি ডানে-বামের গর্তের নেমে যাওয়ার মতো ঘটনাগুলোও ঘুমের কারণে হয়ে থাকে।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান ঢাকা পোস্টকে জানান, ঘুমিয়ে গেলে বা চালকের ঘুমের কারণে দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। তবে ঘুমের কারণে কতগুলো দুর্ঘটনা ঘটেছে সেটি বলা মুশকিল। 

আরকে