নতুন প্রজন্মের সামনে ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে যশোরের মনিরামপুরের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে অনুষ্ঠিত হয়েছে ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা। এ লাঠিখেলায় অংশ নিয়েছে নড়াইল থেকে আগত ৬ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশু ও কিশোর-কিশোরীরা। দীর্ঘদিন পর বিলুপ্তপ্রায় এ খেলা দেখে উচ্ছ্বসিত গ্রামবাংলার মানুষেরা।

যশোরের সেচ্ছাসেবী সংগঠন 'ঐক্য বন্ধন' এর চতুর্থ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সোমবার (১৬ জানুয়ারি) বিকেলে মনিরামপুরের পলাশী স্কুল মাঠ প্রাঙ্গণে আয়োজন করা হয় এ লাঠিখেলার। 

নড়াইল থেকে আগত বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ লাঠিখেলা ও সাংস্কৃতিক দলের ২৫ জন শিশু ও কিশোর-কিশোরীরা এ লাঠিখেলা প্রদর্শন করেন। খেলায় ঢাকের তালে তালে শারীরিক কসরত দেখান ক্ষুদে খেলোয়াড়রা। প্রথমে ঢাকের তালে নৃত্য এরপর চোখ ধাঁধানো লাঠিতে লাঠি দিয়ে তালে তালে আঘাতের দৃশ্য দেখে আনন্দে উচ্ছাসিত হয়ে পড়েন গ্রামবাসী। গ্রামের ছোট ও বৃদ্ধসহ নানা বয়সী মানুষেরা এ লাঠিখেলা দেখতে স্কুল মাঠে ভিড় করেন। 

লাঠিখেলা দলের সরদার মোহাম্মদ বাচ্চু মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগের মতো এখন আর খেলার আয়োজন হয় না। তবে ইদানিং আয়োজনের সংখ্যাটা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই হারিয়ে যাওয়া লাঠিখেলার আয়োজন হলে যেমন এটি আবারও নতুন প্রজন্মের কাছে উঠে আসবে তেমনি এ খেলা দেখিয়ে যাদের জীবিকা চলে তাদেরও ভালো সময় যাবে। 

পলাশী গ্রামের বয়োবৃদ্ধ আকবর হোসেন বলেন, আমাদের বাপ দাদারা আগে প্রতি মাসে গ্রামগঞ্জে এ লাঠিখেলার আয়োজন করতো। শেষ কবে এ খেলা দেখেছি তাও মনে নেই। তবে বেঁচে থাকতে নিজ গ্রামে আবারও এ মনোমুগ্ধকর লাঠিখেলা দেখতে পারবো তা কোনোদিন ভাবতে পারিনি।

একই গ্রামের নীলা খাতুন বলেন, গ্রামে লাঠিখেলা হবে শুনে যশোর থেকে গ্রামের বাড়িতে চলে এসেছি। পরিবারসহ বাচ্চাদের নিয়ে লাঠিখেলা দেখে অনেক ভালো লেগেছে। এই প্রথম এমন খেলা দেখলাম। এর আগে ইউটিউবে ফেসবুকে দেখেছি। ইউটিউবে দেখা আর বাস্তবে দেখা আকাশ-পাতাল তফাৎ। 

অনুষ্ঠানের আয়োজক ঐক্য বন্ধন সংগঠনের সভাপতি মাহমুদ হাসান সোহাগ বলেন, ঐক্য বন্ধনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আমরা গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া খেলাগুলোর আয়োজন করেছি। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা। এ লাঠিখেলা দেখে গ্রামের মানুষ খুব আনন্দিত। পর্যায়ক্রমে এমন আয়োজন হলে যুব সমাজকে মাদক থেকে দূরে রাখা যাবে যেমন, তেমনি ঐতিহ্যগুলো টিকে থাকবে। 

এ্যান্টনি দাস অপু/আরকে