নোয়াখালীর সদর উপজেলায় বীর নিবাস নির্মাণে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে নিম্নমানের ইট, বালু ও সিমেন্ট ব্যবহার করার অভিযোগ করে এক প্রকার ঘরবন্দী হয়ে আছেন শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলামের পরিবার।

জানা যায়, নোয়াখালীর সদর উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের বিনোদপুর গ্রামে বীর নিবাস নির্মাণের দায়িত্ব পান ঠিকাদার মো. রাসেল। সরকারি কাজ ভালো হবে না উল্লেখ করে ঠিকাদার রাসেল উন্নতমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলামের মেয়ে জান্নাতুল ফেরদাউসের কাছে এক লাখ টাকা দাবি করেন। এসময় ৬০ হাজার টাকা দেওয়ার চুক্তি হলে কাজের শুরুতে ৩০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়। এরপর ছাদ ঢালাই শেষে বাকি ৩০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা হয়। কিন্তু নির্মাণকাজে নিম্নমানের ইট, বালু ও সিমেন্ট ব্যবহার করায় অভিযোগ করায় ঠিকাদার রাসেল মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। এরপর থেকে ভয়ে এক প্রকার ঘরবন্দী মুক্তিযোদ্ধা পরিবারটি। এ ঘটনায় গত বুধবার (১৮ জানুয়ারি) শহীদ মুক্তিযোদ্ধার মেয়ে জান্নাতুল ফেরদাউস উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর অভিযোগ দায়ের করেন।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে ‘অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসন নির্মাণ’ প্রকল্পের আওতায় বীর নিবাস নির্মাণকাজ চলছে। এতে নোয়াখালীর সদর উপজেলায় ১০২টি বীর নিবাস নির্মিত হচ্ছে। প্রায় ৪ শতাংশ জমির ওপর নির্মিত প্রতিটি ভবন নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪ লাখ ১০ হাজার টাকা। বীর নিবাসে দুটি শোবার ঘর, একটি রান্নাঘর, একটি খাবার ঘর ও দুটি বাথরুম থাকছে। এর মধ্যে নয়টি বীর নিবাসের নির্মাণকাজ করছেন মেসার্স রাসেল ট্রেডার্সের সত্ত্বাধিকারী ঠিকাদার মো. রাসেল।

শহীদ মুক্তিযোদ্ধার মেয়ে জান্নাতুল ফেরদাউস ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার বাবা শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলামকে একটি ঘর উপহার দিয়েছেন। সেই ঘরের কাজ ভালোভাবে করবেন বলে ঠিকাদার রাসেল আমার কাছে এক লাখ টাকা দাবি করেন। আমি ৬০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা বলি। প্রথমে ৩০ হাজার টাকা দিয়েছি এবং বাকি টাকা ছাদ ঢালাইয়ের পর দেওয়ার কথা। কিন্তু তিনি নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করায় আমার সন্তান অভিযোগ করায় তিনি আমাদের দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। ফলে ভয়ে আমরা কেউ বাড়ি থেকে বের হই না। এ বিষয়ে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

জান্নাতুল ফেরদাউসের ছেলে আমির হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, খুবই নিম্নমানের ইট, সিমেন্ট ও বালু ব্যবহার করেছেন। ১০ বস্তা বালুর মধ্যে এক বস্তা সিমেন্ট দিয়ে কাজ করেছেন। ঠিকাদার রাসেল নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নিজের মতো কাজ করেছেন। এ বিষয়ে প্রতিবাদ করায় তিনি উল্টো আমাদের হুমকি দিয়েছেন।

জান্নাতুল ফেরদাউসের আরেক ছেলে ইকবাল হোসেন বলেন, আমরা চার ভাই। সবাই ভয়ে ঘরবন্দী হয়ে আছি। ঠিকাদারের ভয়ে এলাকার কেউ আমাদের সঙ্গে কথা বলে না।

এ বিষয়ে জানতে ঠিকাদার মো. রাসেলের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, নিয়ম অনুযায়ী বীর নিবাস নির্মাণ করা হচ্ছে। তারা অভিযোগ করায় বর্তমানে কাজ বন্ধ আছে। তবে তাদের অভিযোগ সত্য নয়। আমি কোনো টাকা নিইনি।

এই প্রতিবেদকের সঙ্গে দেখা করে বিস্তারিত জানাবেন বলে জানান ঠিকাদার মো. রাসেল।

এই বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাসেল সরকারি নিয়ম অনুযায়ী কাজ করছেন। হয়তো ঠিকাদারের সঙ্গে তাদের ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে। তবে যদি টাকা নেওয়ার অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায় তাহলে তার কাজের আদেশ বাতিল করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিজাম উদ্দিন আহমেদ অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, অভিযোগ তদন্তের জন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত নির্মাণকাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। নির্মাণসামগ্রী পরীক্ষা করে যদি নিম্নমানের পাওয়া যায় তাহলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

হাসিব আল আমিন/এমজেইউ