সুনামগঞ্জের হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ শুরুর নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও অধিকাংশ প্রকল্পে এখনো কাজ শুরু হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী ডিসেম্বরের ১৫ তারিখের মধ্যে শুরু করে ২৮ ফেবব্রুয়ারির মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও এখনো নির্মাণকাজ শুরু হয়নি অর্ধেক সংখ্যক বাঁধে।

এতে সময় মতো ফসল ঘরে তোলা নিয়ে আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। ক্ষোভ জানিয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন কৃষক নেতারা। তবে হাওরের পানি সময়মতো না কমার কারণে সঠিক সময়ে কাজ শুরু করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কাজ শুরু করতে বিলম্ব হলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ হবে বলে জানান পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী।

সুনামগঞ্জের অধিকাংশ মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। এ জেলার অধিকাংশ মানুষের ভাগ্য নির্ভর করে হাওরের বোরো ধানের ওপর। ২০১৭ সালে আগাম বন্যায় শতভাগ ফসল হানির পর ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে নতুন নীতিমালা গঠন করে সরকার। যেখানে ঠিকাদারি প্রথা বাদ দিয়ে স্থানীয় কৃষকদের অন্তর্ভুক্ত করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পিআইসির মাধ্যমে বাঁধ নির্মাণের নিয়ম করা হয়। এই নিয়ম অনুযায়ী এবার সুনামগঞ্জের ফসল রক্ষায় ১ হাজার ৮৯টি প্রকল্পের মাধ্যমে ২০৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ হবে ৭৫৪ কিলোমিটার বাঁধ। নীতিমালা অনুযায়ী ডিসেম্বর মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে প্রত্যেকটি প্রকল্পের কাজ শুরু করে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাঁধ নির্মাণকাজ শেষের বাধ্যবাধকতা থাকলেও নির্ধারিত সময়ের পেরোনোর পর কাজ শুরু হয়েছে মাত্র ৪২৮টিতে। বেশিরভাগ বাঁধের কাজ এখনো শুরু হয়নি। অনেক জায়গায় বাঁধ নির্মাণের কমিটি পর্যন্ত গঠন করা হয়নি। যেখানে বাঁধ নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে সেখানেও ধীর গতিতে এগোচ্ছে। 

যার কারণে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে বাঁধের কাজ শেষ হওয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা। স্থানীয় কৃষকদের দাবি, বাঁধ নির্মাণকাজ শুরুর এক মাসের বেশি সময় পার হয়ে গেলেও কাজ শুরু না হওয়ায় শঙ্কিত তারা। দেরিতে বাঁধ নির্মাণ হলে পানির প্রথম ধাক্কায় বাঁধ ভেঙে যায়।

তাহিরপুরের মারালা গ্রামের কৃষক সবুজ মিয়া বলেন, হাওরের ওপর নির্ভর করি আমরা। বাঁধের ওপর হাওর নির্ভর করে। ধান না তুলতে পারলে আমাদের বাঁচা-মরা সমান। হাওরে বাঁধের কাজ এখনো শুরু হয়নি। অন্যান্য বছর আরও আগেই বাঁধের কাজ শুরু হয়েছিল। 

একই গ্রামের কৃষক হুমায়ুন কবির বলেন, কয়দিন পরেই পানি আসবে। পিআইসিরা এখনো কাজই শুরু করেনি আমরা কীভাবে বন্যা থেকে বাঁচব। পাহাড়ি ঢল শুরু হলেই আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হব। 

নয়গাঁওয়ের হযরত আলী বলেন, আমরা চাই বাঁধটা সুন্দর হক। তারা কী করে, চাকা মাটি এনে বাঁধ নির্মাণ করে। যার কারণে বাঁধে ফাঁকা থেকে যায়। পানি আসলেই ফাঁক দিয়ে পানি ঢোকে আর বাঁধ ভেঙে যায়। বাঁধে মাটি যেন গুঁড়ো করে দেওয়া হয়। 

কৃষকদের পাশাপাশি ক্ষোভ জানিয়েছেন হাওর বাঁচাও আন্দোলন সুনামগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল হক মিলন। তিনি বলেন, হাওর নিয়ে আমরা শঙ্কিত। এক মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও অনেক বাঁধের কাজ শুরু হয়নি। যেসব হাওরে কাজ শুরু হয়েছে সেখানে মন্থর গতিতে চলছে। পানির জন্য কাজ করা যাচ্ছে না এই কথাটা ঠিক না। শেষ সময়ে কাজ শুরু করে পুরো টাকা গ্রাসের চেষ্টা চলছে। বাঁধের কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করার দাবিতে আমরা মানবন্ধনসহ আন্দোলন কর্মসূচি গ্রহণ করেছি।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার বলেন, চলতি অর্থ বছরে ৭৫৪ কিলোমিটার বাঁধের কাজ করা হচ্ছে। এক হাজার ৮৯টি প্রকল্পের মধ্যে ৪২৮টি পিআইসির কাজ শুরু হয়েছে। হাওরের পানি নামতে দেরি হওয়ায় বাঁধের সার্ভে করতে দেরি হয়েছিল তাই বাঁধের কাজে কিছু বিলম্ব হয়েছে। এখন কাজ চলমান রয়েছে। আশা করছি ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাজ শেষ করতে পারব।

হাওরের একমাত্র বোরো ফসল রক্ষায় দ্রুত বাঁধের কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন হবে এবং নিশ্চিন্তে ধান ঘরে তুলতে পারবেন এমন প্রত্যাশা করছেন সুনামগঞ্জের কৃষকদের।

সোহানুর রহমান সোহান/আরকে