ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় দুই কৃষক সমিতির দ্বন্দ্বে চার দশক ধরে চলা একটি মাত্র সেচ পাম্প বন্ধ রয়েছে। এ কারণে ১০০ একর জমি পতিত হয়ে পড়েছে। এতে দিশেহারা উপজেলার ঘোগা ইউনিয়নের কাকীনাটি গ্রামের প্রায় দুই শতাধিক কৃষক। দ্রুত এ সমস্যা সমাধানে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করে সোমবার (২৩ জানুয়ারি) ফসলের মাঠেই মানববন্ধন করেছেন কৃষকরা। 

জানা গেছে, উপজেলার ঘোগা ইউনিয়নের কাকীনাটি গ্রামে ১৯৭৯ সালে ১৩ জন সদস্য মিলে সেচ পাম্পটি স্থাপন করেছিলেন। সেচ পাম্প বিএডিসির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। কাকীনাটি কৃষক সমবায় সমিতি ‘এক’ এবং ‘দুই’ দুটি গ্রুপে বিভক্ত। দুই নম্বর পক্ষ এটি স্থাপনে উদ্যোক্তা হলেও পরবর্তীতে সেখানে এক নম্বর সমিতি যুক্ত হয়। দুই পক্ষের লোকজন মিলেই চার দশক ধরে চালাচ্ছিলেন সেচ পাম্প। কিন্তু ২০১৫ সালে সেচ পাম্পের নামে বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়া নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। 

দ্বিতীয়পক্ষের মো. বুলবুল সোহরাওয়ার্দী সমিতির সদস্যদের সম্মতি নিয়ে নিজের নামে বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়ার জন্য আবেদন করলেও সেচ সংযোগ নিয়ে নেন স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আবু তাহের। গত বছর থেকে সেচ পাম্পে পানি কম উঠায় দুই পক্ষ মিলে মেশিনটি সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেয়। সেই মোতাবেক গত ৭ জানুয়ারি নলকূপের যন্ত্রাংশ খোলা হয়। খুলে ফেলা হয় বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমারও। 

এ ঘটনায় গত ২২ ডিসেম্বর কৃষক সমবায় সমতির পক্ষ থেকে মো. বুলবুল সোহরাওয়ার্দী গভীর নলকূপ স্থানান্তর না করার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে আবেদন করেন। কিন্তু সেই আবেদনের কোনো অগ্রগতি না হলেও মেশিন সংস্কার না করে পুরোনো পাম্পের একশ গজ দূরে নতুন করে পাম্প স্থাপনের কাজ শুরু করে মো. আবু তাহেরের লোকজন। 

গত ১৭ জানুয়ারি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে সেচ পাম্পটি নিজ খরচে মেরামত ও পুনঃখননের জন্য আবেদন করে অনুমোদন না নিয়েই নতুন করে খনন শুরু করে দিয়েছেন। এ নিয়ে দু’পক্ষের লোকজনের মধ্যে শুরু হয়েছে উত্তেজনা। 

সোমবার সেচ পাম্প নিয়ে জটিলতা নিরসন করে দ্রুত সেচের ব্যবস্থার দাবিতে ফসলের মাঠে সোমবার মানববন্ধন করেছেন সেখানকার শতাধিক কৃষক। তারা জানান, জমিতে ধান চাষ না করতে পারলে অনেক পরিবারকে না খেয়ে মরতে হবে। দ্রুত সেচের সমস্যা সমাধান চান তারা। 

অন্যদিকে, সেচ পাম্পের একটি পক্ষ আবু তাহেরের হয়ে এলাকায় নেতৃত্ব দেন জামাল উদ্দিন। জামাল উদ্দিন নিজেকে মাঠ ম্যানেজার পরিচয় দিয়ে বলেন, বিদ্যুৎ বিল অনেক বকেয়া থাকায় তারা সেই টাকা জমা দিয়ে ট্রান্সফরমার খুলে নিজের বাড়িতে নিয়ে রেখেছেন। সবার সঙ্গে কথা বলেই মেশিন খোলা হয়েছে। আগের পাম্প ৮০ ফুট গভীর হওয়ায় এখন আর পানি ঠিক মতো যাওয়া যায় না। সেই কারণে নতুন করে গভীর না করলে জমিতে ফসল করা যাবে না। 

২নং কাকীনাটি কৃষক সমবায় সমিতির সভাপতি মো. বুলবুল সোহরাওয়ার্দী বলেন, পাম্প মেরামতের জন্য খোলা হলেও পরবর্তীতে আর সেটি স্থাপন না করার কথা তাদের জানানো হয়। এ নিয়ে সালিশ করলে প্রতিপক্ষরা জানায় তারা তাদের জিনিস নিয়ে গেছে। এখন একটি পাম্পের কাছেই আরেকটি পাম্প অবৈধভাবে স্থাপনের চেষ্টা করছে। যার কারণে কৃষকরা এবার ফসল আবাদ করতে পারছে না। 
    
মুক্তাগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার একেএম লুৎফর রহমান বলেন, সেচপাম্পটি পুনঃস্থাপনের জন্য আবেদন করা হলেও তাতে যে সকলের সম্মতি নেই, সেটি আমার জানা ছিল না। দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলে কীভাবে সমাধান করা যায় তার চেষ্টা করা হবে।

উবায়দুল হক/এমএএস