বরিশালের বাবুগঞ্জে আব্দুল হালিম নামে এক বীর মুক্তিযোদ্ধার জমির ওপর দিয়ে সরকারি ড্রেন নির্মাণে বাধা দেওয়ায় তাকে গালিগালাজ ও স্ত্রীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুসরাত ফাতিমার বিরুদ্ধে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের সময় প্রতিপক্ষ ইউপি সদস্য মোসলেম উদ্দীনের লোকজন ঘর থেকে দলিল ও স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে গেছে।

মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) দুপুরে বরিশাল প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হালিম ও তার স্ত্রী নাসিমা বেগম।

নাসিমা বেগম বলেন, উদ্দেশ্যমূলকভাবে ইউএনও নুসরাত ফাতিমা মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ওপর নির্যাতন করছেন। তিনি উচ্ছেদের কোনো নোটিশ দেননি। আমাদের কোনো বক্তব্য শোনেননি। আমরা অন্যের মুখে শুনে সেখানে উপস্থিত ছিলাম। সোমবার তিনি ঘটনাস্থলে পৌঁছে আমাকে এবং আমার স্বামী বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হালিমকে একটি রুমে আটকে রাখেন। তার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে আমার কক্ষের সামনে তিনি আমাকে মারধর করেন। আমাকে টানাহেঁচরা করে ছাদে নিয়ে যেতে চেয়েছেন। ইউএনও আমাকে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘তোর পক্ষে কেউ নাই। আমি যা বলবো সেটাই হবে। তোকে ছাদ থেকে ফেলে দিব। দেখবি পেপার-পত্রিকায় আমার কথাই বলবে। আমি এখানে এসেছি ক্ষমতা নিয়ে।’

আমি ইউএনওর কাছে হাতজোড় করে অনুরোধ করছিলাম। আমার স্বামীও অনুরোধ করছিলেন। তখন ইউএনও আমার স্বামীকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেন। তিনি আমার দুই ছেলেকে জিম্মি করে কারাগারে পাঠিয়েছেন। আমার নিজের জমির ওপর দিয়ে মেম্বারের (ইউপি সদস্য) প্ররোচনায় ড্রেন নির্মাণ করেছেন। নির্বাচনে মেম্বারের পক্ষে কাজ না করায় তার চক্রান্তের শিকার হয়েছি। আমি আমার পরিবারকে নির্যাতনের বিচার চাই। আমার যে ক্ষতি করেছে এবং আমার ছেলেদের অনৈতিকভাবে জেল দিয়েছে এর বিচার প্রধানমন্ত্রীর কাছে চাই।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হালিম বলেন, ৯ মাস যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। যে দেশের জন্য লড়াই করলাম সেই দেশের ইউএনও আমাকে অসম্মান করেছেন। তুই-তোকারি-গালিগালাজ করেছেন। আমাকে ইউএনও বলেন, ‘তুই বেশি কথা বললে তোকে এখান থেকেই চালান (জেলে) করে দিব।’ আমার তিন ছেলেকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল। এর মধ্যে দুইজনকে তিন মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে। আর এক ছেলে পুলিশে চাকরি করে। তাকে ছেড়ে দিয়েছে। সরকারের কাছে আমার অনুরোধ, একজন মুক্তিযোদ্ধা ও তার পরিবারকে যে নির্যাতন করা হয়েছে তার সুষ্ঠু বিচার প্রধানমন্ত্রী করবেন।

এদিকে মুক্তিযোদ্ধার বাসায় ঢুকে তার স্ত্রীকে মারধরের একটি ভিডিওচিত্র বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ১২ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, মুক্তিযোদ্ধার বাসার মধ্যে দরজা থেকে বোরকা ও চশমা পরিহিত এক নারীকে ধাক্কা দিচ্ছেন নুসরাত ফাতিমা।

মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী নাসিমা বেগম জানিয়েছেন, তাকে মারধরের চিত্র সেটি।

যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুসরাত ফাতিমা। তিনি বলেন, সংবাদ সসেম্মলনে যে দাবি করা হয়েছে তার প্রত্যেকটি কথাই মিথ্যা। এ ধরনের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। এমন কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি যে ওনার গায়ে আমি হাত তুলবো। তাছাড়া পরিবারের বাইরের কেউ না কেউ সাক্ষী থাকবেন বা ভিডিও ফুটেজ থাকবে। কেউ যদি প্রমাণ দিতে পারেন তাহলে আমি কিছুটা দায়ভার নিব।

আপনি (ইউএনও) বোরকা ও চশমা পরিহিত নাসিমা বেগমকে ধাক্কা দিচ্ছেন- এমন ১২ সেকেন্ডের ভিডিওচিত্রের বিষয়ে জানতে চাইলে নুসরাত ফাতিমা দাবি করেন, ঠিক মনে করতে পারছি না। হতে পারে রাগ করে বলছি, ভেতরে ঢুকেন কথা বলবো। এটিও হতে পারে। যাই বলবো, আপনি (প্রতিবেদক) কি নিউজ ছাপাবেন সেটি আপনার বিষয়।

তিনি ঢাকা পোস্টের পূর্বের প্রকাশিত সংবাদের প্রসঙ্গ তুলে বলেন, আমি কোনো মুক্তিযোদ্ধার ছেলেকে কারাদণ্ড দেইনি। দুইজন অপদখলকারীকে কারাদণ্ড দিয়েছি। সন্ত্রাসী, বোমাবাজদের কারাদণ্ড দিয়েছি।    

প্রসঙ্গত, সোমবার (২৩ জানুয়ারি) বাবুগঞ্জের চাঁদপাশা ইউনিয়নের আরজী কালিকাপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হালিমের জমির ওপর দিয়ে সেচ প্রকল্পের ড্রেন নির্মাণে পরিবার বাধা দিলে তার দুই ছেলেকে তিন মাসের কারাদণ্ড দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুসরাত ফাতিমা।

এর আগে মা ইলিশ রক্ষা অভিযানে গিয়ে ২০২২ সালের ১৩ অক্টোবর সঙ্গে থাকা ট্রলারের মাঝি আনোয়ার হোসেন কথা না শোনায় তার ট্রলারে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেন নুসরাত ফাতিমা। বিতর্কিত এই কর্মকাণ্ডের পর যদিও ইউএনও দাবি করেছিলেন দুর্ঘটনাবশত ট্রলারে আগুন লেগে গিয়েছিল। তবে বাবুগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাবুবুর রহমান নিশ্চিত করেন ইউএনওর নির্দেশে পোড়ানো হয় আনোয়ার হোসেনের ট্রলার।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর