রংপুর মহানগরীতে গড়ে উঠেছে গরুর আবাসিক হোটেল। ব্যতিক্রমধর্মী এই আবাসিক হোটেল ইতোমধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অল্প খরচে নিরাপদ নিরাপত্তা বলয়ে গরুর পাশাপাশি ব্যবসায়ীরাও পাচ্ছেন আবাসিক সুবিধা।

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ব্যবসায়ীরা রংপুরের হাটগুলো হতে গরু ক্রয় করে ঢাকাসহ অন্যান্য স্থানে নেওয়ার জন্য এখানে গরুকে নিয়ে রাত যাপন করেন। এতে ব্যবসায়ীরা যেমন নির্বিঘ্নে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারছেন। তেমনি তাদের পশুর সেবাও নিশ্চিত হচ্ছে এই আবাসিক হোটেলে। এখানে রয়েছে পর্যাপ্ত আলো বাতাসের ব্যবস্থা। গরুর সার্বক্ষণিক দেখাশোনা করতে আছেন চারজন কর্মচারী।

রংপুর মহানগরীর প্রবেশমুখে মর্ডান মোড়ের ধর্মদাস বারো আউলিয়া এলাকায় গরুর এই আবাসিক হোটেলের অবস্থান। এখন গরু কম হলেও কোরবানি ঈদ এলে এই আবাসিক হোটেলে ব্যবসা আরও জমজমাট হয়ে ওঠে। আবাসিক হোটেলে রয়েছে গরুর জন্য নির্ধারিত স্থান এবং থাকা-খাওয়ার পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রংপুরের বিখ্যাত লালবাগ হাট, বড়াইবাড়ি হাট, শঠিবাড়ি হাট, আমবাড়ি হাট, বেতগাড়ি হাট, বুড়িরহাট, তারাগঞ্জ, মধুপুর, খানসামা, আফতানগরসহ ও আশপাশের জেলার বিভিন্ন হাট থেকে গরু ক্রয় করেন ব্যবসায়ীরা। অনেকেই সেই গরু ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ফেনীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যান। তবে গরু কিনে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছানোর আগে অনেক ব্যবসায়ী বা ক্রেতাই গরুকে ঠিকমতো খাওয়াতে না পারাসহ বিশ্রাম করতে না পেরে হাঁপিয়ে ওঠেন। তাদের সুবিধার্থেই এই আবাসিক হোটেল গড়ে তুলেন সৌখিন এক উদ্যোক্তা।

ব্যবসায়ীরা এই আবাসিক হোটেলে এক রাত অথবা দুই রাত গরুকে বিশ্রাম দিয়ে তারপরে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। প্রতিটি গরু বাবদ ৬০ টাকা করে নেওয়া হয়। সেখানে ১০০ গরু রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। রাত্রি যাপনের পরে এখান থেকে ট্রাকযোগে বিভিন্নস্থানে গরু পাঠানো হয়।

গরুর ব্যাপারী মোকলেছুর রহমান বলেন, এখানে গরু রেখে অনেকটা নিশ্চিন্ত হওয়া যায়। এক রাত বিশ্রাম নেওয়ার পরে দেশের বিভিন্নস্থানে গরু নিয়ে যেতে সুবিধাও হয়। তাই আবাসিক হোটেলে গরু রাখছি।

এই আবাসিক হোটেলে গরুর সেবাযন্তে কর্মচারি রয়েছে ৪ জন। আলমগীর হোসেন, আলাল মিয়া, মনোয়ার হোসেন ও মিনার। তারা দিনরাত ২৪ ঘণ্টা গরুর দেখভাল করেন।

এসব কর্মচারীর সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, গরুর দেখাশুনা করতে ভালো লাগে। হোটেল মালিকও ভালো মানুষ। যারা গরু নিয়ে আসে তাদের সন্তুষ্টি অর্জনই আবাসিক হোটেলের লক্ষ্য।

গরুর জন্য গড়ে তোলা ব্যতিক্রমী এই আবাসিক হোটেলের উদ্যোক্তা আসানুর রহমান। তিনি নগরীর টার্মিনাল বড়বাড়ী দেওডোবা এলাকার বাসিন্দা। সাত-আট বছর আগে মর্ডান মোড় সংলগ্ন বারো আউলিয়া এলাকায় তিনি গরুর হোটেল হোটেলটি তৈরি করেন।

উদ্যোক্তা আসানুর রহমান বলেন, এখন শীতকাল তাই গরুর আমদানি কম। তবে এখন প্রতিদিন ৩০-৪০টি গরু তার এই হোটেলে থাকছে।  ঝড়-বৃষ্টির সময় গরু নিয়ে খুব বেকায়দায় পড়ত ব্যাপারী ও ব্যবসায়ীরা। এই আবাসিক হোটেল হওয়াতে রোদ-ঝড়-বৃষ্টিতে গরুর কোনো ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা নেই। ব্যবসায়ী ও ব্যাপারীদের ভোগান্তিও কমেছে। এখন হোটেলকে ঘিরে অনেকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া গরু ব্যবসায়ীরা নিরাপদ পরিবেশে পশু বেচা-কেনার জন্য এই হোটেলে নির্বিঘ্নে গরু রাখার সুযোগ পাচ্ছেন।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরকে