সাভারে অসহায় পরিবারকে পুনর্বাসনের নামে বহুমুখী সমবায় সমিতি খুলে সরকারি জমি লিজ নিয়ে প্লট বিক্রির রমরমা ব্যবসা নিয়ে বসেছেন একটি প্রভাবশালী চক্র। ৩ লাখ থেকে ৬ লাখ টাকার বিনিময়ে এসব প্লট কিনেছেন বিত্তশালীরা। একেকটি ঘর যেন রাজকীয় ফ্ল্যাট।

বুধবার (২৫ জানুয়ারি) সকালে সাভারের বনগাঁও ইউনিয়নের গান্ধুরিয়া ছান্দা এলাকার "সাভার থানা অসহায় পরিবার পুনর্বাসন বহুমূখী সমবায় সমিতি লিমিটেড" নামে বরাদ্দকৃত এক প্লট মালিকের ঘরে গিয়ে দেখা যায়, ৬ শতাংশের প্লটের ওপর একটি বাড়ি। বাইরে প্লাস্টিকের চাটাইয়ের বেষ্টনী। দুই রুমের সেমিপাকা ঘরটির বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই যে ভেতরে রয়েছে আভিজাত্যের ব্যবস্থা।

ঘরের ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, অসহায় পরিবারের ঘরে রাজকীয় আসবাবপত্রের সমাহার। মেঝেতে টাইলস, দামী সোফা, ওয়াল কেবিনেট বিশাল টিভিসহ কী নেই সেই ঘরে। এ যেন অসহায়ের ঘরে রাজার বসবাস।

অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রায় ২০ বছর আগে অসহায় ৪২০টি পরিবার নিয়ে "সাভার থানা অসহায় পরিবার পুনর্বাসন বহুমূখী সমবায় সমিতি লিমিটেড" নামের একটি সমিতি গঠন করা হয়। পরবর্তীতে সমিতির পক্ষ থেকে সরকারি প্রায় ১৩ একর ৮৪ শতাংশ জমি লিজের আবেদন করা হয়। এসব জমি সমিতিকে লিজ হিসেবে প্রদান করে সরকার। লিজকৃত এসব জমি ৪২০ জন সদস্যের মধ্যে তিন শতাংশ পরিমাণ করে বন্টনের কথা থাকলেও একেক পরিবারের মধ্যে তিনটি অথবা তার চেয়ে বেশি প্লট দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি প্লটের জন্য দিতে হয় মোটা অংকের টাকা। যদিও ২০১৭ সাল থেকে কোনো ধরনের খাজনা প্রদান না করায় লিজ স্থগিত করা হয়েছে। এই জমির খাজনা বাবদ প্রায় ২০ লাখ টাকা রাজস্ব বাকি রয়েছে।

বাইরে প্লাস্টিকের বেড়ার বেষ্টনী ভেতরে রাজকীয় অবস্থা

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, "সাভার থানা অসহায় পরিবার পুনর্বাসন বহুমূখী সমবায় সমিতি লিমিটেড" নামে ১৩ একর ৮৪ শতাংশ সরকারি জমি লিজ দেওয়া হয়। এই জমিতে তিন শতাংশ করে প্লট অসহায় সদস্যদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করার কথা থাকলেও এসব প্লট বিক্রি করা হয়েছে। প্রতিটি প্লট ৩ থেকে ৬ লাখ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে।

এই জমির ৬ শতাংশের একটি প্লট কিনেছেন ফার্মেসী ব্যবসায়ী মিলন। বাড়িতে মিলনের দেখা না পাওয়া গেলেও তার স্ত্রী বলেন, আমরা ৬ শতাংশের এই প্লটটি কিনে বাড়ি করেছি। প্রায় ১ মাস ধরে এখানে আমরা বসবাস শুরু করেছি। ধাপে ধাপে টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে। না কিনলে তো কেউ জমি দেবে না। আপনারা আমার স্বামীর সঙ্গে কথা বললে সব তথ্য পাবেন।

মুঠোফোনে মিলনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি জমি ক্রয় করে বাড়ি করেছি। সেখানে আমি কী ফার্ণিচার দিয়ে সাজাবো সেটা তো আমার ব্যাপার। সমিতির সদস্য কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সমিতির সদস্য ছাড়া তো প্লট পাওয়া সম্ভব নয়। শুধু অসহায় পরিবারই সমিতির সদস্য হওয়ার কথা, কিন্তু আপনি তো অসহায় নন এমন প্রশ্নের জবাবে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।

সমিতির অসহায় এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এই বাড়ির প্লটটি সাবেক সভাপতি আনোয়ার হোসেন বিক্রি করে গেছেন। বাড়িটি তিনবার ভেঙে পুনরায় নির্মাণ করা হয়েছে। এই বাড়িটিতে লাখ লাখ টাকা খরচ করেছেন বাড়ির মালিক।

এ ব্যাপারে সমিতির সভাপতি দাবি করে মেহেদী হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার আগের সভাপতি এসব প্লট বিক্রি করে গেছেন। এ ব্যাপারে আমার জানা নেই। তবে কিভাবে বিত্তশালীরা প্লট পেল। এ ব্যাপারে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

এ ব্যাপারে সাবেক সভাপতি আনোয়ার হোসেন পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, মেহেদী সমিতির সভাপতি দাবি করে এসব দুর্নীতি করেছেন। ওই প্লটের মালিক মাত্র ১ মাস আগে এসেছে। তাহলে তাকে কিভাবে আমি প্লট দিলাম।

এ ব্যাপারে সাভার উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন, ওই সমিতিতে নানা দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এ ব্যাপারে দুদক তদন্ত করছে। তদন্ত শেষ হলে বিস্তারিত জানানো হবে।

সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, সরকারি জমি নিয়ে যদি কেউ বাণিজ্য করে এ ব্যাপারে আমরা জিরো টলারেন্স। যারা এমন কর্মকাণ্ডে লিপ্ত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মাহিদুল মাহিদ/আরকে