বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তে শূন্যরেখায় আশ্রয়শিবিরে থাকা প্রায় সাড়ে ৪ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশর অভ্যন্তরে লোকালয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।

গত ১৮ জানুয়ারি থেকে পরবর্তী কয়েকদিনে শূন্যরেখার আশ্রয়শিবির ছেড়ে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে ঢুকে পড়ে রোহিঙ্গারা।

তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক রোহিঙ্গা খোলা জায়গায় তাঁবু গেড়ে থাকলেও অধিকাংশই স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন। রোহিঙ্গাদের অবস্থানের কারণে তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যত বন্ধ রয়েছে। আশ্রিত রোহিঙ্গাদের যত্রতত্র মলত্যাগের কারণে বিব্রত অবস্থায় পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। 

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর নির্যাতনের মুখে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা শূন্য রেখার এই আশ্রয় শিবিরে পালিয়ে এসে অবস্থান নেন। ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত ওই আশ্রয় শিবিরে ছিল ৬২১টি পরিবারের ৪ হাজার ৩০০ রোহিঙ্গা। ১৮ জানুয়ারি গোলাগুলি ও অগ্নিসংযোগের পর গৃহহীন পরিবারগুলো তুমব্রু সীমান্তের কোনাপাড়া খাল অতিক্রম করে বাংলাদেশ ভূখণ্ড তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়। কিছু রোহিঙ্গা পরিবার অন্যত্র পালিয়ে গেছে। বর্তমানে তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আশপাশের কয়েকটি জঙ্গল এলাকায় অবস্থান করছে প্রায় ২ হাজার ৯০০ রোহিঙ্গা।

তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুর রহিম বলেন, ‘ঘর থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গারা আমাদের বিদ্যালয়ে অবস্থান করছে। যার কারণে বিদ্যালয়ে আসছে না শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয় খোলা থাকলেও রোহিঙ্গাদের অবস্থানের কারণে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসতে ভয় পাচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, শুক্র-শনি দু'দিন স্কুল বন্ধ থাকায় অবস্থা তেমন বোঝা যায়নি। রোববার শিক্ষার্থী উপস্থিত হয় মাত্র ২শ। পরের দিন সোমবার উপস্থিতি ছিল ৩শ জন। তবে সরকারের জাতীয় কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়ার ডাকে সাড়া দিয়ে মঙ্গলবার শিক্ষার্থী আসে ৪৯০ জন।

তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘেঁষে এত রোহিঙ্গা আশ্রয় নিলে শিক্ষার মারাত্মক ক্ষতি হবে। বাচ্চারা আসতে চাচ্ছে না। দ্রুত ব্যবস্থা দরকার।

নাইক্ষ্যংছড়ির উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার রাজা মিয়া জানান, ৬ দিন ধরে সোয়া ৪ হাজার রোহিঙ্গা তুমব্রু গ্রামে অবস্থান করছে। তারা অপরিকল্পিতভাবে বসতি নির্মাণ করে থাকছে। খোলা জায়গায় উন্মুক্ত শৌচাগার ব্যবহার করছে। সর্বত্র দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। একটি ছোট্ট গ্রামে এত রোহিঙ্গার বসবাস মারাত্মকভাবে পরিবেশ নষ্ট করছে।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার রোমেন শর্মা এ বিষয়ে বলেন, ‘দুটো বিষয়ই গুরুত্বপূর্ণ। একটি রাষ্ট্রীয় নীতির বিষয়, অপরটি শিশু শিক্ষার্থীদের স্বার্থ। আমি রোহিঙ্গাদের অন্য কোথাও সরাতে ব্যবস্থা নেব। তবে তা হবে ঊর্ধ্বতন মহলের সঙ্গে আলোচনা করে।’

প্রসঙ্গত, শূন্যরেখার আশ্রয়শিবিরে রোহিঙ্গাদের ৬৩০টির বেশি ঘর কয়েকদিন আগে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এখনো থেমে থেমে চলছে সংঘর্ষ। যার প্রভাব পড়ছে সীমান্ত এলাকায়। এ কারণে শূন্যরেখায় থাকা সাড়ে ৪ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।
  
সাইদুল ফরহাদ/আরকে