প্লাস্টিকের বোতলের ক্যাপে মণ্ডপ

মুন্সীগঞ্জে প্রায় এক লাখ বোতলের ক্যাপ দিয়ে বানানো হয়েছে দৃষ্টিনন্দন ও ব্যতিক্রমধর্মী পূজা মন্ডপ। শহরের নয়াপাড়া এলাকায় পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতলের ক্যাপ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে সরস্বতী পূজার মণ্ডপ ও দৃষ্টিনন্দন ৬টি গেট। আর সাগুদানা এবং কালোজিরা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে প্রতিমা। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ককশিটের ওপর লাল, হলুদ ও সাদা রঙের অসংখ্য বোতলের ক্যাম্প দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ফ্রেম। আর নান্দনিকভাবে তৈরি করা হয়েছে ১৪ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৩ ফুট প্রস্থের মূল মণ্ডপ। একইভাবে সাজানো হয়েছে ১৮ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১২ ফুট প্রস্থের ফটক। প্রতিমার মুখ তৈরি করা হয়েছে সাগুদানা, শাড়ি আর প্লাস্টিকের দানা দিয়ে। ওই এলাকার নয়াপাড়া নবীন সংঘ নামে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা এমন আয়োজন করেছেন। ব্যতিক্রমী এ আয়োজন দেখতে জেলা শহর ও আশপাশের জেলা থেকে ভিড় জমাচ্ছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। এর আগেও সংগঠনটি বাদামের খোসা, কফির কাপ, ধান-চালসহ বিভিন্ন সামগ্রী দিয়ে প্রতিমা ও মণ্ডপ তৈরি করে বেশ সারা ফেলে দিয়েছিলেন। মুন্সীগঞ্জ জেলার পাশাপাশি এসব নান্দনিকতা দেখতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসেন দর্শনার্থীরা।

আরও পড়ুন >>> সরস্বতী : বৈদিককাল থেকেই পূজিতা 

সংগঠনটির সাংগঠনিক সম্পাদক লোকনাথ দাস বলেন, আমাদের এখানে যারা পূজায় আসেন তাদের সব সময় ব্যতিক্রম কিছু দেখানোর চেষ্টা করি। গত তের বছর ধরে এমন ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যােগ নিচ্ছি আমাদের। এরই ধারাবাহিকতায় এবার আমরা জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতলের প্রায় এক লাখ ক্যাপ সংগ্রহ করি। দিনের বেলায় চাকরি, ব্যবসা ও অন্যান্য কাজ শেষে সন্ধ্যা সংগঠনের সবাই একত্রে হয়ে  রাত ১০টা পর্যন্ত  গেট, মণ্ডপ, প্রতিমা বানানোর কাজ শুরু করি। ৩০ জন সদস্যের ব্যক্তিগত ২ লাখ টাকায় প্রায় দুমাস স্বেচ্চাশ্রমে গেইট, মণ্ডপ, প্রতিমা তৈরি করি। সাগুদানা এবং কালোজিরা দিয়ে তৈরি করা হয় প্রতিমা।

 দৃষ্টিনন্দন ৬টি গেট

 

দর্শনার্থী সুদীপ সাহা  বলেন, ‌‌ এক লাখ বোতলের মুখ দিয়ে মণ্ডপটি তৈরি করতে অনেক সময় লেগেছে। তবে কাজটি নান্দনিক হয়েছে। দেখে ভালো লাগছে।

কনিকা রানি দাস নামে অপর দর্শনার্থী বলেন, প্রত্যেক বছরই নবীন সংঘ একটা ব্যতিক্রমী চমক দিয়ে কখনো সরস্বতী,‌ কখনো দুর্গা পূজার আয়োজন করে। পূজা এবং এমন আয়োজন দেখতে পরিবারের সব সদস্যদের নিয়ে প্রতিবছর এখানে আসি।

আরও পড়ুন >>> শ্রীকৃষ্ণ : সনাতন ধর্ম ও সংস্কৃতির প্রাণপুরুষ 

রাখি দাস বলেন, বোতলের ক্যাপ দিয়ে পূজার এমন আয়োজন অকল্পনীয়। সংগঠনটির সদস্যরা যে চমক দেখিয়েছে সত্যিই অভাবনীয়। কোনো পেশাদার শিল্পী দিয়ে নয়, সবকিছুই তৈরি করেছেন আয়োজক সংঘের সদস্যরা। মণ্ডপের উচ্চতা ১৪ ফুট আর প্রতিমার দৈর্ঘ্য ৬ ফুট।

 

বোতলের ক্যাপ দিয়ে তৈরি ফটক

সংগীত শিল্পী মুন্সীগঞ্জ থিয়েটার সার্কেলের যুগ্ম সম্পাদক সুদিপ দাস দ্বীপ বলেন, প্রতি বছর নবীন সংঘের চমক দেখার অপেক্ষায় থাকি। সংগঠনটির কেউ পেশাদার শিল্পী নয়। তারপরও যেভাবে গেইট, মণ্ডপ, প্রতিমা তৈরি করেছে সেটা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার।

আরও পড়ুন >>> দুর্গাপূজা : মাতৃরূপা ব্রহ্মেরই উপাসনা 

সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক কাজল চন্দ্র দাস জানান, এ মণ্ডপটি তৈরি করতে এক মাসেরও বেশি সময় লেগেছে। আমাদের সংগঠনের সবাই বিভিন্ন পেশার সঙ্গে জড়িত। রাতে বাড়িতে ফিরে রাত ৮টা থেকে ২-৩টা পর্যন্ত তারা মণ্ডপ তৈরির কাজ করেছেন। খরচ হয়েছে প্রায় দুই লাখ টাকা।  তিনি আরও বলেন, প্রথম দিকে আমাদের আয়োজন ছিল শুধু শখের বসে। এখন এ আয়োজন নিজের শখ ও দায়িত্ববোধ থেকে করে যাচ্ছ। মানুষের ভালোবাসা পাচ্ছি। গত বছর বাদামের খোসার মণ্ডপ দেখতে ভারত থেকেও দর্শনার্থীরা এসেছিলেন। যত দিন আমরা আছি ব্যতিক্রম এ আয়োজন চালিয়ে যাব।

ব.ম শামীম/আরকে