নিজের সন্তানের ঘরে ঠাঁই হয়নি ৮৫ বছর বয়সী বৃদ্ধা সুরুফার। এই কনকনে শীতের রাতে ঘরের পাশের খোলা রান্নাঘরের মেঝেতে একটা কম্বল বিছিয়ে শুয়ে থাকতে হয় তাকে। শেরপুরের শ্রীবরদীতে বৃদ্ধা সুরুফার করুণ অবস্থার কথা জানতে পেরে শনিবার (২৮ জানুয়ারি) বিকেলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ইফতেখার ইউনুছ কম্বল ও থাকার জন্য চৌকি দিয়ে তার পাশে দাঁড়িয়েছেন।

জানা যায়, দুই ছেলে এক মেয়ের মা সুরুফা। স্বামী ছয়মুদ্দীন অনেক আগেই মারা গেছেন। তার বাড়ি শ্রীবরদী পৌরসভার চড়িয়াপাড়ায়। তিনি তার নিজ বাড়িতে ছেলে দলা মিয়াকে নিয়ে থাকেন। বৃদ্ধার বড় ছেলে লাল মিয়া ঢাকায় কাজ করে। তিনি তার মায়ের কোনো খবর নেন না। বৃদ্ধার মেয়ে ছকিনার কয়েকবছর আগে বিয়ে হয়ে গেছে। দলা মিয়া শ্রীবরদী বাজারে কলা বিক্রি করেন। দলা নিজেই সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। তার ওপর অসুস্থ বৃদ্ধা মায়ের পুরো দায়িত্ব তার ওপর। তাই তার অসুস্থ মাকে তার স্ত্রী ঘর থেকে বের করে রান্না ঘরে রেখেছেন।

নূর-মোহাম্মদ নামে এক যুবক বলেন, আমরা কিছুদিন থেকে দেখতে পাচ্ছি ওই বৃদ্ধাকে এই জায়গায় রেখেছে। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম বৃদ্ধা বিছানায় মল-মূত্র ত্যাগ করেন এজন্য ঘর থেকে বের করে দিয়েছে। তার কাছে কেউ যাচ্ছিল না। এ বয়সে তার সেবা যত্ন দরকার। তাকে এইভাবে ফেলে রাখছে বিষয়টা দেখে খুব খারাপ লাগল।

খোলা রান্নাঘরের মেঝেতে শুয়ে বৃদ্ধা

‘শিক্ষার আলোই বাংলাদেশ’ নামে এক সংগঠনের বাংলাদেশের সভাপতি সাজিদ হাসান শান্ত ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই কনকনে শীতের মধ্যে বৃদ্ধাকে এইভাবে ফেলে রেখেছে। আমার বিষয়টা দেখে খুব খারাপ লেগেছে। তাই বৃদ্ধার এই করুণ অবস্থা দেখে আমি ইউএনও স্যারকে খবর দেই। পরে ইউএনও স্যার তাকে কম্বল ও থাকার জন্য চৌকি দিয়েছেন। এই বৃদ্ধার থাকার জায়গায় যেন বাতাস না ঢুকতে পারে এজন্য তার ছেলেকে জায়গাটি টিন দিয়ে ঢেকে দেওয়ার জন্য বুঝিয়ে রাজি করিয়েছেন ইউএনও স্যার। আমরা তার খবর সবসময় নেব।

ইউএনও এর দেওয়া চৌকি

দএ ব্যপারে তার ছেলে দলা মিয়া বলেন, আমার এই অল্প আয় দিয়ে সংসার চালিয়ে মায়ের খরচ চালানো সম্ভব হচ্ছিল না। বের করে দেওয়ার বিষয়টি প্রশ্ন করলে তিনি বলেন আমার স্ত্রী তাকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছিল।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইফতেখার ইউনুছ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি স্থানীয় শিক্ষার আলোই বাংলাদেশ নামে এক সংগঠনের মাধ্যমে জানতে পারি। এরপর সঙ্গে সঙ্গে কম্বল নিয়ে যাই। একটা চৌকি কিনে বৃদ্ধার বাড়িতে দিয়ে এসেছি। আরও কোনো সহযোগিতা লাগলে আমার পক্ষ থেকে তাকে সবোর্চ্চ সাহায্য করার চেষ্টা করব।

শেখ সাঈদ আহমেদ সাবাব/আরকে