সংসদ সদস্য তামান্না নুসরাত বুবলীর সঙ্গে দুধ মেহের বেগম

‘ভাবি আমার লাইগ্গা যা করছে, আপন বইনেও অত করতো না’- চোখের ছানি অপারেশনের পর এমন মন্তব্য করেছেন দুধ মেহের বেগম ওরফে মুরগি খালা। সংসদের ২৪নং সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য তামান্না নুসরাত বুবলীর সহযোগিতায় নরসিংদী জেলা চক্ষু হাসপাতালে রোববার (২২ জানুয়ারি) অপারেশন হয় দুধ মেহের বেগমের।

মেহের বেগমের সুস্থতা লাভের পর গতকাল রোববার (২৯ জানুয়ারি) তামান্না নুসরাত বুবলী এমপি তার ফেইসবুক প্রোফাইলে দুধ তাকে নিয়ে একটি পোস্ট দেন। যেখানে তিনি দুধ মেহের বেগমকে সহযোগিতার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

জানা যায়, দীর্ঘদিন আগে দুধ মেহেরের স্বামী সাফির উদ্দিন মিয়া মারা যান। তিনি জীবিত থাকতেও তেমন কোনো রোজগার না করায় ৩ সন্তানকে নিয়ে একাই সংসারটি টেনে নিয়ে গেছেন দুধ মেহের বেগম। তিনি নরসিংদী পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের বিলাসদী গ্রামের বাসিন্দা। তিনি প্রায় ২৫ বছর যাবৎ বটতলা বাজারে মুরগি বিক্রি করেন। এখন তার বয়স প্রায় ৬০ ছুঁই ছুঁই। মুরগি বিক্রির টাকা ও ধার দেনা করে একটু ভালো থাকার আশায় বড় ছেলেটাকে পাঠিয়েছিলেন বিদেশে। কিন্তু সে ভালো থাকা আর হলো না। বিদেশে গিয়ে ধার দেনা মেটানোর পর ছেলে হয়ে গেছে অবৈধ তাই এখন পালিয়ে বেড়াতে হয় তাকে। বাকি ২ ছেলে নরসিংদীতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালান। তাই বাধ্য হয়ে এখনো দুধ মেহের বেগমকে বাজারে মুরগি বিক্রি করতে হয়।

চোখে ছানি পড়ায় কাজ করতে অসুবিধা হত তার। প্রায়ত মেয়র লোকমান হোসেনের স্ত্রী ২৪নং সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাংসদ তামান্না নুসরাত বুবলীর সহযোগিতায় তার চোখের ছানি অপারেশন করা হয়। অপারেশনের পর এখন তিনি ভালো আছেন বলে জানিয়েছেন। 

মুঠোফোনে দুধ মেহের বেগম বলেন, ‘ভাবি আমার লাইগ্গা যা করছে, আফন বইনেও অতদুর করতো না। আমি অনেক দিন ধইরা ভাবিরে মুরগি দেই। ভাবি আমারে অনেক আদর করে। আমি আমার চোহের অফরেশনের কথা কইতেই ভাবি অফরেশনের ব্যবস্থা কইরা দিছে। অফরেশনের পরেও আমার খোঁজ নিতাছে। উপর আল্লাহ এমন মানুষরে নেক হায়াত দিক। আমার জীবনে দুইড্ডা মাইনসেরে দেখলাম ১ ভাবির জামাই আমাগো লোকমান ভাই, আরেক ভাবি হেরা আমাগো মতো মাইনসের খবর লয়। এমুন মাইনসের আল্লাহ ভালো করব।’

২৪নং সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য তামান্না নুসরাত বুবলী বলেন, আমার প্রয়াত স্বামী নরসিংদীর সাবেক মেয়র লোকমান হোসেন মারা যাওয়ার পর আমি কাউকে দিয়ে বাজার করিয়ে তৃপ্তি পেতাম না। ২০১৪ সাল আমিই বাজার করি আর মুরগি লাগলে আমি ওনার কাছ থেকেই কিনি। আমি মহিলাটির নাম জানি না। এজন্য আমি ভালোবেসে ওনাকে "মুরগি খালা" বলেই ডাকতাম। বটতলা বাজারে গেলেই ওনার সঙ্গে আমার দেখা হয় এবং ওনার কাছ থেকে মুরগি কিনতাম। গেলো বছরের ডিসেম্বর মাসে আমি যখন বাজার করতে বটতলা বাজারে যাই, তখন "ও ভাবি গো বলে" পেছন থেকে ঝাপটে ধরে। আমি পিছনে তাকাতেই দেখি সেই "মুরগী খালা"। তখন কথা বলে জানতে পারি ওনার চোখে ছানি পড়েছে অপারেশন লাগবে। তখন জেলা চক্ষু হাসপাতালে ফোন দিয়ে ওনার অপারেশনের ব্যবস্থা করি। পরে জেলা হাসপাতালের ডাক্তারদের সহযোগিতায় মুরগি খালার চোখের অপারেশন এখন  সম্পূর্ণ হয়েছে এমনটাই আমাকে জানিয়েছে চিকিৎসক। আমি আমার পিএস এরশাদকে বলে দিয়েছি অসুস্থতার সময়টাতে মুরগি খালার দিকে যেন সে খেয়াল রাখে। তার ঔষধ, ঘরের খাবার-দাবার ইত্যাদিতে যেন কোনো সমস্যা না হয় সেদিকে নজর রাখার জন্য বলেছি। তাছাড়া আমি এখন ঢাকায় আছি, নরসিংদীতে যাওয়া মাত্রই আমি ওনাকে দেখতে যাব।

আমার স্বামী নরসিংদীর প্রয়াত মেয়র লোকমান হোসেন সব সময় অসহায় মানুষদের সেবা করতেন। কোনো রোগীর অপারেশন লাগলে ফ্রিতে অপারেশনসহ কিছু আলাদা করে টাকাও দিতেন। আমি ওনার কার্যক্রমগুলো শুধু অনুসরণ করছি মাত্র।

আরকে