এ কে এম রেজাউল করিম তানসেন, শাহীন মোস্তফা কামাল, কামরুল হাসান সিদ্দিকী জুয়েল ও আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম (বাম থেকে)

বগুড়া-৪ (নন্দীগ্রাম-কাহালু) আসনে উপনির্বাচন আগামী ১ ফেব্রুয়ারি। ১১ মাসের জন্য কে হচ্ছেন এই আসনের সংসদ সদস্য তা নিয়ে চলছে জল্পনা কল্পনা। এই নির্বাচনে লড়ছেন ৯ জন প্রার্থী। শেষ মুহূর্তের প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি।

উপনির্বাচনে প্রার্থীরা হলেন- ১৪ দলীয় জোট মনোনীত এ কে এম রেজাউল করিম তানসেন (মশাল), জাকের পার্টির আব্দুর রশীদ সরকার (গোলাপফুল), জাতীয় পার্টির শাহীন মোস্তফা কামাল (লাঙ্গল), বাংলাদেশ কংগ্রেস পার্টির তাজ উদ্দীন মন্ডল (ডাব), নন্দীগ্রাম পৌরসভার সাবেক মেয়র স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল হাসান সিদ্দিকী জুয়েল (কুড়াল), নন্দীগ্রামের কুন্দারহাট ইনছান আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তফা (দালান), নন্দীগ্রামের থালতা মাঝগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ইলিয়াস আলী (কলার ছড়ি), কাহালু উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুশফিকুর রহমান (ট্রাক) ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচিত আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম (একতারা)।

সাধারণ ভোটাররা বলছেন, নির্বাচনে ৯ জন প্রার্থী অংশগ্রহণ করলেও নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা ও গণসংযোগে এগিয়ে আছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল হাসান সিদ্দিকী জুয়েল, মুশফিকুর রহমান, ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী এ কে এম রেজাউল করিম তানসেন ও জাতীয় পার্টির শাহীন মোস্তফা কামাল।

নন্দীগ্রামের বুড়ইল ইউনিয়নের সাধারণ ভোটার নরত্তম কুমার বলেন, নন্দীগ্রামে মশাল ও কুড়াল মার্কার ভোট বেশি। অন্য প্রার্থীরা তেমন ভোট পাবেন না। দুই উপজেলা মিলে কি হবে বলা কঠিন।

কাহালু পৌর এলাকার ভোটার ইদ্রিস আলী বলেন, কাহালুতে ট্রাক ও লাঙ্গল মার্কার অবস্থা ভালো। তবে কুড়াল মার্কারও ভোট আছে। যোগ্য লোক দেখেই ভোট দিমু।

সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নন্দীগ্রামের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিফা নুসরাত জানান, উপনির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। আশা করি উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

এদিকে নির্বাচনের আর মাত্র দুই দিন বাকি। তারপরও প্রচার-প্রচারণায় প্রার্থীদের তেমন অগ্রগতি নেই। উপজেলা সদর, পৌর সদর, বিভিন্ন হাট-বাজার ও রাস্তার মোড়ে মোড়েই সীমাবদ্ধ প্রার্থীদের প্রচারণা। বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে ভোটারদের কাছ থেকে জানা গেছে, উপনির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন অনেকেই, কিন্তু কেউ ভোট চাইতে যাননি গ্রামে।

আয়রা গ্রামের আবেদ আলীর বাড়িতে গেলে তার স্ত্রী ও মেয়েরা জানান, এখন পর্যন্ত কেউ তাদের কাছে ভোট চাইতে আসেননি। 

সাবানপুর, হাটুরপাড়া, ঝাঞ্জারপাড়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের ভোটারেরা জানান, মাত্র এক বছরের এমপি হওয়ার জন্য অনেকে প্রার্থী হয়েছেন, অথচ এখন পর্যন্ত কেউ ভোট চাইতে এলেন না।

বিভিন্ন দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে কমবেশি আলোচনা থাকলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলমকে নিয়ে উৎসুক জনতার মধ্যে আলোচনা অনেক বেশি। তবে ভোটের হিসাব-নিকাশে কী হবে তা বলা মুশকিল। মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হিরো আলমকে নিয়ে আলোচনা হলেও ভোটের মাঠে বিষয়টা ততটা সহজ নয় বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে।

এদিকে প্রচার-প্রচরণায় তেমন অগ্রগতি না থাকা, গ্রামে গ্রামে ভোট না চাওয়াসহ নানা কারণে এই নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি খুবই কম হতে পারে বলে অনেকে ধারণা করছেন। উপনির্বাচনে ভোটযুদ্ধে কোন প্রার্থীর সঙ্গে কোন প্রার্থীর লড়াই হবে তা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা থাকলেও এখানে ভোটযুদ্ধের হিসাব মিলাতে পারছেন না কেউ। 

সরকারদলীয় মহাজোটের প্রার্থী জাসদ নেতা রেজাউল করিম তানসেন। উনি নিজেকে বিজয়ী মনে করছেন, সে কারণে তার প্রচারণায় উপস্থিতি কম। অন্যদিকে জাতীয় পাটির নেতা শাহিন মোস্তফা কামাল ফারুকের সাংগঠনিক অবস্থা কিছুটা ভালো থাকায় তিনিও ফুরফুরে মেজাজে আছেন। সাবেক বিএনপি নেতা কামরুল হাসান সিদ্দিকী জুয়েলও বিএনপির ঘাঁটি হিসাবে বিপুল ভোট পেয়ে  বিজয়ী হবেন বলে মনে করছেন। 

মহাজোটের প্রার্থী রেজাউল করিম তানসেন বলেন, আমি এক টার্ম এমপি ছিলাম। সেসময়ে এলাকায় অনেক উন্নয়ন করেছি। সে কারণে এলাকার মানুষ পুনরায় ভোট দিয়ে নিবাচিত করবে। ভোট চেয়ে বিভিন্ন গ্রামের গণসংযোগ চালিয়ে আসছি।

জাতীয় পাটির প্রার্থী শাহিন মোস্তফা কামাল ফারুক বলেন, প্রত্যেক এলাকায় ভোট চাচ্ছি। ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। বিজয় হবে ইনশাআল্লাহ। 

স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল হাসান সিদ্দিকী জুয়েল জানান, এলাকায় ভোটারদের মধ্যে পরিচয় আছে। ভোটারদের মধ্যেই এখনও আছি। ভোটারগণ বিপুল ভোটে বিজয়ী করবেন।

কাহালু থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আন্তরিকভাবে কাজ করছে। নির্বাচনকে ঘিরে কেউ যাতে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে না পারে সেদিক লক্ষ্য রেখেই আমরা কাজ করছি। 

সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও কাহালু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. মেরিনা আফরোজ বলেন, অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে আমরা সকল ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। 

বগুড়া-৪ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ২৮ হাজার ৪৬৯ জন। এর মধ্যে কাহালু উপজেলায় ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৮০ হাজার ৮৪৩ জন ও নন্দীগ্রাম উপজেলায় ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৪৭ হাজার ৬২৬ জন। 

উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়, উপনির্বাচনে দুই উপজেলায় মোট ১১২টি ভোটকেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করা হবে। এর মধ্যে কাহালু উপজেলায় ৬৩টি ভোটকেন্দ্র ও নন্দীগ্রাম উপজেলায় ৪৯টি ভোটকেন্দ্র। ১ ফেব্রুয়ারি ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হবে। 

আলমগীর হোসেন/আরএআর