জন্ম থেকেই দুই পা ও দুই হাত সরু। কখনো হামাগুড়ি দিয়ে অথবা কখনো ঘরের মধ্যেই দিন পার করতে হয় মো. রাব্বি হোসেনের (২১)। জীবনের ২১ বছর এভাবে পেরিয়ে গেলেও একটা হুইল চেয়ারের অভাবে এখন অসহায় বোধ করেন তিনি। 

মো. রাব্বি হোসেন নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার নরোত্তমপুর ইউনিয়নের নরোত্তমপুর গ্রামের আব্দুল মুন্সি বাড়ির মো. মাসুদ ও রৌশন আক্তার দম্পতির ছেলে। 

পরিবার সূত্রে জানা যায়, জন্ম থেকেই দুই পা সরু হওয়ায় উঠে দাঁড়াতে পারে না। বিভিন্ন সময় চিকিৎসা করালেও সুস্থ হয়ে ওঠেনি রাব্বি। দিনমজুর বাবার পক্ষে ছেলেকে একটি হুইল চেয়ার কিনে দেওয়া সম্ভব হয়নি। গাছ কাটতে গিয়ে দুর্ঘটনায় তিনিও এখন প্রতিবন্ধী। তারপরও টুকটাক কাজ যা আয় হয়, তা দিয়ে কোনোমতে পাঁচ সদস্যের সংসার চলে তাদের।

বাবা মো. মাসুদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, দুর্ঘটনার পর আমি তেমন কাজ করতে পারি না। ছেলে-মেয়েদেরকেও খাবার জোগাড় করতে পারি না। সন্তানদের কী খাবার জোগাড় করে দেব আমি নিজেই ঘরে বসে আছি। আমার সামর্থ্য নেই একটা হুইল চেয়ার কিনে দেওয়ার।

মা রৌশন আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার পাঁচটা ছেলেমেয়ে। রাতে ঘুমাতে পারি না রাব্বি হোসেনের চিন্তায়। রাব্বির জন্য আমার কষ্টের শেষ নেই। মা হয়ে তার জন্য আমি কিছু করতে পারি না। আপনারা একটা হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা করে দিলে আমি নামাজ পড়ে দোয়া করব। আমাকে কেউ কিছু খেতে দিলে আমি রাব্বির জন্য নিয়ে আসি। সে আমার খুব আদরের।

রৌশন আক্তার আরও বলেন, আমার ছেলে হামাগুড়ি দিয়ে রাস্তায় বের হয়। হাতে-পায়ে ব্যাথা পায়। আমি কাপড়ের আচল দিয়ে তার হাত-পা মুছে দেই। আমি কী করব আমার তো সামর্থ্য নেই। মরেও শান্তি পাব না কেননা তার জন্য আমি কিছুই করতে পারি নাই। 

রাব্বি হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার একটা হুইল চেয়ারের প্রয়োজন। আমি হাঁটতে পারি না, চলতে পারি না। যদি রাস্তায় বের হই তাহলে শরীরে ব্যাথা লাগে। সারারাত কান্না করি। আমি কাজ করতে চাই। পরিবারের বোঝা হয়ে থাকতে চাই না। 

প্রতিবেশী তাজুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ছেলেটা রাস্তায় বের হলে হাতে পায়ে ইটের কনা প্রবেশ করে। আশেপাশে এমন বিত্তবান কেউ নেই যে একটা হুইল চেয়ার কিনে দিতে পারবে। বাবা-মায়ের সেই পরিস্থিতি নাই যে একটা হুইল চেয়ার নিয়ে দিবে। অন্য প্রতিবন্ধী শিশুরা স্কুল-মাদরাসায় যায় কিন্তু এই পরিবারের সামর্থ্য না থাকায় রাব্বি ঘরেই থাকে। 

মনির হোসেন নামের আরেক প্রতিবেশী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ছোটবেলা থেকে বাচ্চাটা হামাগুড়ি দিয়ে রাস্তায় চলাফেরা করে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জেলা প্রশাসনের আছে, ইউনিয়ন পরিষদ ও মান্যগণ্য এলাকার মানুষ আছেন। যদি কেউ এই ছেলেটার পাশে দাঁড়ায় তাহলে তার কষ্ট লাঘব হবে। 

নরোত্তমপুত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মেহেদি হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ সম্পর্কে আমার জানা ছিল না। আমি আপনার মাধ্যমেই জানতে পারলাম। এখন খোঁজ-খবর নেব। 

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. ইয়াসীর আরাফাত ঢাকা পোস্টকে বলেন, নরোত্তমপুর ইউনিয়েনের প্রতিবন্ধী ছেলের বিষয়টি আমি শুনেছি। তার একটা হুইল চেয়ার প্রয়োজন। আমরা সমাজ সেবার মাধ্যমে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে একটা হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা করব। 


হাসিব আল আমিন/আরকে