গ্যাস সংকট নিরসনের দাবিতে নারায়ণগঞ্জ তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের নারায়ণগঞ্জ কার্যালয় ঘেরাও করেছে সাধারণ ভোক্তারা। এ সময় গ্যাসের দাবিতে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার নারীরা ঝাড়ু নিয়ে তিতাস গ্যাস অফিসের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন।

মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) নগরীর চাষাঢ়া বালুর মাঠে সকাল ১০টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টা তিতাস গ্যাসের আঞ্চলিক বিপণন কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে তিতাস গ্যাস অফিস ঘেরাও করে রাখেন বিক্ষুব্ধ জনতা। এর আগে 'আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী' নামের একটি সামাজিক সংগঠনের আয়োজনে নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে সমবেত হন বিক্ষোভকারীরা।

‘গ্যাস নাই গ্যাস দে, দুর্নীতি ছাইড়া দে। গ্যাসের চুলায় গ্যাস নাই, মা-বোনদের ঘুম নাই’ বিভিন্ন স্লোগান দেন কার্যালয় ঘেরাও করা আন্দোলনরত তিতাস গ্যাসের ভোক্তারা। এ সময় নিরাপত্তার স্বার্থে তিতাস কর্যালয়ের মূল ফটক বন্ধ করে দেন কর্তৃপক্ষ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে মাসদাইর, নগরীর গলাচিপা, কলেজ রোড, আল্লামা ইকবাল রোড, শেরে বাংলা সড়ক, হাজীগঞ্জ, তল্লা, খানপুর, দেওভোগ, পশ্চিম দেওভোগ, ভূঁইয়ারবাগ, নাগবাড়ি, আদর্শ গ্রাম, তাঁতিপাড়া, আমবাগান, বৌ-বাজার, ভূঁইয়াপাড়া, উকিলপাড়া, নন্দীপাড়া, ডি.এন রোড, বেপারীপাড়া, পাইকপাড়া, জন্মারপাড়, নয়াপাড়া, ১ নম্বর ও ২ নম্বর বাবুরাইল, দেওভোগ পাক্কা রোড, পালপাড়া, আমলাপাড়া, নিতাইগঞ্জ, শহীদ নগর, শীতলক্ষ্যা, তামাকপট্টি, নলুয়া রোড, টানবাজার, নয়ামাটি, মিশনপাড়া, ডনচেম্বার, গাবতলী, ইসদাইর, সস্তাপুর, চাষাঢ়া ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের অধিকাংশ এলাকায় গ্যাস সংকট চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে।

তিতাস গ্যাস অফিস ঘেরাও করে অবস্থান নেওয়া বিক্ষোভকরীরা জানন, নারায়ণগঞ্জ শহর ও শহরতলী এলাকায় আবাসিক চুলায় ধারাবাহিক গ্যাস সংকটের কারণে বিগত ২০১৩-১৫ সালে তিন বছরব্যাপী ‘আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী’ সংগঠনের দীর্ঘ আন্দোলন ও তিতাস গ্যাস ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছিল। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছিলেন চাষাড়া থেকে নিতাইগঞ্জ পর্যন্ত ৬ ইঞ্চি নতুন গ্যাস পাইপ লাইন সংযুক্ত করা হবে। কিন্তু তা আজ অবধি করা হয়নি। তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ আগামী ৫০ বছরের জন্য গ্যাস সংকট হবে না বলে আশ্বাস প্রদান করেছিলেন। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় কিছুদিন যাবত আবারও আবাসিক চুলায় চরমভাবে গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। এমনকি দিনের বেলা তো দূরে থাক গভীর রাতেও গ্যাসের দেখা মিলছে না। 

ফলে মা-বোনদের রান্নার কাজে বেগ পেতে হচ্ছে। গ্যাস সংকট নিরসনে সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের ডি.ও লেটারের প্রেক্ষিতে সামান্য কিছুটা উন্নতি হলেও এখনও চরম সংকটে অধিকাংশ আবাসিক এলাকায় গ্যাস প্রাপ্তি প্রায় শূন্যের কোটায়। 

‘আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী’ সংগঠনের সভাপতি মো. নূর উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা আমাদের অধিকার চেয়েছি, কারও দয়া চাইনি। বৈশ্বিক পরিস্থিতির কথা বলে আমাদের যৌক্তিক আন্দোলনকে দমিয়ে রাখা যাবে না। আপনারা প্রয়োজনে আপাতত ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত আবাসিক চুলায় গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক করেন। দুপুর থেকে সন্ধা ৭টা পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রেখে রাত ১১টা পর্যন্ত সচল রাখেন। বিদ্যুতের মতো করে রেশনিং সিস্টেমে নিয়ে আসেন। আপনারা তিতাস কর্তৃপক্ষ যদি আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ভাষা না বুঝেন, তবে মনে রাখবেন নারায়ণগঞ্জ সব আন্দোলন সংগ্রামের সূতিকাগার। আমাদের অধিকার আমাদের বুঝিয়ে দেন। নতুবা টিকতে পারবেন না।

অনতিবিলম্বে গ্যাস সংকট সমাধান করা না হলে ভুক্তভোগীসহ সর্বস্তরের নারায়ণগঞ্জবাসীকে সঙ্গে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণার ডাক দিবেন বলে হুঁশিয়ার করেন সংগঠনের অন্যান্য নেতাকর্মীরা। 

এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সভাপতি নূর উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক মো. নাসির উদ্দিন মিন্টু, সহ-সম্পাদক খোদেজা নাসরিন, সহ-সভাপতি আঞ্জুমান আরা আকসির, কুতুব উদ্দিন আহাম্মেদ, সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি ও ডা. পারভীন আক্তার জুঁইসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডের নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণ।

আবির শিকদার/আরকে