টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে টাকার পরিবর্তে জোরপূর্বক কৃষকদের ধান নেওয়ায় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) সেচ পাম্পের আওতাধীন ১০০ বিঘা জমিতে ধান রোপণ বন্ধ রেখেছেন কৃষকরা। বিএডিসির মেকানিক ও পাম্প ম্যানেজারের অনিয়মের কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার সল্লা ইউনিয়নের কামমারী পাথাইলকান্দি এলাকায় বিএডিসির আওতায়ধীন ১৪নং গভীর নলকূপের অধীন দেড় থেকে দুইশ বিঘা জমিতে ধান চাষ হয়। কিন্তু টাকার বিনিময়ে সেচ না পাওয়ায় ওই এলাকার প্রায় ৬০ জন কৃষক ধান আবাদ থেকে বিরত রয়েছেন। এ বছর ইরি ও বোরো ধান আবাদ করছেন না তারা। ফলে বিশাল এলাকা অনাবাদি পড়ে রয়েছে। জমিতে পানি না দেওয়ায় মাটি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। 

শুধু ওই এলাকা নয় জেলার বিভিন্ন স্থানে বিএডিসির গভীর নলকূপের মাধ্যমে নিয়ম বহির্ভূতভাবে পাম্প ম্যানেজাররা টাকার পরিবর্তে ধান নিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। 

কৃষকদের অভিযোগ, ২০১৪ সাল থেকে উপজেলার কাগমারী পাথাইলকান্দি এলাকায় বিদ্যুতের সাহায্যে বিএডিসির গভীর নলকূপ চালু হয়েছে। এতে বিএডিসি কর্তৃক নির্ধারিত চাষাবাদে শতাংশ প্রতি কৃষক সেচ বাবদ ৮০ টাকা দেওয়ার কথা। কিন্তু স্থানীয় সেচ পাম্পের ম্যানেজার শাহ আলম মন্ডল সরকারি নিয়ম অনুযায়ী টাকা না নিয়ে জোরপূর্বক জমিতে রোপণকৃত চার ভাগের এক ভাগ ধান নিয়ে যান। এতে কৃষকরা প্রতিবাদ করলে জমিতে পানি দেওয়া বন্ধ করে দেন। ফলে ধান আবাদ করে লোকসানে পড়ে এ বছর ইরি ও বোরো ধান আবাদ থেকে বিরত রয়েছেন এলাকার প্রায় ৬০ জন কৃষক। এতে ১০০ বিঘা জমিতে আবাদ হয়নি। 

অন্যদিকে বিএডিসি কর্তৃপক্ষ অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করে উল্টো ম্যানেজারের সঙ্গে যোগসাজশ করে অনিয়মের মাধ্যমে সেচ পাম্প পরিচালনা করছে। এতে অনিয়মের সঙ্গে জড়িত বিএডিসির কালিহাতী কার্যালয়ের মেকানিক সজিব ও পাম্প ম্যানেজার শাহ আলম মন্ডলের অপসারণ দাবি করে চিঠি দিয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা।

কাগমারী পাথাইলকান্দি গ্রামের কৃষক ইদ্রিস আলী বলেন, কয়েক মাস আগে বন্যার পানিতে ধান চাষ করেছিলাম। সেখানে নলকূপের সেচ প্রয়োজন হয়নি। অথচ বিএডিসির লোকজনের সহায়তায় মোট ধানের চার ভাগের এক ভাগ নিয়ে গেছেন শাহ আলম।

কৃষক ছানোয়ার বলেন, সরকারি নিয়মে সেচ বাবদ শতাংশ প্রতি ৮০ টাকা দিতে হবে। আমরা কৃষকরাও টাকার বিনিময়ে সেচ দিতে চাই। কিন্তু বিএডিসির গভীর নলকূপের ম্যানেজার টাকা না নিয়ে ধান কেটে নেন। এমনিতেই বাজারে বিভিন্ন জিনিসের দাম বেশি, অন্যদিকে জমির ধান চার ভাগের এক ভাগ দিতে হয়। এতে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।  

কৃষক সিদ্দিক তালুকদার বলেন, বিএডিসির লোকজনের সহযোগিতায় ম্যানেজার জোরপূর্বক কৃষকদের ধান কেটে নিয়ে যান। কৃষকরা সরকারি নিয়ম মেনেই ধান আবাদ করতে চান। কিন্তু ম্যানেজার তাতে রাজি না। ফলে এ বছর ধানের আবাদ থেকে বিরত রয়েছেন এখানকার কৃষকরা। তবে অন্য ফসল আবাদ করবেন, যে আবাদে পানির প্রয়োজন হয় না।

বিএডিসির সেচ পাম্পের ম্যানেজার শাহ আলম মন্ডল বলেন, কৃষকরা যদি ধান দেয় তাহলে আমি কী করবো। সেচ চার্জের মাধ্যমে পাম্প পরিচালনা করতে হবে- এটা জানা ছিল না। জানার পরই নিয়ম অনুযায়ী সেচ চার্জের ভিত্তিতেই পাম্প পরিচালনার কথা বলেছি কৃষকদের। কৃষকদের বলেছি পানি নিতে, কিন্তু তারা জমিতে পানি না নিয়ে উল্টো গালিগালাজ করে। মূলত পাম্প নিয়ে স্থানীয়ভাবে সমস্যা রয়েছে।

অভিযোগ অস্বীকার করে বিএডিসির কালিহাতী কার্যালয়ের মেকানিক মো. সজিব বলেন, টাকার বিনিময়ে সেচ কার্যক্রম পরিচালনা করতে ম্যানেজারকে বলা হয়েছে। সরকারি নিয়মের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু স্থানীয় লোকজনের রেশারেশির কারণে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে দ্রুতই সমাধান হবে।

বিএডিসির কালিহাতী কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. রাসেল আহম্মেদ বলেন, বর্তমানে জমিতে ধান আবাদ বন্ধ রেখেছেন কৃষকরা। কৃষকদের অভিযোগ পাওয়ার পর পাম্পের ম্যানেজারকে টাকার বিনিময়ে সেচ কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারপরও যদি অনিয়ম হয় তাহলে ম্যানেজারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অভিজিৎ ঘোষ/আরএআর