চুলায় রান্না করছেন বিবি খাদিজা (৪০)। এক হাত দিয়ে চুলায় শুকনো পাতা দিচ্ছেন অন্য হাত দিয়ে মুচছেন চোখের পানি। ঘরে খাবারের অপেক্ষায় ৫ মেয়ে ৩ ছেলে। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি স্বামী আহমেদ উল্লাহ (৫০)। আর ৮ সন্তান নিয়ে ঝুপড়ি ঘরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন বিবি খাদিজা।

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার নরোত্তমপুর ইউনিয়নের নরোত্তমপুর গ্রামের আব্দুল মুন্সি বাড়িতে ভাঙা টিন এবং পলিথিনে মোড়ানো ছোট্ট একটি ঘরে বসবাস করেন আহমেদ উল্লাহ ও বিবি খাদিজা দম্পতি। অভাবের পাশাপাশি ঝড়-বৃষ্টি আর শীতের সঙ্গে যুদ্ধ করে চলছে তাদের জীবন। বৃষ্টি হলে পানিতে ভেসে যায় ঘরের মেঝে। দিনের বেলায় পৌঁছে না সূর্যের আলো। ৮ সন্তানের মধ্যে বিবাহযোগ্য দুই মেয়ে থাকলেও ঘরের অভাবে বিয়ে হচ্ছে না তাদের।

স্থানীয়রা জানান, দিনমজুর আহমেদ উল্লাহ ইট ভাঙার মেশিনে কাজ করতেন। কয়েক বছর আগে দুর্ঘটনায় অপারেশন হয় তার। সবশেষে টঙ্গীর ইজতেমায় গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে মানুষজন তাকে সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসক জানিয়েছেন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত আহমেদ উল্লাহ। চিকিৎসার খরচ চালাতে না পারায় স্ত্রী বিবি খাদিজা মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে টাকা তুলছেন। একদিকে স্বামী ও অন্যদিকে ৮ সন্তানের চিন্তায় চোখে ঝাপসা দেখছেন বিবি খাদিজা। 

প্রতিবেশী তাজুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আহমদ বিশ্ব ইজতেমায় গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। চিকিৎসক জানিয়েছে তার ব্লাড ক্যান্সার। রাস্তাঘাট থেকে টাকা তুলে চিকিৎসা করানো হচ্ছে। এই টাকায় চিকিৎসাও হচ্ছে না অন্যদিকে ঘরে ৮ জন মানুষ প্রায় না খাওয়া। 

 বিবি খাদিজা

আহমদ উল্যাহর ভাই আবুল কালাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার ভাই অসুস্থ। বাচ্চাকাচ্চা রেখে গেছে। মানুষ চাল-ডাল দিলে তারপর রান্না হয়। একটা মেয়েকেও বিয়ে দিতে পারেনি। ঘরের অবস্থাও ভালো না। 

আহমদ উল্যাহর বোন বিবি কুলসুম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভাইয়ের আগেও অসুখ ছিল। অসুখে অসুখে তার সব শেষ। দুইটা মেয়ে বিয়ে উপযুক্ত কিন্তু ঘরের কারণে বিয়ে হচ্ছে না। ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে নিছি সবার থেকে চাঁদা তুলে। চিকিৎসার খরচ না চালাতে পারায় মিডফোর্ড হাসপাতালে আছে এখন। ডাক্তার বলসে ক্যান্সার। এখন কোনো চিকিৎসা চলে না। ভাই রোগেই শেষ হয়ে যাচ্ছেন। 

স্ত্রী বিবি খাদিজা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ৮ জন মানুষ ঘরে। চুলায় আগুন না দিলে কীভাবে তাদের মুখে খাবার দেব। স্বামী অসুস্থ। ঘর নাই দুয়ার নাই। এতগুলো ছেলে-মেয়ে নিয়ে কার দুয়ারে যামু। খুব অসুবিধার মধ্যে আছি। দুইটা মেয়ে মাথার ওপর কিন্তু বিয়ে দিতে পারছি না।

তিনি আরও বলেন, যে কাজ কর্ম করে খাওয়াবে সে হলো স্বামী। কিন্তু স্বামী এখন অসুস্থ। অন্যদের থেকে টাকা তুলে স্বামীর চিকিৎসা হচ্ছে। ৬টা মেয়ে ছিল একটা মেয়ে মারা গেছে। দুইটা মেয়ে বিয়ের জন্য উপযুক্ত কিন্তু ঘরের অভাবে বিয়ে হচ্ছে না। সুন্দর একটা জামা দিতে পারি না। স্কুলে পড়াতে পারি না। ওদের কোনো শখ নাই। সব আমাদের কপাল।

বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. ইয়াসীর আরাফাত ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন বাংলাদেশের একটি মানুষ ও গৃহহীন থাকবে না, সকলকে পর্যায়ক্রমে ঘর দেওয়া হবে। আপাতত বেগমগঞ্জে চারটি স্থানে কও শ্রেণির যাদের ঘর নাই ভূমি নাই তাদের জন্য ঘর নির্মাণের কাজ চলমান আছে। আমি জেনেছি পরিবারটির জায়গা আছে কিন্তু ঘর নেই, তারা হলো খ শ্রেণির। সামনে খ শ্রেণির বরাদ্দ আসলে আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ঘর বরাদ্দ দেব।

হাসিব আল আমিন/আরকে