থানচি উপজেলার প্রাণিসম্পদ কার্যালয়

বান্দরবানে থানচি উপজেলার প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের কর্মকর্তাসহ কর্মচারীরা দীর্ঘদিন ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত আছেন। এতে বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে বিভিন্ন প্রাণী। এমনকি অনলাইনে বেতন নেওয়ার সুযোগ থাকায় তাদের মাসে একবারও সশরীরে বেতন নিতেও অফিসে আসতে হয় না।

আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে চিকিৎসা না পাওয়ায় অজ্ঞাত রোগে শূকরসহ বিভিন্ন প্রাণী মারা গেলে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কার্যালয় বন্ধ রেখে দিনের পর দিন বেতন-ভাতা উত্তোলন করছেন। এর আগে এসব বিষয় নিয়ে স্থানীয়রা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর অভিযোগ দিলেও এর কোনো সুফল মেলেনি বলে অভিযোগ তাদের।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে চিকিৎসক না থাকার কারণে পর্যাপ্ত ওষুধ ও টিকা না পাওয়ার কারণে গত ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে এ পর্যন্ত উপজেলায় শতাধিক শূকরসহ বিভিন্ন প্রাণী মারা গেছে। উপজেলা সদরের মগক হেডম্যান পাড়া নিবাসী প্রু থুইচিং মারমা গত সপ্তাহের তার দুটি, অংসাথুই মারমার একটি, সদর ইউনিয়নের মহিলা মেম্বার নুচিং প্রু মারমার একটি ও ছাংদাকপাড়া নিবাসী পুথুই মারমার দুটি শূকর অজ্ঞাত রোগে মারা গেছে।

সদর ইউনিয়নের মহিলা মেম্বার নুচিং প্রু মারমাসহ অন্যরা জানান, অসুস্থ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কার্যালয়ের (পশু চিকিৎসক) কাছে গেলে অফিস বন্ধ পাওয়া যায়। তাই বিনা ওষুধ ও চিকিৎসায় আমাদের গৃহপালিত শূকরসহ ছাগল মারা গেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী কেউ নেই। স্থানীয় এক কর্মচারী ভেটেরিনারি ফিল্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট মেনসিং ম্রো জানান, এই কার্যালয়ের মোট কর্মকর্তাসহ পাঁচজন রয়েছেন। এর মধ্যে ভেটেরিনারি সার্জন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. খন্দকার মইনুল হুদা, কম্পিউটার অপারেটর কাম অফিস সহকারী মনোজ কুমার দে ও ভেটেরিনারি ফিল্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট কৃতিমান চাকমা যোগদানের পর থেকে মাসের এক দিন আসেন আর বেতন-ভাতা অনলাইনে নিয়ে যান। কর্মরত মণিকা চাকমাকে মাঝেমধ্যে প্রশিক্ষণ ও তিন কর্মকর্তার জন্য বেতন শিটে স্বাক্ষর করার জন্য থানচিতে আসতে দেখা যায়।

থানচি বাজারের ব্যবসায়ী নুরুল হক জানান, শূকর মারা যাওয়ার কারণে এখন শূকরের দাম বেড়ে গেছে। অনেকে বিক্রি করে দিচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. খন্দকার মইনুল হুদা ২০১৭ সালে থানচির প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে যোগদান করেছেন, তখন থেকে এক দিনও অফিসে বসেন না। কম্পিউটার অপারেটর কাম অফিস সহকারী মনোজ কুমার দে বান্দরবান সদরে হাফেজ ঘোনায় একটি মুদি দোকান পরিচালনা করেন এবং সেখানে বেশির ভাগ সময় কাটান।

এ ব্যাপারে ভেটেরিনারি সার্জন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. খন্দকার মইনুল হুদা ঢাকা পোস্টকে জানান, গৃহপালিত গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি ও শূকর বিভিন্ন রোগে মারা যাবে, তাতে আমার কিছু যায় আসে না।

এদিকে থানচি উপজেলা চারটি ইউনিয়নের বাসিন্দারা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের না থাকায় এবং গৃহপালিত শূকরসহ বিভিন্ন প্রাণী মারা যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

রিজভী রাহাত/এনএ