ইউসুফ ও আনোয়ার হোসেন মিরু

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মিরু অফিসের চেয়ার থেকে উঠে এসে যে বোতল নিয়েছেন সেটি ফেনসিডিল ছিল না বলে দাবি করেছেন মাদক ব্যবসায়ী ইউসুফ। 

তিনি বলেন, হাতীবান্ধা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মিরুকে মধুর বোতল দিয়েছি। আর আমার নামে থানায় কোনো মামলা নেই।

বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে হাতীবান্ধা উপজেলা পরিষদে ঘটনা তদন্তে সাক্ষ্য দেওয়ার পর বের হয়ে ইউসুফ সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। 

এদিকে ইউসুফের কাছ থেকে যে বোতল নিয়েছেন, সেটিকে মিরু আয়ুর্বেদিক ওষুধের বোতল বলে দাবি করেছেন। 

উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মিরু তদন্তের সাক্ষ্য দেওয়ার পর সাংবাদিকদের বলেন, যাকে মাদক ব্যবসায়ী বলা হচ্ছে সেই ইউসুফ আমার বাল্যকালের বন্ধু। তাই তার সঙ্গে শারীরিক সমস্যা বিষয়ক খোলামেলা কথা হতো। যেটি একেবারে গোপনীয় বিষয়। তাই অনেকটাই গোপনে তার কাছ থেকে বোতলটি নিয়েছি। 

ইউসুফের নামে একাধিক মাদক মামলা রয়েছে জানালে মিরু বলেন, এ বিষয়ে আমার জানা নেই ইউসুফ আমার বাল্যকালের বন্ধু এটাই বড় বিষয়। 

মাদক সেবন করতে আবাসিকে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি একজন জনপ্রতিনিধি। আবাসিকের নজুর সঙ্গে ওটাবসা থাকতেই পারে। সর্বোপরি সে আমার ভোটার। আমি জনপ্রতিনিধি। সব মানুষের সঙ্গেই ওঠাবসা করতে হয়। এটি কোনো বিষয় নয়।

স্থানীয়রা বলেন, একজন বলছে মধু আরেকজন বলছে আয়ুর্বেদিক ওষুধ। দুজনের কথা দুরকম।  তদন্ত করলে সঠিক তথ্য বেরিয়ে আসবে। 

জানা গেছে, সরকারি অফিসে বসে মাদক গ্রহণের ভিডিও ভাইরাল হলে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মিরুর বিরুদ্ধে বিভাগীয় কমিশনারের নির্দেশে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ঘটনা তদন্তে হাতীবান্ধা উপজেলা পরিষদে আসেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম। দায়িত্ব পাওয়ার পরপরই তিনি হাতীবান্ধা ছুটে গিয়ে তদন্ত শুরু করেন।

এ সময় ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মিরু, মাদক কারবারি ইউসুফসহ উপজেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে পৃথক পৃথকভাবে কথা বলেন তিনি। তবে তদন্তের স্বার্থে রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের কিছু বলেননি।

ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, ভাইস চেয়ারম্যান মিরু এলাকার একজন চিহ্নিত মাদক কারবারির কাছ থেকে ফেনসিডিলের বোতল অফিসের চেয়ার থেকে উঠে নিজের পকেটে নিচ্ছেন।

জানা গেছে, হাতীবান্ধা উপজেলা পরিষদের নতুন ভবনের নিচতলায় তার অফিস কক্ষ। ওই ভবনেই বসেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, ইউএনওসহ অন্য দপ্তরের কর্মকর্তারা। ফেনসিডিলের মতো মাদক নিয়ে নির্দিষ্ট সরবরাহকারী সরাসরি ওই ভবনে থাকা ভাইস চেয়ারম্যানের কক্ষে গিয়ে দীর্ঘ সময় বসে থাকেন। পরে ওই অফিসে লোক থাকায় মাদক কারবারির কাছে গিয়ে পকেটে ফেনসিডিলের বোতলটি নেন তিনি।

মোবাইলে ধারণ করা দুই মিনিট ৫৫ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, আনোয়ার হোসেন মিরু নিজের চেয়ার থেকে উঠে টয়লেটে প্রবেশ করেন। টেবিলের অন্য প্রান্তে তখন একজন পুরুষ ও একজন নারী বসে ছিলেন। টয়লেট থেকে বের হয়ে তিনি সোজা চলে যান টেবিল থেকে কিছুটা দূরে সোফার কাছে সেখানে বসা লুঙ্গি পরিহিত এক ব্যক্তির সামনে। কিছু সময় পর লুঙ্গির ভাঁজে লুকিয়ে রাখা একটি ফেনসিডিলের বোতল মিরুর হাতে তুলে দেন ওই ব্যক্তি। মিরু কিছুটা আড়াল করে সেই বোতল নিয়ে আবারও ঢুকে পড়েন টয়লেটে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভাইস চেয়ারম্যান মিরুকে যিনি ফেনসিডিলের বোতল দিয়েছেন তিনি উপজেলার টংভাঙ্গা ইউনিয়নের কানিপাড়া গ্রামের জাফর আলীর ছেলে ইউসুফ (৪২)। যার নামে একাধিক মাদক মামলা রয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজির হোসেন বলেন, ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্তে বিষয়টি প্রমাণিত হলে অবশ্যই বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

নিয়াজ আহমেদ সিপন/আরএআর