সাবেক প্রধানমন্ত্রী, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ মিজানুর রহমান চৌধুরীর ১৭তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ (২ ফেব্রুয়ারি)। ২০০৬ সালের এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন প্রথিতযশা এই পার্লামেন্টারিয়ান।

এ উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৭টায় মরহুমের কবরে ফাতেহা পাঠ ও দোয়ার মধ্য দিয়ে দিনের কর্মসূচি শুরু হয়। মরহুমের চাঁদপুর শহরের পুরান বাজারস্থ নিজ বাড়িতে কোরআন তিলাওয়াত এবং বাদ আসর সকল মসজিদে তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগের সকল স্তরের নেতাকর্মী, শুভাকাঙ্ক্ষী, আত্মীয়স্বজনসহ সর্বস্তরের জনসাধারণকে এ দোয়ায় অংশগ্রহণ করার জন্যে অনুরোধ জানিয়েছেন মিজানুর রহমান চৌধুরীর ছেলে আমানউল্লাহ মিজান রাজু চৌধুরী।

বাংলাদেশের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী ১৯২৮ সালের ১৯ অক্টোবর চাঁদপুরের পুরান বাজারস্থ পূর্ব শ্রীরামদী গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মরহুম মো. হাফিজ চৌধুরী এবং মাতা মরহুমা মোসাম্মৎ মাহমুদা বেগম।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায, মিজানুর রহমান চৌধুরী কলেজ থেকেই ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। ১৯৬২ সালে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৬২ থেকে ১৯৬৯ পর্যন্ত পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য ছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ যখন কারাগারে ছিলেন তখন তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৭ সালে তিনি নিজেও গ্রেপ্তার হন।

আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সময় তিনি সম্মিলিত বিরোধী দলের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। ১৯৭০-এর নির্বাচনে তিনি পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৩-এর সংসদেও তিনি সংসদ সদস্য ছিলেন। ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মন্ত্রিসভায় তিনি তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন।

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হলে আবদুল মালেক উকিল এবং মিজানুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের দুটি পৃথক ধারার সৃষ্টি হয়। আশির দশকের শুরুর দিকে মিজানুর রহমান চৌধুরী হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সামরিক সরকারকে সমর্থন দেন এবং ১৯৮৪ সালে তিনি জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন।

এরশাদের আমলে ১৯৮৬ সালের ৯ জুলাই থেকে ১৯৮৮ সালের ২৭ মার্চ পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯০ সালে এরশাদ ক্ষমতা ছেড়ে দিলে তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়।

এরশাদ জেলে থাকাকালীন মিজানুর রহমান চৌধুরী জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালে তিনি পুনরায় আওয়ামী লীগে যোগ দেন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ছিলেন।

আনোয়ারুল হক/এমজেইউ