প্রশাসনের সহযোগিতায় নিরপেক্ষ প্রভাবমুক্ত একটি কমিটি গঠন করে তাবলীগ জামায়েতের সার্বিক কার্যক্রম ও বিশ্ব ইজতেমা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য সাত দফা দাবি পেশ করেছেন বিশ্ব ইজতেমার সাদ কান্ধলভী অনুসারী সাথীরা।

বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) সকালে ইজতেমা ময়দানের পশ্চিম পাশে উত্তরায় একটি রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলনে ৭ দফা দাবি উপস্থাপন করেন। সম্মেলনে তাবলীগের দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজ অনুসারী অ্যাডভোকেট আব্দুল কুদ্দুস বাদল লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আগামী ২০২৪ সালে বিশ্বে ইজতেমার প্রথম পর্ব যেহেতু আমরা করবো, তাই বিশ্ব ইজতেমার মাঠ প্রশাসনের দায়িত্বে থাকবে। সংবাদ সম্মেলনে নানা অসঙ্গতি সংশোধনের জোর দাবি জানানোর পাশাপাশি ইনসাফ ভিত্তিক নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে সুষ্ঠ সমাধানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

দাবিগুলো হলো-
১.    আমাদের অনুরোধ বিশ্ব ইজতেমার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলেই মাঠের প্যান্ডেল নির্মাণ ও খোলার কাজ করবেন। প্রয়োজনে প্রশাসনের তদারকিতে উভয়পক্ষ বিশ্ব ইজতেমার ময়দান ব্যবহার করবেন।

২.    কাকরাইল ও বিশ্ব ইজতেমার মাঠ থেকে দুই মাদরাসাকে অন্য জায়গায় স্থানান্তর করা। শুধুমাত্র তাবলীগের কাজের জন্যই এই মাঠ ও কাকরাইল মসজিদ।

৩.    প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের অনুরোধ তাবলীগের সার্বিক কার্যক্রম ও বিশ্ব ইজতেমা সুষ্ঠভাবে পরিচালনায় প্রশাসনের সহযোগিতায় নিরপেক্ষ প্রভাবমুক্ত একটি কমিটি গঠন করা।

৪.    কাকরাইল মসজিদ পূর্বের মতো দিল্লির নিজামউদ্দিন মারকাজের অধীনে পরিচালনার যাবতীয় ব্যবস্থা করা।

৫.    দেশের সকল মসজিদে তাবলীগের সমস্ত কার্যক্রমের জন্য অনুমতি দেওয়া। ধর্মীয় কাজে বাধা দিলে ও অপপ্রচার চালালে সংবিধান মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা। দেশে স্বাধীনভাবে ধর্মীয় দাওয়াতি কাজ করার পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া।

৬.    টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমায় সকল মুরব্বিদের আসার বিষয়ে নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে।

৭.    বাংলাদেশের ধর্মীয় সম্প্রতি অক্ষুন্ন রাখতে ও দেশের শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে, তাবলীগের যাবতীয় কাজ পরিচালনায় হেফাজতসহ তৃতীয়পক্ষের রাজনৈতিক অবৈধ হন্তক্ষেপ বন্ধ করা। যাতে করে ইসলামের নামে কোনো পক্ষ সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমানকে তাবলীগের নামে কেউ ভুল বুঝিয়ে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে।

সাংবাদিকদের বলেন, সম্প্রতি সময়ে শেষ হলো বাংলাদেশের টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা। যেখানে তাবলীগের সাধারণ সাথীদের পাশাপাশি প্রায় ৯ হাজারের অধিক বিদেশি মেহমান দ্বিতীয় পর্বে উপস্থিত হয়েছিলেন। দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে দেশ-বিদেশে চার হাজারের অধিক জামাত দাওয়াতের কাজে বের হয়েছেন। যা সত্যিকারের বিশ্ব ইজতেমার রূপ লাভ করেছিল।

সাংবাদ সম্মেলনে মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারীরা আরও বলেন, সেখানে সরকার বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছে। কিন্তু পরবর্তী সময় বিশ্ব ইজতেমার ময়দান নিয়ে তাবলীগ জামাত বাংলাদেশ (বিশ্ব আমীর মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারী) এর সঙ্গে বরাবরের মতো বৈরি ও বৈষম্যপূর্ণ আচরণ করা হচ্ছে। ২০১৮ সালে তাবলীগের বিশ্ব মারকাজ দিল্লির নিজামুদ্দিনের অনুসারী মূলধারার তাবলীগের সাথীদের দ্বারা টঙ্গী মাঠকে সরল বিশ্বাসে প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করেছিল। কিন্তু হেফাজত সমর্থিত মাওলানা জুবায়ের সাহেবের গ্রুপকে রহস্যজনকভাবে এক তরফা ২০২৩ সাল পর্যন্ত টঙ্গী ময়দান মাদরাসা এলাকা, টিনশেড মসজিদ এবং গোডাউন এলাকা ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। যেখানে মুলধারার তাবলিগ সাথীদের কেবল প্রতিবছর বিশ্ব ইজতেমার জন্য ব্যবহার করতে কেবলমাত্র ৫ দিনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিশ্ব ইজতেমার মাঠে বিদ্যমান টিনশেডের পাশে আরেকটি সেড নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন কে বা কারা। তারা প্রশ্ন তুলেন এসব কার অনুমতিক্রমে করা হচ্ছে। এ বিষয়ে তাবলিগের মূল ধারার সাথীদের সঙ্গে কোনো প্রকার পরামর্শ করা হয়নি।

টঙ্গী ময়দানে তারা একচ্ছত্র অধিকার কে দিয়েছেন? এই বিশ্ব ইজতেমার মাঠ দিল্লির নিজামুদ্দিন বিশ্ব মারকাজ থেকে পরিচালিত তাবলীগ জামাতকেই দেওয়া হয়েছিল।

তারা সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন, গত ৪ বছর ধরে মাওলানা জুবায়ের গ্রুপকে ৪ সপ্তাহের জন্য কাকরাইল ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আর মূলধারার তাবলীগের সাথীদের মাত্র দুই সপ্তাহের জন্য ব্যবহার করছে। অথচ এহেন বিভাজনের কোনো আইনগত এমনকি নৈতিক ভিত্তিও নেই। আমাদের সাথে পরামর্শ না করে এবং হেফাজত সমর্থক এই বিচ্ছিন্ন তাবলীগের গ্রুপের মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে প্রশাসন এই এক তরফা বিভাজন করে আসছেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মিডিয়া সমন্বয়কারী মোহাম্মদ সায়েম, অ্যাডভোকেট ইউনুস মিয়া, মাওলানা সৈয়দ আনোয়ার আব্দুল্লাহ, সোহেল, আতাউল্লাহ্ প্রমুখ।

শিহাব খান/এমএএস