শরীয়তপুরে বোরো ধান চাষে ব্যস্ত সময় পার করেছেন কৃষকরা। কনকনে শীতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সোনালী বোরো ধান ফলাতে মাঠের পর মাঠজুড়ে চারা রোপণ করছেন তারা। জেলায় এ বছর কৃষকরা হাইব্রিড, উফশী ও স্থানীয় জাতের বোরো ধান চাষ করছেন। 

চলতি মৌসুমে শরীয়তপুরে ২৪ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিকে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। ২৪ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে ১ লাখ ১০ হাজার ৬০ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হবে বলে ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. রবীআহ নূর আহমেদ।

জানা গেছে, বোরো ধান উৎপাদনে কৃষকরা প্রথমে বীজ ধান পানিতে ভিজিয়ে নির্ধারিত বীজতলায় বপন করেন। তারপর ১৫ থেকে ২০ দিন পর বোরোর চারা বীজতলা থেকে উঠিয়ে প্রস্তুত করা জমিতে রোপন করতে হয়। চারা রোপণের ৫ মাস পর সোনালী ধান উৎপন্ন হয়। 

সদর উপজেলার দক্ষিণ আটংয়ের কৃষক নুরুল হক শিকদার (৭৫) ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি ৭০ কানি জমিতে পানি দেই। পাঁচ মাস পানি দেওয়ার পর পাঁচ ভাগের একভাগে ফসল আসে। কোনো বছর কাঁচি নিয়ে নামাও লাগা লাগে না। খালি হাতে ফিরে যেতে হয় বাড়িতে। বিদ্যুৎসহ সব কিছুর দাম বেশি।

উত্তর বালুচরার চাষি সোহাগ খান (২৬) ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রতি গন্ডা জমি দুই চাষ-এক মই দিয়ে আমি ৩৫০ টাকা নিই। আগে তেলের দাম ছিল ৭০ টাকা। এখন জমি পর্যন্ত তেল আনতে প্রতি লিটারে ১২০ টাকা খরচ হয়। আগে তেলের দাম কম থাকার কারণে লাভ বেশি হতো। এখন লাভ হয় কম।

কাগধি এলাকার খালেক খান (৬০) নামে একজন কৃষক জানান, জমিতে প্রথমে পানি দিয়ে চাষ দিতে হয়। একদিন পর একদিন করে মোট তিন বার চাষ দিয়ে কোদালের সাহায্যে আইল কোপাতে হয়। তারপর মই দেওয়া শেষে সার দেওয়ার পর জমি বীজ রোপণের উপযোগী হয়।

কৃষক আবুল কাসেম (৬৪) ঢাকা পোস্টকে বলেন, ৪৮ শতাংশ জমিতে ১০ কেজি ধানের চারা প্রয়োজন হয়। প্রতি ২ শতাংশ জমির বীজতলা তৈরি করতে জমির মালিককে ৫০০ টাকা দিতে হয়। ১০ কেজি ধানে ৬০০ মুঠো চারা হয়। ১০০ মুঠো চারা তুলতে ১৫০ টাকা আর ধৌত করতে খরচ হয় ১০০ টাকা। এক মণ ধান উৎপাদনে প্রচুর খরচ। ১ হাজার ৫০০ টাকা প্রতি মণ ধানের দাম হলে আমরা পরিবার নিয়ে চলতে পারি।

হাানিফ মৃধা (৫২) নামে একজন কৃষক বলেন, প্রতি মণ ধান তৈরিতে ১ হাজার টাকা খরচ হয়। তারপরও নিজেদের জমি খিল (অনাবদি) রাখা যাবে না। নিজেদেরটা নিজেরাই চাষ করি। আমার ৪০ শতাংশ জমি আছে, ব্লকের শেয়ার পরিশোধ করে আমি ৩০ মণ ধান পাই। এতে পরিবারের চালের চাহিদা পূরণ হয়ে যায়।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. রবীআহ নূর আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা আশা করছি এ বছর শরীয়তপুরে ১ লাখ ১০ হাজার ৬০ মেট্রিক টন ধান উৎপাদিত হবে। ইতোমধ্যেই প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে ধান রোপণ কার্যক্রম শেষ হয়েছে। বাদ বাকি মাঠে যে সরিষা এবং আলু রয়েছে সেগুলো কাটা শেষ হলে আমরা লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে ফেলতে পারব।

তিনি বলেন, আমরা সরকারি পর্যায় থেকে এ বছর কৃষকদেরকে সদর ও ডামুড্যায় ৫০ একরের দুটি সমলয় স্থাপন করে দিয়েছি। কৃষকদেরকে আমরা সার-বীজ দিয়ে চারা উৎপাদন সহায়তা করেছি। কৃষকদের প্রযুক্তিগত সহায়তার পাশাপাশি পরিচর্চাগত সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। মাঠে যেসকল কৃষি কর্মকর্তারা রয়েছেন, তারা সর্বদা কৃষকদের পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছেন।

আরএআর