অভিযুক্ত আব্দুস সাদিক

নীলফামারী জেলা প্রশাসক (ডিসি) কার্যালয়ে ওয়াজ মাহফিলের অনুমতির কাগজ দেওয়ার সময় অফিস সহকারী আব্দুস সাদিকের টাকা নেওয়ার ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তা মুহূর্তের মধ্যেই ভাইরাল হয়ে যায়। বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) ঘটে যাওয়া ঘটনাটি নিয়ে সম্প্রতি পুরো জেলায় তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জলঢাকা উপজেলার দক্ষিণ দেশীবাই রাজারহাট কাবাদি রহমানিয়া নুরানি ও হাফিজিয়া মাদরাসার উদ্যোগে তিন দিনব্যাপী তাফসিরুল কোরআন মাহফিল অনুষ্ঠানের অনুমতির কাগজের জন্য জেলা প্রশাসক (ডিসি) কার্যালয়ের জেএম শাখায় আবেদন করেন  মাদরাসার সভাপতি মো. ওয়াহিদুর রহমান। তবে কয়েকদিন ধরে অনুমতির কাগজটির জন্য অফিস সহকারী আব্দুস সাদিক তাকে হয়রানিসহ অর্থ দাবি করেন। পরে স্থানীয় বাসিন্দা ও সাংবাদিক আব্দুল মালেক কাগজটি আনতে গেলে তার কাছেও অর্থ দাবি করেন সাদিক। টাকা নেওয়ার বিষয়টি মেনে নিতে না পেরে ভিডিও করে রাখেন সাংবাদিক আব্দুল মালেক। পরে সেই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

অভিযুক্ত আব্দুস সাদিক জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের জেএম শাখায় অফিস সহকারী-কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে কর্মরত। এর আগে তিনি একই কার্যালয়ের সংস্থাপন শাখায় কর্মরত ছিলেন। তিনি ২০১১ সালের ২০ এপ্রিল চাকরিতে যোগদান করেন।

ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওতে আব্দুস সাদিককে বলতে শোনা যায়, ‘৫০০ টাকার কমে অফ টাইমে কোনো কাজ হবে না। আপনি যদি চান পেপারে উঠিয়ে দেবেন, তাও দেন আমরা চাচ্ছি ওটা। কারণ আমাদের ইমিডিয়েটলি বদলি নেওয়ার কথা এই শাখা থেকে। হয় ভালো সেকশন দিবে আমাদের না হয় রেকর্ড রুম দিবে। আমরা নির্বাচনে, দ্বাদশ নির্বাচনে রেকর্ড রুমে বসে টাকা খাব কয়েকটা দিন। টার্গেট আমাদের, না হলে নির্বাচন অন্য কাহো করুক। ’

এ সময় অপর দিক থেকে সাংবাদিক মালেক ২০০ টাকা দেওয়ার কথা বললে তিনি বলেন, ২০০ টাকায় কোনো কাজ হবে না।

পরে ভুক্তভোগী ব্যক্তি আবারও জিজ্ঞাসা করেন, ‘কত টাকা হলে কাজ হবে। উত্তরে ওই অফিস সহকারী বলেন, ৫০০ টাকার কথা কইছি তোক, রাত ১০টার মধ্যে ওয়াজ মাহফিলের অনুমতি দিয়ে তোক তারপর বাড়ি যাব। সেই রকম লোক আমরা।

অফিস সহকারী আরও বলেন, ‘দে দে টাকা দে টাকা দে- রাত ১০টা হইলো কাম হইবে। ৫০০ আর মোর হাতোত দিবো ১০০ এলায় কাম হইবে।

পরে ভুক্তভোগী ব্যক্তি ৫০০ টাকা দিলে তিনি আরও ১০০ টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে না চাইলে অফিস সহকারী আব্দুস সাদিক বলেন, ‘তাহলে তোর কাজও হবে না, তো চিঠি অর্ধেক সই হয়া ওই যে ক্যান্টিন পর্যন্ত নিগি থুইবে।’

এ বিষয়ে সাংবাদিক আব্দুল মালেক ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার বাড়ির পাশের মাদরাসায় তিন দিনব্যাপী ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। মাহফিলের অনুমতি নেওয়ার জন্য ডিসি মহোদয়ের ওখানে আবেদন করা হয়। আবেদনের প্রেক্ষিতে ওই অফিসে যাওয়া হয়। প্রথমে এসপি অফিস পাঠাইছে, তারপর এসপি অফিস থেকে আবার ওই অফিসে পাঠাইছে। কয়েকদিন ধরে কাগজটির জন্য আমিসহ অনেকেই ঘুরছি। টাকার জন্য অনুমতির কাগজটি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। গত বৃহস্পতিবার কাগজটির জন্য আমি গেলে আমাকেও বলা হয় টাকা ছাড়া কোনো কাজ হবে না। মহৎ একটা কাজেও উনি টাকা নেবেন দেখে আমি ভিডিও ধারণ করি। সবাই ভিডিওতে দেখেছেন উনি কী বলেছেন। আমি একজন সংবাদকর্মী। সংবাদকর্মী হয়েও যদি জেলা প্রশাসনের কর্মচারী আমার কাছে ঘুষ চায়, তার কাছে হেয় হই, তাহলে কেমন হয়? আমি এটার সুষ্ঠু বিহিত চাই।

জানতে চাইলে অভিযুক্ত আব্দুস সাদিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘এটা ডিলিট করার কোনো উপায় নাই? আমি ঘুষ নেইনি। উনি নিজে টাকা দিয়ে নিজেই ভিডিও করেছেন। যেন পরে চাঁদা দাবি করতে পারেন। পরেতো ভাইরাল করে দিলো।’

নীলফামারী জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভিডিওটি খুব আপত্তিকর। তার বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

শরিফুল ইসলাম/আরকে