চা একটি সুস্বাদু পানীয় খাদ্য। দেশের প্রতিটি অঞ্চলে এখন চায়ের কদর বেশি। আমরা সাধারণত ব্ল্যাক টি পান করে থাকি। এর মধ্যে স্পেশাল কিছু চা রয়েছে যেমন গ্রিন টি, লেমন টি ইত্যাদি। এসব চায়ের মধ্যে দেশে সর্বপ্রথম নতুন করে উৎপাদন করা হচ্ছে ইয়েলো টি। একটি কুঁড়ি, একটি পাতা দিয়ে এই চা উৎপাদন করা হচ্ছে হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার পুটিজুরি ইউনিয়নের বৃন্দাবন চা-বাগানে। এর পাশাপাশি তারা উৎপাদন করছে হোয়াইট টি নামে আরও একটি চা, যার চাহিদা দেশে ব্যাপক।

হোয়াইট টি জেলার ২৪টি বাগানের মধ্যে প্রথম হলেও ইয়েলো টি দেশে প্রথম উৎপাদন করা হচ্ছে বলে দাবি করেন বৃন্দাবন চা-বাগানের ব্যবস্থাপক নাসির উদ্দীন খান। আর চা গবেষকরা বলছেন, মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে স্পেশাল টির চাহিদা বেড়েছে। পাশাপাশি বৈদেশিক বাজারে রফতানির সুযোগ রয়েছে।

সোমবার (১৫ মার্চ) আনুষ্ঠানিকভাবে চট্টগ্রামে নিলামে উঠছে ইয়েলো টি, যার দাম ধরা হয়েছে প্রতি কেজি ৬ হাজার ৫০০ টাকা।

১৯২০ সালে প্রতিষ্ঠিত বৃন্দাবন চা-বাগানের আয়তন প্রায় ১১৮৩ দশমিক ৩৭ একর। প্রায় এক হাজার শ্রমিক এখানে কাজ করছেন। ১০০ বছরের পুরোনো বাগানে সাধারণ চায়ের পাশাপাশি বিভিন্ন পদ্ধতিতে হোয়াইট টি তৈরির পর এবার ইয়েলো টি তৈরি করে সাড়া জাগিয়েছে। প্রথম দিকে পরীক্ষামূলকভাবে ইয়েলো টি উৎপাদন করলেও এখন বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করছে প্রতিষ্ঠানটি।

সরেজমিনে বাগানে দেখা গেছে ইয়েলো টি উৎপাদনের কলাকৌশল। প্রথমে চা-শ্রমিকরা বাগান থেকে একটি কুঁড়ি ও একটি পাতা উত্তোলন করেন। পরে তাদের নিজস্ব ল্যাবরেটরিতে ম্যানুফ্যাক্সারিংয়ের মাধ্যমে ইয়েলো টি উৎপাদন করা হয়।

বাগানের শ্রমিক কল্পনা গোয়ালা ঢাকা পোস্টকে জানান, হোয়াইট টি উৎপাদনের জন্য আমরা শুধু একটি কুঁড়ি সংগ্রহ করি। আর ইয়েলো টি উৎপাদনের জন্য একটি কুঁড়ি ও একটি পাতা সংগ্রহ করি। পরে কোম্পানি সেগুলা বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হোয়াইট ও ইয়েলো টি উৎপাদন করছে। আমরা কোম্পানির মালিকের কথামতো কাজ করে থাকি।

একই বাগানের শ্রমিক ময়ূরী সাঁওতাল জানান, বাগানে হোয়াইট টি উৎপাদনে আমরা খুশি, আমাদের ভালো লাগছে। অপর শ্রমিক ছনু ছাষা জানান, এখন কিছু হোয়াইট টি উৎপাদন করছি। কিছুদিন পর আরও বেশি করে ইয়েলো টি উৎপাদন করা হবে।

বাগানের ব্যবস্থাপক নাসির উদ্দীন খান ঢাকা পোস্টকে জানান, প্রথমে ইউটিউব দেখে হোয়াইট টি উৎপাদন করেছিলাম। প্রথম দিকে পরীক্ষামূলকভাবে উৎপাদন করলে এখন বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা সম্ভব হবে। এরপর একটি কুঁড়ি একটি পাতা দিয়ে ইয়েলো টি উৎপাদন করেছি। ইয়েলো টির বাইরে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করলে দেশে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।

তিনি বলেন, বাণিজ্যিকভাবে সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে চট্টগ্রামে নিলামে উঠছে ইয়েলো টি। যার বাজারমূল্য ধরা হয়েছে প্রতি কেজি ৬ হাজার ৫০০ টাকা। তিনি আরও বলেন, অনেক বায়ার ইয়েলো টি নেওয়ার জন্য বসে আছেন, অনেকেই আবার ফোন করে ইয়েলো টি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

দেশে বৃন্দাবন চা-বাগানে প্রথম ইয়েলো টি উৎপাদন করছে। এ বছর তাদের বাণিজ্যিকভাবে ৫০০ কেজি ইয়েলো টি উৎপাদনের টার্গেট রয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবস্থাপক নাসির উদ্দীন।

ইয়েলো টি উৎপাদনের খবর শুনে দেশে ব্যাপক সাড়া পড়েছে জানিয়ে নাসির উদ্দীন বলেন, ইয়েলো টি দেশের ৬ হাজার ৫০০ টাকা কেজি হলেও বিদেশে কয়েক গুণ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, ভারতে ইয়েলো টি প্রতি কেজি ৭৫ হাজার রুপি অর্থাৎ বাংলাদেশি টাকায় এক লাখ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে বলেও তিনি জানান। এ ছাড়া ইউরোপের দেশে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

হোয়াইট কিংবা ইয়েলো টি উৎপাদনের জন্য আলাদা কোনো গাছ রোপণ করতে হয়নি। একই গাছ থেকে শুধু প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে স্পেশাল টি উৎপাদন করা সম্ভব হবে বলেও জানান তিনি।

চা গবেষক মাহামুদ হাসান প্রিন্স ঢাকা পোস্টকে জানান, বাগান থেকে শুধু প্রক্রিয়াজাত করে আরও উন্নত ও স্বাস্থ্যকর চা উৎপাদন করা সম্ভব, যা বেশি দামে বিক্রি করা যাচ্ছে। পৃথিবীর অনেক দেশ স্পেশাল টি বা হাইভ্যালু টি উৎপাদন করছে। এর মধ্যে রয়েছে গ্রিন টি, ইয়েলো টি, পারফল টি, রোজ টি, লেমন টি ইত্যাদি। আমাদের দেশেও মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের পাশাপাশি স্পেশাল টির চাহিদা বাড়ছে। ইয়েলো টি দেশের চাহিদা মিটিয়ে রফতানির ভালো সুযোগ রয়েছে।

তিনি বলেন, ইয়েলো টির স্বাদ অন্যান্য চায়ের থেকে আলাদা। এর গন্ধ ভালো। এ ধরনের চা এর আগে দেশে কখনো হয়নি। ইয়েলো টি নতুনত্ব তৈরি করবে এবং দেশের অন্য চা-বাগানগুলো ইয়েলো টি উৎপাদনে এগিয়ে আসবে।

বাহুবল উপজেলার পুটিজুরি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান মো. মুদ্দত আলী ঢাকা পোস্টকে জানান, ইয়েলো টি উৎপাদনে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে বাগানটি। এ চায়ের কদর অত্যন্ত ব্যাপক। নিলামে ওঠার আগেই অনেক ক্রেতা অপেক্ষায় আছেন কেনার জন্য। আমরা এই চা বিদেশের শুনলেও আমার ইউনিয়নে হচ্ছে শুনে বেশ ভালো লাগছে। দেশের অন্য চা-বাগানগুলো বিশেষ টি উৎপাদনে এগিয়ে এলে প্রতিযোগিতামূলক বাজার তৈরি হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

এনএ