ভুল চিকিৎসার মাধ্যমে চোখের লেজার অপারেশন করায় কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজের ডা. মাহজাবীন হক মাশা’র চোখের দৃষ্টিশক্তি ৩৩ ভাগ নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঘটনায় অবশেষে ক্ষমা চাইলেন ঢাকাস্থ দীন মোহাম্মদ আই হসপিতাল অ্যান্ড রিসার্স সেন্টারের রেটিনা রোগ বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. দীপক কুমার নাগ। 

গতকাল রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য এক সমঝোতা বৈঠকে এ ক্ষমা প্রার্থনা করেন তিনি। এসময় উভয়পক্ষ আদালতে মামলা সংক্রান্ত সকল বিষয় প্রত্যাহার করে নেওয়ারও ঘোষণা দেন। 
    
এ সময় বাংলাদেশ মেডিকেল কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ এবং সমাজকল্যাণ বিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা চক্ষু বিশেষজ্ঞ সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী মীর্জা আজম এমপি, দীন মোহাম্মদ আই হসপিতাল অ্যান্ড রিসার্স সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. দীন মো. নুরুল হক, এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি ও ময়মনসিংহ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আমিনুল হক শামীম, পরিপ্রেক্ষিতের নির্বাহী পরিচালক ও বাংলা ইনসাইডারের প্রধান সম্পাদক সৈয়দ বোরহান কবীর, রেটিনা রোগ বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. দীপক কুমার নাগ, ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক অমিত রায়, ময়মনসিংহে কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের ওসি শাহ কামাল আকন্দ ও ভুক্তভোগী ডা. মাহজাবিন হক মাশা উপস্থিত ছিলেন। 

ভুক্তভোগী ডা. মাহজাবিন হক মাশা এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি ও ময়মনসিংহ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আমিনুল হক শামীম সিআইপির বড় মেয়ে এবং ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র ইকরামুল হক টিটুর ভাতিজি। 

প্রসঙ্গত, গত বছরের জুন মাসে মাশার চোখের সমস্যা হওয়ায় দীন মোহাম্মদ আই হসপিতাল অ্যান্ড রিসার্স সেন্টারে রেটিনা চক্ষু বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. দীপক নাগের চিকিৎসা নেন। এসময় মাশার চোখে লেজার প্রতিস্থাপন করেন তিনি। তবে লেজার লাগানোর পর চোখে অন্ধকার দেখা শুরু করে ভুক্তভোগী মাশা। পরে ভুক্তভোগীকে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা জানান লেজার স্থাপনের কারণে তার চোখের ৩৩ ভাগ রেটিনা নষ্ট হয়ে গেছে। এরপর ভুক্তভোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখানেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানান, ভুল চিকিৎসার কারণে মাশার চোখের রেটিনার ৩৩ ভাগ নষ্ট হয়ে গেছে।

এরপর ডা. মাহজাবীন হক মাশা’র বড় ভাই এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক মো. সামিউল হক সাফা বাদী হয়ে ১০ আগস্ট ময়মনসিংহের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অপচিকিৎসার অভিযোগ করেন। আদালতের বিচারক আব্দুল হাই অভিযোগ আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা নথিভুক্ত করার নির্দেশ দেন। 

এ নিয়ে ১১ আগস্ট ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী ডা. মাহজাবীন হক মাশা অভিযুক্ত রেটিনা রোগ বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. দীপক কুমার নাগের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করেন। ওই চিকিৎসকের বিচার দাবিতে ময়মনসিংহ নগরীর টাউনহল মোড় থেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার সড়কের দু’পাশে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য, স্বজন ও এলাকাবাসী। ডা. দীপক কুমার নাগ জামিন নিয়ে আইনী প্রক্রিয়ার মধ্যে ছিলেন।

উবায়দুল হক/এমএএস