রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে বিভিন্ন সময়ে ওঠা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে হাসপাতালটিতে অভিযান পরিচালনা করেছে দুদকের একটি প্রতিনিধি দল।
 
দুদকের রংপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক বেলাল হোসেনের নেতৃত্বে দুদকের চার কর্মকর্তাসহ সাতজন এ অভিযানে অংশ নেন। প্রায় চার ঘণ্টার অভিযানে তদন্ত দলটি হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, আউটডোর, বিভিন্ন ওয়ার্ডের রোগী ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন।
 
এ সময় সংকটাপন্ন রোগীদের ট্রলিতে করে ওয়ার্ডে পৌঁছে দিতে বকশিশ প্রদান, জরুরি বিভাগে অতিরিক্ত টাকা আদায়সহ সরকারি এই হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা পেতে পদে পদে রোগী ও স্বজনদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের অভিযোগের সত্যতা পান দুদকের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।

এরপর তারা হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আ.ম আখতারুজ্জামানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে হাসপাতালের বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়টি তুলে ধরেন। হাসপাতালের উপ-পরিচালক সমস্যা নিরসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন।  

এ ব্যাপারে দুদকের রংপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক বেলাল হোসেন বলেন, ঢাকা অফিস থেকে গত ৫ ফেব্রুয়ারি রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেটি তদন্তে আমরা এসেছিলাম। এখানে সেবা নিতে কর্মচারীদের বকশিশ দিতে হয়- এমন অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। সেই সঙ্গে ওয়ার্ডগুলোতে রোগীরা ঠিকমতো সেবা পাচ্ছে না। আমরা এসব বিষয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। সেই সঙ্গে তদন্ত প্রতিবেদন আমরা ঢাকায় পাঠাবো। এরপর প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
 
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আ.ম আখতারুজ্জামান বলেন, দুদকের কর্মকর্তারা হাসপাতালের বিভিন্ন অনিয়মের কথা তুলে ধরেছেন। আমি ও পরিচালক স্যার এ হাসপাতালে নতুন এসেছি। আমরা দুজনে বসে সেই সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করছি।
 
প্রসঙ্গত, রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে রোগী ও তাদের স্বজনদের হয়রানির ঘটনা  নিত্যদিনের। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া থেকে শুরু করে রোগীর মৃত্যুর পরও কান্নায় দিশেহারা স্বজনদের গুনতে হয় ‘বকশিশ’ নামের উৎকোচ। বকশিশ ছাড়া সেবা পাওয়াই কঠিন এ হাসপাতালে।

বকশিশ না পেলে রোগীর স্বজনদের ওপর চড়াও হওয়া থেকে শুরু করে মারধরের ঘটনা ঘটে প্রতিনিয়ত। এখানকার কর্মচারী, দালাল এবং বিভিন্ন পরিচয়ে দাপিয়ে বেড়ানো বকশিস সিন্ডিকেট চক্রের সদস্যদের কাছে সবাই যেন জিম্মি।

গত বছর হাসপাতালের অর্থোসার্জারি বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট চিকিৎসক এ.বি.এম রাশেদুল আমীরও বকশিশ সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়েছিলেন। তার কাছে বকশিশ দাবি করেছিলেন কয়েকজন কর্মচারী। সেই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছিল।

ওই ঘটনার পর হাসপাতালের চুক্তিভিত্তিক দুজন কর্মচারী মাসুদ হোসেন ও ঝর্ণা বেগমকে সাময়িক বরখাস্ত করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এর কিছু দিন পর হাসপাতালের উপ-পরিচালক ও দুই সহকারী পরিচালকসহ তিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বদলি করে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। এছাড়া ১২ জন অফিস সহায়ক, একজন স্টোনো টাইপিস্ট, একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী, একজন নিরাপত্তা প্রহরী এবং একজন ওয়ার্ড মাস্টারকে বদলি করা হয়।
 
এরপর কয়েক মাস রোগী ও স্বজনরা বকশিশ সিন্ডিকেট চক্রের কাছ থেকে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেও আবার চক্রটি সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরাসহ চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা পরিচালকের অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ তুলে আন্দোলন করেন। এরপর পরিচালক ডা. শরিফুল হাসানকে রংপুর মেডিকেল হাসপাতাল থেকে বদলি করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়।   

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/রংপুর