নীলফামারী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের অফিস সহকারী আব্দুস সাদিকের টাকা নেওয়ার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট চৌধুরী মুস্তাফিজুর রহমানকে তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও সাদিককে জুডিশিয়াল মুন্সিখানা (জেএম) শাখার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে সাময়িক লাইব্রেরি শাখায় দেওয়া হয়েছে। 

সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) তাফসিরুল কোরআন মাহফিলের অনুমতির জন্য দাখিলকৃত আবেদনের বিষয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের জুডিশিয়াল মুন্সিখানা শাখার অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক আব্দুস সাদিক সেবা প্রদানের জন্য অন্যায়ভাবে অর্থ দাবি করেন। এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার বিষয়টি তদন্তের জন্য সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট চৌধুরী মুস্তাফিজুর রহমানকে তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে।

এছাড়াও এ বিষয়ে তদন্তের জন্য আগামীকাল মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায়  শুনানি গ্রহণ করা হবে। শুনানিতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের জুডিশিয়াল মুন্সিখানা (জেএম) শাখার সহকারী কমিশনার মো. নাহিদুল হক, জুডিশিয়াল মুন্সিখানা (জেএম) শাখার অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক মো. আব্দুস সাদিক, মো. শফিকুল ইসলাম, মো. ফাহিম রাব্বি, সাধারণ শাখার অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক মো. আনোয়ারুল ইসলাম, জুডিশিয়াল মুন্সিখানা (জেএম) শাখার জারিকারক মো. আফতাব উদ্দিন, অফিস সহায়ক মো. মোশারফ হোসেন ও দক্ষিণ দেশীবাই রাজারহাট কাবানী রহমানিয়া নুরানি ও হাফিজিয়া মাদরাসার সভাপতি আলহাজ মো. ওয়াহিদুর রহমানকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।

সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও তদন্তকারী কর্মকর্তা চৌধুরী মুস্তাফিজুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাকে এ ঘটনা তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিধি মোতাবেক তদন্ত করে দ্রুত সময়ের মধ্যে জেলা প্রশাসক বরারর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিব।

জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ ঢাকা পোস্টকে বলেন, তাকে তার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে জেএম শাখা থেকে লাইব্রেরি শাখায় দেওয়া হয়েছে। তদন্ত চলছে।

এর আগে জলঢাকা উপজেলার দক্ষিণ দেশীবাই রাজারহাট কাবাদি রহমানিয়া নুরানি ও হাফিজিয়া মাদরাসার হাফেজ ছাত্রদের পাগড়ি প্রদান উপলক্ষে তাফসিরুল কোরআন মাহফিল অনুষ্ঠানের অনুমতির কাগজের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের আবেদন করেন মাদরাসার সভাপতি মো. ওয়াহিদুর রহমান। তবে কয়েক দিন ধরে অনুমতির কাগজটির জন্য অফিস সহকারী আব্দুস সাদিক তাকে হয়রানিসহ অর্থ দাবি করেন। পরে স্থানীয় বাসিন্দা ও সাংবাদিক আব্দুল মালেক কাগজটি আনতে গেলে তার কাছেও অর্থ দাবি করেন সাদিক। টাকা নেওয়ার বিষয়টি মেনে নিতে না পেরে ভিডিও করে রাখেন সাংবাদিক আব্দুল মালেক। পরে সেই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তা মুহূর্তের মধ্যেই ভাইরাল হয়ে ঘটনাটি নিয়ে সম্প্রতি পুরো জেলায় তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়।

এ নিয়ে সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে জনপ্রিয় নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্টে ‘দ্বাদশ নির্বাচনে রেকর্ড রুমে বসে টাকা খাব কয়েকটা দিন’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করে।

অভিযুক্ত আব্দুস সাদিক জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের জেএম শাখায় অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে কর্মরত। এর আগে তিনি একই কার্যালয়ের সংস্থাপন শাখায় কর্মরত ছিলেন। তিনি ২০১১ সালের ২০ এপ্রিল চাকরিতে যোগদান করেন।

ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওতে আব্দুস সাদিককে বলতে শোনা যায়, ‘৫০০ টাকার কমে অফ টাইমে কোনো কাজ হবে না। আপনি যদি চান পেপারে উঠিয়ে দেবেন, তাও দেন আমরা চাচ্ছি ওটা। কারণ আমাদের ইমিডিয়েটলি বদলি নেওয়ার কথা এই শাখা থেকে। হয় ভালো সেকশন দিবে আমাদের না হয় রেকর্ড রুম দিবে। আমরা নির্বাচনে, দ্বাদশ নির্বাচনে রেকর্ড রুমে বসে টাকা খাব কয়েকটা দিন। টার্গেট আমাদের, না হলে নির্বাচন অন্য কাহো করুক। ’

এ সময় অপর দিক থেকে সাংবাদিক মালেক ২০০ টাকা দেওয়ার কথা বললে তিনি বলেন, ২০০ টাকায় কোনো কাজ হবে না।

পরে ভুক্তভোগী ব্যক্তি আবারও জিজ্ঞাসা করেন, ‘কত টাকা হলে কাজ হবে। উত্তরে ওই অফিস সহকারী বলেন, ৫০০ টাকার কথা কইছি তোক, রাত ১০টার মধ্যে ওয়াজ মাহফিলের অনুমতি দিয়ে তোক তারপর বাড়ি যাব। সেই রকম লোক আমরা।’

অফিস সহকারী আরও বলেন, ‘দে দে টাকা দে টাকা দে- রাত ১০টা হইলো কাম হইবে। ৫০০ আর মোর হাতোত দিবো ১০০ এলায় কাম হইবে।’

পরে ভুক্তভোগী ব্যক্তি ৫০০ টাকা দিলে তিনি আরও ১০০ টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে না চাইলে অফিস সহকারী আব্দুস সাদিক বলেন, ‘তাহলে তোর কাজও হবে না, তো চিঠি অর্ধেক সই হয়া ওই যে ক্যান্টিন পর্যন্ত নিগি থুইবে।’

শরিফুল ইসলাম/আরএআর