শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সরকারি ওষুধ আনতে গিয়ে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর সঙ্গে বাদানুবাদে জড়ানোর ঘটনার প্রতিবাদে পাঁচ ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করেছেন ইন্টার্ন নার্সরা। সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে এই কর্মসূচি পালন করেন তারা। এতে জরুরি বিভাগে আসা রোগীরা ভোগান্তিতে পড়েন।

ইন্টার্ন নার্সদের অভিযোগ, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ইফাত সেরনিয়াবাত ওষুধ আনতে যাওয়া নার্সের সঙ্গে অসদাচারণ করেন এবং তার স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেন। আন্দোলনে নামার কিছু সময় পর অভিযুক্ত ইফাত সেরনিয়াবাতকে সাময়িক অব্যাহতি দিয়েছে হাসপাতাল প্রশাসন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে দিয়েছি। প্রতিবেদন পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে হাসপাতালের উপ-পরিচালাক (প্রশাসন) ডা. মনিরুজ্জামান শাহিনকে। মেডিসিন বিভাগের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মানবেন্দ্র সরকার ও ডা. নুরুন্নবী তুহিনকে সদস্য করা হয়েছে। 

জানা গেছে, সোমবার সাড়ে ১০টার দিকে সরকারি নার্সিং ইনস্টিটিউটের মিডওয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী হাসপাতালে ওষুধ আনতে যান। তিনি চিকিৎসকের স্লিপ দিয়ে ওষুধ সরবরাহ কেন্দ্র থেকে ওষুধ নেন। সেই সঙ্গে কিছু বেশি ওষুধও নিয়ে রওয়ানা হন। এ সময়ে ওষুধ বিতরণ কেন্দ্রে দায়িত্বরত চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ইফাত সেরনিয়াবাত ওষুধ নিতে আসা ওই ছাত্রীকে বাধা দেন। 

ইফাত সেরনিয়াবাত বলেন, আমি শুধু বলেছি আপা অতিরিক্ত ওষুধ নিলে অন্য রোগীরা পাবে না। আপনি অতিরিক্ত ওষুধ নেবেন না। আপনি এই হাসপাতালের ছাত্রী, আপনি যদি এমন আচরণ করেন অন্যরা কি করবে। এতে সেই ছাত্রী অযথাই আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তিনি আমার মা-বাবা তুলে খারাপ কথা বলেন। তখন আমি তার কথার প্রতিবাদ করলে ক্ষিপ্ত হন। এজন্য আমি তার আইডি কার্ডের ছবি মোবাইলে তুলে রেখে বলেছি, আপনার (নার্সিংয়ের ছাত্রী) বিষয়ে নার্সিং সুপারের কাছে বিচার দিব। এরপরে সেই ছাত্রী এমনভাবে চেঁচামেচি শুরু করেন শেষে ঘটনাস্থল থেকে আমি চলে যাই। এখন আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তুলছে তা সম্পূর্ণ সাজানো এবং মিথ্যা।

তবে আন্দোলনরতরা দাবি করেছেন, ওষুধ নেওয়ার সময়ে নার্সিংয়ের ছাত্রী তার পরিচয় জানিয়েছেন এবং আইডি কার্ড দেখিয়েছেন। কিন্তু ইফাত সেরনিয়াবাত আইডিকার্ড ধরতে গিয়ে স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেন।  এছাড়া তিনি ওই নার্সের  অ্যাপ্রোনের কলার ধরে টান দেন।

নার্সিং ইনস্টিটিউটের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী জয়ন্ত মিত্র অভিযোগ করেন, লেখাপড়ার পাশাপাশি আমরা বিনা পারিশ্রমিকে ৮ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করি। অথচ হাসপাতালের কর্মচারীরা আমাদের ন্যূনতম সম্মান দেয় না। ইফাত সেরনিয়াবাতের স্থায়ী বহিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরব না।

আরেক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের সহপাঠীর সঙ্গে অত্যন্ত খারাপ আচরণ করেছে ইফাত সেরনিয়াবাত। সে ওষুধ রেখে দিয়েছে। তার শরীরে হাত দিয়েছে। এমনকি এসবের ছবিও তুলে রেখেছে মোবাইলে। এমন আচরণকারীর কঠিন বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন থামবে না। আমরা হাসপাতাল প্রশাসনের আশ্বাসে কাজে যোগ দিচ্ছি। কিন্তু কঠোর বিচার না হলে আরও কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি নিতে বাধ্য হবো।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর