দেশে বীজের চাহিদা পূরণ ও বাণিজ্যিকভাবে ছড়িয়ে দিতে হাইব্রীড-৩ জাতের সূর্যমুখীর চাষ হচ্ছে মেহেরপুর তৈল বীজ উৎপাদন খামার আমঝুপিতে। মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কের পাশে চার একর জমিতে সূর্যমূখীর চাষ হয়েছে।

বাণিজ্যিকভাবে সূর্যমুখীর চাষ করলে বীজ থেকে একই সঙ্গে তেল, খৈল ও জ্বালানি পাওয়া যায়। এ আবাদ কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে সম্প্রসারণ করার জন্য বীজ উৎপাদন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন বিএডিসি কর্তৃপক্ষ।

আমঝুপি বীজ উৎপাদন খামার সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে চার একর জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কৃষকরা সূর্যমুখী ফুলের ভালো ফলনের আশা করছেন। সুর্যমুখী শুধু একটি ফসলই নয় এর সৌন্দর্য মানুষ উপভোগ করে। এটি ব্যাপকভাবে চাষ হলে ভোজ্য তেলের ঘাটতি পূরণ হবে। অনেকেই পরামর্শ নিয়ে চাষ করে লাভবান হয়েছেন।  

সূর্যমুখী ফুল চাষি আমঝুপি গ্রামের মিয়ারুল ইসলাম জানান, বিএডিসি খামার থেকে বীজ পেয়ে ও তাদের সহযোগিতায় ১ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছি। খরচ পড়েছে বিঘা প্রতি ৭ হাজার টাকা। বর্তমানে অধিকাংশ গাছেই ফুল ফুটেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সুর্যমুখীর বাম্পার ফলনের আশা করছি।

সূর্যমুখী চাষি আমিরুল ইসলাম জানান, আমি ২০ শতাংশ জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছি। গাছে ভালোই ফুল ফুটেছে। খরচ হয়েছে ৮ হাজার টাকা। ১০-১২ মন ফলন পাওয়ার আশা করছি। বর্তমান বাজার দামে ২২ -২৫ হাজার টাকার বীজ বিক্রির আশা করছি।

সদর উপজেলার মদনা গ্রামের কুষক ফজলু মিয়া জানান, আমি আমার পরিবার নিয়ে সুর্যমূখী দেখতে এসেছি। বিএডসির সঙ্গে কথা বলেছি। আগামী বছর আমার জমিতে হাইব্রীড-২ জাতের সুর্যমুখীর আবাদ করব।

তানভিরুল ইসলাম, ইশিতা ও ফাতেমা নামের কয়েকজন স্কুল শিক্ষার্থী জানায়, আমরা সুর্যমূখীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে এসেছি পরিবারের সকলকে নিয়ে। এটি একটি আবাদ হলেও মনোমুগ্ধকর দৃশ্য তৈরি করেছে। যতদূর দৃষ্টি যায় শুধু হলুদ রংয়ের ফুল আর ফুল। আমরা বাবাকে বলব আগামী বছর অন্তত এক বিঘা জমিতে সূর্যমুখীর আবাদ করতে।

পুষ্টিবিদ জান্নাতুন নাহার জানান, সূর্যমুখীর তেলে চর্বির পরিমাণ একেবারে নেই বললেই চলে। এর ঘনত্ব কম পাতলা। তেলে আছে মানবদেহের জন্য উপকারী ওমেগা ৯ ও ওমেগা ৬, আছে অলিক অ্যাসিড। সূর্যমুখীর তেলে আছে শতকরা ১০০ ভাগ উপকারী ফ্যাট। আরও আছে কার্বোহাইড্রেট প্রোটিন ও পানি। সূর্যমুখীর তেল সম্পূর্ণ ক্ষতিকারক কোলেস্টেরলমুক্ত। আছে ভিটামিন ‘ই’, ভিটামিন ‘কে’এর মতো গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন ও মিনারেল। মুখের যত্নে দাঁতের জন্য উপকারী একমাত্র তেল। হৃদরোগী, ডায়াবেটিসের রোগী, উচ্চ রক্তচাপের রোগী, কিডনি রোগীর জন্যও সূর্যমুখীর তেল নিরাপদ বলে জানান এই পুষ্টিবিদ।

আমঝুপি ডাল ও তেল বীজ উৎপাদন খামার (বিএডিসি) উপ পরিচালক কৃষিবিদ সঞ্জয় কুমার দেবনাথ জানান, সূর্যমুখী ফুলের চাষ করলে বীজ থেকে তেল, খৈল ও জ্বালানি পাওয়া যায়। ৪ কেজি বীজ থেকে কমপক্ষে ১ লিটার তৈল উৎপাদন সম্ভব। প্রতি বিঘা জমিতে ১৪-১৫ মণ বীজ উৎপাদন হয়ে থাকে। তেল উৎপাদন হবে প্রতি বিঘায় ১৫০ লিটার থেকে ১৮০ লিটার পর্যন্ত। প্রতি লিটার তেলের বাজার সর্বনিম্ন মূল্য ৩৫০ টাকা। সূর্যমুখী ফুল চাষে খরচ কম। এছাড়া সূর্যমুখী বীজের তেল অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন। তাই ডায়াবেটিস ও হৃদরোগীদের জন্য এই তেল অন্যান্য তেলের চেয়ে অনেক উপকারী ও স্বাস্থ্য সম্মত।

আকতারুজ্জামান/আরকে