দুই হাত নেই। পা দিয়ে লিখেই এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৪.২৯ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন জসিম মাতুব্বর (২০) নামে এক প্রতিবন্ধী। ২০২২ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় ফরিদপুর শহরের সিটি কলেজের বিএম শাখা থেকে অংশ নিয়ে এ ফলাফল অর্জন করেছেন তিনি। তার কেন্দ্র ছিল ফরিদপুর সরকারি কলেজ।

জসিম ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার কদমতলী গ্রামের উত্তরপাড়ার কৃষক হানিফ মাতুব্বরের ছেলে। লেখাপড়ার পাশাপাশি কখনো তরমুজ , কখনো বাঙ্গি বিক্রি করেছেন জসিম। এছাড়াও সংসারের বিভিন্ন কাজ করেন তিনি। 

জসিমের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা চার ভাই এক বোন। এর মধ্যে তিনি সবার বড়। জসিম জন্মের পর থেকে প্রতিবন্ধী। তার দুটি হাতই নেই। তবে জীবনযুদ্ধে তিনি থেমে থাকেননি। পারিবারিক বিভিন্ন কাজকর্মের পাশাপাশি বাবার কাজেও সাহায্য করতেন।

জসিম বলেন, আগে সবার সঙ্গে মিশতে পারতাম না। মানুষ আগে আমাকে হেয় করতো। পড়াশোনা করার কারণে এখন মানুষ আর হেয় করে না। এখন সম্মান করে। পড়াশোনা করে কী হতে চান- প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমার যোগ্যতা অনুযায়ী যে কোনো একটি সরকারি চাকরি।

জসিমের বাবা হানিফ মাতুব্বর বলেন, এইতো সেদিনের কথা জসিম পঞ্চম শ্রেণির পিইসি পরীক্ষা দিল। এরপর জেএসসি, এসএসসি পাস করে আজ এইচএসসি পাস করল। বাবা হিসেবে ছেলের সাফল্য দেখতে ভালো লাগে। বেঁচে থাকতে ছেলেটাকে প্রতিষ্ঠিত দেখতে পারলে ভালো লাগবে।

নগরকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মঈনুল হক বলেন, দুপুরে অদম্য ছাত্র জসিম মাতুব্বরের সঙ্গে কথা বলেছি। তার সার্বিক খোঁজখবর নিয়েছি। প্রয়োজনে তার পাশে থাকবে নগরকান্দা উপজেলা প্রশাসন। 

ফরিদপুর সিটি কলেজের অধ্যক্ষ কাজী আফসার উদ্দিন বলেন, জসিম ছাত্র যেমনই হোক না কেন ওর ভেতরে আমি দেখেছি আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদা। কলেজের বিভিন্ন পরীক্ষার সময় যখন ও প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে ওকে আমরা বেশি সময় দেওয়ার প্রস্তাব দিতাম। তখন ও সেই সুবিধা নিতো না। ওর অন্য সুস্থ-স্বাভাবিক সহপাঠীর মতই সময় নিয়ে পরীক্ষা দিত। এই মনোবলের কারণেই সে অনেক দূরে যাবে বলে আমি মনে করি।

তালমা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবদুল কুদ্দুস মোল্লা বলেন, ছোটবেলা থেকেই দেখেছি জসিমের জীবনটা অনেক কষ্টের। অনেক সংগ্রাম করে এ পর্যন্ত এসেছে। জসিম ভিক্ষা পছন্দ করে না। ও হাত গুটিয়ে না থেকে পরিবারের বিভিন্ন কাজের পাশাপাশি পড়াশোনা করে এ পর্যন্ত এসেছে।

জহির হোসেন/আরএআর