বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেছেন, ঢাকায় মহাখালী বাসস্ট্যান্ড অতিক্রম করার সময় ডানে-বামে তাকিয়ে দেখবেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের বড় বড় ব্যানার টাঙানো আছে। সেখানে লেখা আছে - ‘অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি হতে সাবধান’। এই আওয়ামী লীগ এখন সেই অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টির সমপর্যায়ে চলে গেছে। এখন এই দলকে কখনো মনে হয় আওয়ামী ক্যাসিনো লীগ, কখনো মনে হয় এইটা ছাগল চুরির ছাত্রলীগ, গরু চুরির ছাত্রলীগ, কখনো মনে হয় এইটা আমার বোনকে বিবস্ত্র করার অসভ্য ছাত্রলীগ।

শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুর সোয়া ২টার দিকে রংপুর মহানগরীর শাপলা চত্বর বটতলায় বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচি শেষে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তেল, গ্যাস, চাল, ডাল, বিদ্যুৎসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম কমানো এবং ১০ দফা দাবি আদায়সহ বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে রংপুর মহানগর বিএনপি পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করে।

মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল আরও বলেন, কর্মসূচি দেই আমরা আর হরতাল ডাকে আওয়ামী লীগ। বিভাগীয় সমাবেশ করেছি আমরা আর তিন দিন আগে থেকেই যানবাহন বন্ধ করে দেয় আওয়ামী লীগ। এই দলকে এখন আওয়ামী লীগ বলার উপায় নেই। এই দলকে এখন অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি বলতেই হবে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপদেশ অনুযায়ী এদের থেকে সাবধান থাকতে হবে। কোনো ক্রমেই এদের পাশাপাশি বা মুখোমুখি হওয়া যাবে না।

আওয়ামী লীগ সংঘাত সৃষ্টির চেষ্টা করছে অভিযোগ তুলে যুবদলের সাবেক এই কেন্দ্রীয় সভাপতি বলেন, বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিগুলোতে শত উসকানির মুখে বাধা দিয়ে সংঘাত সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছে আওয়ামী লীগ। আমরা মার খেয়েছি, অত্যাচারিত হয়েছি, কারাগারে গিয়েছি, এখনো হাজার হাজার নেতাকর্মী কারাগারে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে। আমাদের দুঃখ নাই, কষ্ট নাই, আমরা মনে করি গোটা বাংলাদেশটাই একটা কারাগারে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ যখন কারাবন্দি, তখন খালেদা জিয়ার কারাবন্দিত্ব আমাদেরকে খুব বেশি কষ্ট দেয় না। কারণ উনিতো জনগণের কষ্টেই নিজেকে সমর্পণ করেছেন, এই জন্যই আজকে তিনি কারাগারে।

মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের মানচিত্রের টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, রুপসা থেকে পাথুরিয়া সব জায়গায় ঘুরে ঘুরে এখন পর্যন্ত ২৩ আসনে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচন করেছেন। ২৩টি আসনেই তিনি জয়লাভ করেছেন, তার জীবনে পরাজয়ের কোনো রেকর্ড নেই। আর আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ঢাকায় হেরে যায় সাদেক হোসেন খোকা, মেজর মান্নান, নাসির উদ্দিন পিন্টু, আব্দুল সালাম পিন্টুর সঙ্গে। তার হেরে যাবার বহু রেকর্ড আছে।

এ সময় সদ্য নির্বাচিত নতুন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে ইঙ্গিত করে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‌একটা লোককে গোপনে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। সেই ভদ্রলোক অত্যন্ত চালাকি করে, অত্যন্ত নোংরাভাবে তথাকথিত দুর্নীতির মামলা সাজিয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে কারাদণ্ড দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিল। তার পুরস্কার হিসেবে সেই ভদ্রলোককে রাষ্ট্রপতি করা হয়েছে। শুধুমাত্র বেগম খালেদা জিয়াকে ভুয়া মামলায় ভুয়া স্বাক্ষী সাজিয়ে সাজা দেওয়া হয়েছে। এ কারণে শেখ হাসিনা ওই ভদ্রলোককে পুরস্কার দিয়ে রাষ্ট্রপতি বানিয়েছেন।

মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, সারা পৃথিবীতে যখন চাল, ডাল, তেল, জ্বালানি, গ্যাসের দাম কমছে তখন একমাত্র বাংলাদেশেই দাম বাড়ছে। কারণ প্রত্যেকটা থেকে আওয়ামী লীগের নেতারা কমিশন খায়। এখন আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ নেতাদের তার ছিঁড়ে গেছে। তারা এখন আবোল-তাবোল বক্তব্য দেন। আমরা যে কথাগুলো বলছি, এসব সাধারণ মানুষের মনের কথা। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের হৃদয়ের কথা।

রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামছুজ্জামান সামুর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মাহফুজ উন-নবী ডনের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিশেষ অতিথির হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেক ও সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আনিছুর রহমান লাকু প্রমুখ।

এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টা দিকে রংপুর মহানগরীর মাহিগঞ্জ সাতমাথা এলাকা এবং সেন্ট্রাল রোড এলাকা থেকে শাপলা চত্বরের উদ্দেশ্যে পদযাত্রা শুরু করেন বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। রংপুর মহানগর বিএনপিসহ যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল, কৃষক দল, মহিলা দল, ওলামা দল, জাসাসসহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের প্রায় সহস্রাধিক নেতাকর্মী এতে অংশ নেন। পদযাত্রা ঘিরে রংপুর মহানগরীতে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরএআর