ধানের চেয়ে ভুট্টা চাষে বেশি লাভ হওয়ায় দিন দিন ভুট্টা আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে কিশোরগঞ্জের হাওরে। এছাড়া আগাম বন্যা আর ধানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় ভুট্টা চাষে ঝুঁকছেন হাওরের কৃষকরা। কৃষি অফিসের পক্ষ থেকেও চাষিদের দেওয়া হচ্ছে সব ধরনের সহযোগিতা। তাই এবার কিশোরগঞ্জের হাওরের রেকর্ড পরিমাণ জমিতে ভুট্টার চাষ হয়েছে।

জানা গেছে, দে‌শের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে খাদ্যশস্যের অফুরন্ত ভান্ডার বলে খ্যাত হাওর জেলা কি‌শোরগঞ্জ। একসময় এ জেলার কৃষকরা শুধুমাত্র বো‌রো আবাদের ওপর নির্ভরশীল থাকলেও সেখানে দিন দিন বেড়ে চলছে ভুট্টা চাষ। হাওরের পতিত জমি ও বোরো আবাদের অনেক জমিতেও বর্তমানে ভুট্টা চাষ করছেন কৃষকরা। বিশেষ করে গত কয়েক বছর আগে হাওরের ২০ একর পতিত জমি লিজ নিয়ে ছাত্রলীগের কর্মীদের মাধ্যমে ভুট্টা আবাদ শুরু করেন কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক। সে সময় তারা ভুট্টা চাষ করে অনেক লাভবানও হয়। এ থেকেই হাওরের পতিত জমি ও বোরো আবাদের অনেক জমিতে ভুট্টা চাষ করছেন কৃষকরা। ভুট্টা চাষে সময় ও খরচ দুটোই সাশ্রয়ী। এছাড়া হাওর অলওয়েদার সড়ক নির্মাণের ফলে বাজারজাতকরণ সুবিধা পাচ্ছে কৃষকরা।

এদিকে ভুট্টা গাছের পাতা গো-খাদ্য হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। একইসঙ্গে ফসল সংগ্রহ শেষে ভুট্টার গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। হাওরাঞ্চলে জ্বালানির সমস্যা সমাধানে ভুট্টা অন্যতম সহায়ক বলেও মনে করেন গৃহিণীরা। এর বছর কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলাগুলোতে মাঠের পর মাঠ চাষ করা হয়েছে ভুট্টার। ভবিষ্যতে এ আবাদ আরও বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

কিশোরগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, জেলায় এ বছর ১০ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে ভুট্টার চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে হাওরেই চাষ হয়েছে ৮ হাজার ৩১০ হেক্টর। যা গত বছরের তুলনায় ৮০০ হেক্টর থেকেও বেশি। প্রতি হেক্টর জমিতে ১২ মেট্রিক টন ফলনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। ভবিষ্যতে হাওরে ভুট্টা চাষ আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠবে বলে মনে করে কৃষি বিভাগ।

মহিউদ্দিন খান তপন নামে এক যুবক ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন এক ইঞ্চি জমিও যাতে পতিত না থাকে। সেই লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে আমাদের হাওরের এমপি তৌফিক ভাই আমাদের দিয়ে হাওরের পতিত জমিতে ভুট্টা চাষ করিয়েছিলেন। আমরাও লাভবান হয়েছিলাম। সেই থেকে হাওরে ব্যাপকভাবে ভুট্টা চাষ বেড়ে গেছে।

কৃষক আফতাব উদ্দিন বলেন, একসময় আমাদের হাওরে ধান ছাড়া কিছু হবে তা আমরা কখনো চিন্তা করিনি। আমাদের এমপি তৌফিক সাহেব বিভিন্ন সময় তার বক্তৃতায় আমাদেরকে ভুট্টা চাষ করতে উৎসাহ দিয়েছেন। তাই আমরা সাহস পেয়েছি ভুট্টা চাষ করতে। ভুট্টার ফলন ধানের চেয়ে দ্বিগুণ হয়। এছাড়া হাওরে পানি আসার আগেই ভুট্টা ঘরে তোলা যায়। বাজারেও দাম অনেক ভালো।

কৃষক শংকর চন্দ্র দাস জানান, ভুট্টা শুধু ফলনই দেয় না, ভুট্টা গাছের পাতা গো-খাদ্য হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। এ কারণেই আমরা ভুট্টা চাষ বাড়িয়েছি। আগামীতে আরও বেশি জমিতে ভুট্টা চাষ করবো।

কৃষাণী কবিতা রানী দাস বলেন, ভুট্টার ফসল সংগ্রহ শেষে ভুট্টার গাছ জ্বালানি হিসেবে আমরা ব্যবহার করে থাকি। আমাদের হাওরাঞ্চলে জ্বালানির অনেক সমস্যা রয়েছে।

কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য ও রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বড় ছেলে রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক বলেন, মানুষ একসময় চিন্তাও করত না এই হাওরে ধান ছাড়া অন্য কোনো ফসল হবে। গত কয়েক বছর আগে আমি খরচ দিয়ে ছাত্রলীগের ছেলেদের মাধ্যমে পতিত জমিগুলো লিজ নিয়ে ভুট্টা চাষ করিয়েছিলাম। তারাও ভুট্টা চাষ করে লাভবান হয়েছে। লাভ দেখে পরের বছর থেকে জমির মালিকরা জমি লিজ না দিয়ে নিজেরাই ভুট্টা চাষ শুরু করেছে। এখন হাওরে ব্যাপক ভুট্টা চাষ শুরু হয়েছে। বিশেষ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ, এক ইঞ্চি জমিও পতিত রাখা যাবে না। সেই নির্দেশ বাস্তবায়নেই কাজ করে যাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, একসময় এই হাওর ছিল অবহেলিত জনপদ, এখন হাওরের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হয়েছে। কৃষকরা সহজেই তাদের ফসল ঘরে তুলতে পারছেন। এছাড়া সারা বছরই হাওরের সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগ সৃষ্টির ফলে কৃষকরাও তাদের ফসলের সঠিক মূল্য পাচ্ছেন।

এমজেই