রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে ভ্রাম্যমাণ আদালতে দণ্ডিত পাঁচ আসামিকে ছিনিয়ে নিয়েছেন পৌর কাউন্সিলর ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা। কয়েকশ লোকজন নিয়ে তারাই দণ্ডিতদের ছিনিয়ে নিয়ে যান। এসময় পুলিশের লাগানো হাতকড়া নিয়েই তারা পালিয়ে যান।

সোমবার (১৫ মার্চ) সন্ধ্যা ৬টার দিকে উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাজমুন নাহারের দফতরে এই ঘটনা ঘটে। এর ঘণ্টাখানেকের মাথায় ধরা পড়েন দণ্ডিতরা।

মাদক মামলায় দণ্ডিত ওই পাঁচ আসামি হলেন, পৌর এলাকার রামনগরের হুমায়ুন কবিরের ছেলে সাদ্দাম হোসেন (২০), দুরুল হুদার ছেল রিসত (২১), আলম আলীর ছেলে সজীব (২০), মনিরুল ইসলামের ছেলে সাব্বির (২০), বুজরুক রাজারামপুর গ্রামের জসিম উদ্দীনের ছেলে রমজান আলী (২০)।

তাদের পালাতে সহায়তা ও সরকারি কাজে বাধাদানে দণ্ড দেওয়া হয়েছে, পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সহিদুল ইসলাম ও উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পৌর কর্মচারী গোলাম কাওসার মাসুমকে।

আইনি প্রক্রিয়া শেষে রাত সাড়ে ১০টার দিকে তাদের হেফাজতে নেয় গোদাগাড়ী মডেল থানা পুলিশ। মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) তাদের রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানোর কথা।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানা গেছে, সোমবার বিকেলের দিকে পৌরসভার বুজরুক রাজারামপুর হলের মোড় এলাকার একটি বাগানে মাদক ও জুয়ার আসর বসিয়েছেলেন ওই পাঁচ জন। তাদের হাতেনাতে আটক করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একটি দল। পরে তাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাজমুন নাহারের দফতরে নেওয়া হয়। এসময় ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে প্রত্যেককে দণ্ড দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।

তাদের আটকের খবর পেয়ে লোকজন নিয়ে সহকারী কমিশনারের (ভূমি) দফতরে হাজির হন পৌর কাউন্সিলর শহিদুল ইসলাম, উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম কাওসার মাসুম ও পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি হামিদ রানা। 

এবিষয়ে গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জানে আলম বলেন, বিকেলের দিকে মাদকসেবনরত অবস্থায় ওই পাঁচ জনকে আটক করা হয়। পরে তাদের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দফতরে নেওয়া হয়েছিল।

ওই সময় দুটি হাতকড়ায় চারজন আটকা ছিলেন। একজন ছিলেন খোলা অবস্থায়। সন্ধ্যা ৬টার দিকে ভ্রমমাণ আদালত বসিয়ে তাদের প্রত্যেককে এক মাসের করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। দণ্ড দেওয়ার পর সেখানে উপস্থিত লোকজন হট্টগোল শুরু করেন। আর এই সুযোগে হাতকড়া নিয়ে পালিয়ে যান দণ্ডিতরা। 

 খবর পেয়ে তিনি (ইউএনও) দ্রুত সেখানে পৌঁছান। খবর দেওয়া হয় থানার ওসিকে। তিনিও সেখানে চলে আসেন। দ্রুতই পুলিশ দণ্ডিতদের ধরে ফেলে। পরে আবারো তাদের ভ্রাম্যমাণ আদালতে নেওয়া হয়।

মাদক মামলায় দণ্ডিতদের দণ্ড বাড়িয়ে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড করা হয়েছে। জরিমানা করা হয় পাঁচ হাজার টাকা করে। সরকারি আদেশ অমান্য করায় এই দণ্ড দেওয়া হয়েছে তাদের।

 এছাড়া তাদের পালাতে সহায়তা, আদালত অবমাননা এবং সরকারি কাজে বাধা দেয়ায় পৌর কাউন্সিলর ও যুবলীগ নেতাকে এক মাসের করে বিনাশ্রম করাদণ্ড দেওয়া হয়। আইনি প্রক্রিয়া শেষে রাত ৯টার দিকে তাদের জেল পরোয়ানা দিয়ে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

স্থানীয়রা বলছেন, দণ্ডিত ওই কাউন্সিলর ও যুবলীগ নেতা নিজেরাই মাদক সিন্ডিকেটের সদস্য। তারা মাদক মামলায় থানা পুলিশের হাতে গ্রেফতারকৃতদের তদবিরের মাধ্যমে থানা থেকে ছাড়িয়ে আনেন। দীর্ঘদিন ধরেই থানা পুলিশের কতিপয় সদস্যের সাথে সখ্যতা রয়েছে তাদের।

এবিষয়ে জানতে কয়েক দফা চেষ্টা করেও গোদাগাড়ী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খলিলুর রহমান পাটোয়ারীর মোবাইল সংযোগ পাওয়া যায়নি। 

ফেরদৌস সিদ্দিকী/ওএফ