হালিমুল হক মিরু

সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগে পদ পেয়েছেন আলোচিত সাংবাদিক আব্দুল হাকিম শিমুল হত্যা মামলার প্রধান আসামি শাহজাদপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র হালিমুল হক মিরু। এবার তাকে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য করা হয়েছে। এর আগে আওয়ামী লীগ থেকে সাময়িক বহিষ্কার হয়েছিলেন এই নেতা। 

গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ মাঠে জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান সভাপতি হিসেবে অ্যাডভোকেট কে এম হোসেন আলী হাসান ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আব্দুস সামাদ তালুকদারের নাম ঘোষণা করেন।

সম্মেলনের প্রায় এক বছর পর গত রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারি) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে ৭৪ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাহী কমিটি ও ২৭ সদস্য বিশিষ্ট উপদেষ্টা কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য পদে স্থান পেয়েছেন সাংবাদিক শিমুল হত্যা মামলার প্রধান আসামি ও সাবেক পৌর মেয়র হালিমুল হক মিরু।

এদিকে হত্যা মামলার বিচার শেষ হওয়ার আগে প্রধান আসামিকে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পদ দেওয়ায় হতাশ সাংবাদিক শিমুলের স্ত্রী ও স্থানীয় সাংবাদিকরা।

নিহত সাংবাদিক শিমুলের স্ত্রী বেগম নুরুন্নাহার ঢাকা পোস্টকে বলেন, হত্যাকাণ্ডের ছয় বছরেও বিচার না পেয়ে আমরা হতাশ। এমনিতেই আমাদের টাকা-পয়সা নেই, মামলা চালাতেই কষ্ট হয়। মিরুসহ আসামিরা জামিনে মুক্ত হয়ে মামলায় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন। আবার প্রধান আসামি জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হয়েছেন। এতে প্রভাব আরও বাড়বে। 

শাহজাদপুর প্রেস ক্লাবের সভাপতি বিমল কুমার কুণ্ডু ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত ছয় বছরেও হত্যা মামলার কার্যক্রম এগোয়নি। এর মধ্যে মামলার চার্জশিটভুক্ত প্রধান আসামি মিরুকে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পদ দেওয়ায় আমরা মর্মাহত।

এ ব্যাপারে হালিমুল হক মিরু ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাকে সে সময়ে শোকজ করা হয়েছিল এবং ৯০ দিনের মধ্যে তার উত্তর দিতে বলা হয়েছিল। আমি সেটা দিয়েছিলাম এবং পরবর্তীতে আমাকে আর কিছু জানানো হয়নি। এরপরে প্রধানমন্ত্রী যখন সবাইকে সাধারণ ক্ষমা করলেন তখন আমাকেও ক্ষমা করা হয়েছিল। 

তিনি আরও বলেন, তদন্তে এসেছে সাংবাদিক শিমুলের শরীরে যে বুলেট পাওয়া গেছে সেটা আমার বন্দুকের না। আমাকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এই হত্যা মামলার প্রধান আসামি করা হয়েছে। আদালত এখন পর্যন্ত আমাকে দোষী সাব্যস্ত করেননি। তাই গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আমার পদ পেতে সমস্যা নেই। তাই আমি আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে পদ পেতেই পারি।

এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট কে এম হোসেন আলী হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, সাংবাদিক শিমুল হত্যাকাণ্ডের মামলায় মিরু আসামি হলেও বিচার প্রক্রিয়া এখনো শেষ হয়নি বা তিনি দোষী প্রমাণিত হননি। এছাড়াও তাকে কেন্দ্র থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হলেও পরবর্তীতে সাধারণ ক্ষমা করা হয়। তাই দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী অভিযুক্ত না হলে তিনি পদ পেতে পারেন। তবে বিচারে অভিযুক্ত হলে তাকে অবশ্যই বাদ দেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন সমকালের শাহজাদপুর উপজেলা প্রতিনিধি আব্দুল হাকিম শিমুল। ঘটনার পর নিহতের স্ত্রী নুরুন্নাহার খাতুন তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও শাহজাদপুর পৌরসভার মেয়র হালিমুল হক মিরুসহ ৪০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

ওই বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে মিরুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ২ বছর সাড়ে ৯ মাস কারাভোগ করে জামিনে আছেন তিনি। মামলাটি বর্তমানে রাজশাহীর বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন। গ্রেপ্তারের পরপরই দল থেকে মিরুকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। তখন মেয়র পদ থেকেও তাকে বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। 

শুভ কুমার ঘোষ/আরএআর